এন্ডোমেট্রিওসিস

এন্ডোমেট্রিওসিস কী? রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

ডা. সেরাজুম মুনিরা

ছবি : বণিক বার্তা

বিশ্বব্যাপী প্রজননক্ষম শতকরা ১০ জন নারী এন্ডোমেট্রিওসিস নামক রোগে আক্রান্ত। জরায়ুর বাইরে বিভিন্ন অংশে এন্ডোমেট্রিয়াম কোষ বৃদ্ধি পেয়ে এ রোগ হয়। এর কারণে পিরিয়ডের সময় তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। অনেকেই এ ব্যথাকে স্বাভাবিক মনে করে অবহেলা করে থাকেন, কোনো গুরুত্ব দেন না। ফলে রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। আক্রান্ত নারী বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগে থাকেন। এমনকি ধীরে ধীরে বন্ধ্যাত্বের দিকে অগ্রসর হন। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করা হলে এন্ডোমেট্রিওসিস নিরাময় সম্ভব।

এন্ডোমেট্রিওসিস কী?

মেয়েদের জরায়ুতে তিনটি পর্দা বা স্তর রয়েছে। সব থেকে ভেতরের স্তরকে বলা হয় এন্ডোমেট্রিয়াম। প্রতি মাসে পিরিয়ডের সময় এ এন্ডোমেট্রিয়াম কোষ ছিঁড়ে রক্তপাত হয়। সাধারণত এন্ডোমেট্রিয়াম কোষ শুধু জরায়ুর ভেতরেই থাকার কথা। কিন্তু জরায়ু ছাড়াও যদি এ কোষ জরায়ুর বাইরে, ডিম্বনালিতে, ডিম্বাশয়ে, অন্ত্রে, মূত্রনালিতে ও মলদ্বারে থাকে তাহলে পিরিয়ডের সময় এসব অংশের কোষ ছিঁড়েও রক্তক্ষরণ হয়। এ কারণে তলপেটে তীব্র ব্যথা ও রক্তক্ষরণের ফলে ডিম্বাশয়ে রক্ত জমে সিস্ট তৈরি হওয়াসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। যার কারণে গর্ভধারণে সমস্যা হয়। এ অবস্থাকে এন্ডোমেট্রিওসিস বলে।  

লক্ষণ ও উপসর্গ

এন্ডোমেট্রিওসিসের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—  

  পিরিয়ডের সময় বা পিরিয়ডের আগে পেটে তীব্র ব্যথা

  সাতদিনের বেশি সময় পিরিয়ড হওয়া

  কোমর ও পিঠে ব্যথা

  সহবাসের সময় ব্যথা 

  পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত

  দুই পিরিয়ডের মধ্যবর্তী সময়ে হালকা রক্তপাত

  গর্ভধারণে সমস্যা

  প্রস্রাব ও মলত্যাগের সময় ব্যথা

  বমি বমি ভাব

  ক্লান্তি ও উদ্বেগ

রোগ নির্ণয়

এন্ডোমেট্রিওসিসের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে লক্ষণ অনুযায়ী এন্ডোমেট্রিওসিস নিশ্চিতভাবে শনাক্তকরণে কিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে। ডিম্বাশয়ে এন্ডোমেট্রিওটিক সিস্ট বা চকলেট সিস্ট আছে কিনা তা নির্ণয়ে পেলভিক বা ট্রান্সভ্যাজাইনাল আলট্রাসাউন্ড করা হয়। আলট্রাসাউন্ডের ফলাফলের ভিত্তিতে এন্ডোমেট্রিয়াম কোষের অবস্থান ও আকার জানতে এমআরআই করার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় ডিম্বাশয়ে সিস্ট তৈরি না হলেও জরায়ুর বাইরে এন্ডোমেট্রিয়াম কোষ বৃদ্ধি পেতে পারে। এজন্য ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমে এন্ডোমেট্রিয়াম কোষ পরীক্ষা করা জরুরি। যাদের গর্ভধারণে সমস্যা হচ্ছে, তাদের ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণুর পরিমাণ নির্ণয়ে এএমএইচ (অ্যান্টি মুলেরিয়ান হরমোন) পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ ডিম্বাশয়ে এন্ডোমেট্রিওসিস হলে ডিম্বাণুর পরিমাণ কমে যায়।

এন্ডোমেট্রিওসিসের চিকিৎসা 

রোগীর বয়স, রোগের তীব্রতা ও ভবিষ্যতে রোগীর গর্ভধারণের পরিকল্পনা বিবেচনা করে এন্ডোমেট্রিওসিসের চিকিৎসা করা হয়। যেহেতু পিরিয়ডের রক্তক্ষরণ থেকেই এন্ডোমেট্রিওসিসের  ব্যথা বাড়ে এবং সিস্ট হয় তাই এ রোগে প্রথমেই যে চিকিৎসা দেয়া হয় তা হলো—ওষুধের মাধ্যমে পিরিয়ড বন্ধ রাখা ও ব্যথা কমানো। এক্ষেত্রে স্টেরয়েড নেই এমন ব্যথানাশক ওষুধ দেয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন হরমোন থেরাপি দেয়া হয়। হরমোন থেরাপি তলপেটের ব্যথা ও রক্তক্ষরণ কমায় এবং পিরিয়ড নিয়মিত করে। রোগের তীব্রতা বেশি হলে এবং সিস্ট বড় হয়ে গেলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অস্বাভাবিক এন্ডোমেট্রিয়াল কোষ বাদ দেয়া হয়। অনেক সময় অস্ত্রোপচারের পর এন্ডোমেট্রিওসিসের লক্ষণ পুনরায় দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিন চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। কোনো কোনো রোগীর এন্ডোমেট্রিওসিসের ব্যথা এত তীব্র হয় যে হিস্টেরেক্টমি করে জরায়ু ও ডিম্বাশয় অপসারণ করে ফেলতে হয়। তবে হিস্টেরেক্টমি শুধু যাদের আর বাচ্চা নেয়ার পরিকল্পনা নেই তাদের জন্যই প্রযোজ্য।   

লেখক: গাইনি বিশেষজ্ঞ

ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন