সিলেট-আখাউড়া রেলপথ

পাঁচ বছর ধরে বন্ধ ডেমু ট্রেন ফের চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা

নূর আহমদ, সিলেট

উদ্বোধনের ছয় বছরের মাথায় সিলেট-আখাউড়া রুটের ডেমু ট্রেন ২০১৯ সালে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় ছবি: সংগৃহীত

জাঁকজমক আয়োজনের মধ্য দিয়ে সিলেট-আখাউড়া রেলপথে ডিজেল ইলেকট্রনিক মাল্টিপল ইউনিট বা ডেমু ট্রেন চালু করা হয়। মাত্র ছয় বছর চলার পর ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন সার্ভিস। সেই থেকে টানা পাঁচ বছর ধরে ট্রেনটি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। পুনরায় চালু করা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক সিলেট-আখাউড়া রেলপথে নতুন ডেমু ট্রেন উদ্বোধন করেন। স্বল্প দূরত্বের যোগাযোগের জন্য যাত্রীদের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে কেনা হয় ডেমু ট্রেন। নতুন সার্ভিস হওয়ায় যাত্রীদের মাঝেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ট্রেনটি। উভয় দিকে ইঞ্জিন স্থাপনকৃত ট্রেনটিতে ছিল দেড়শ আসন। এছাড়া দেড়শ যাত্রী দাঁড়িয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও ছিল। তিন বগির ট্রেনটি সিলেট-আখাউড়া রুটের লোকাল ট্রেন হিসেবেই চলাচল করে আসছিল। তবে মাত্র ছয় বছরের মাথায় সিলেট-আখাউড়া রুটের ওই লোকাল ডেমু ট্রেনটি ২০১৯ সালে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও ডেমু ট্রেন চালু দূরের কথা; এটি আদৌ আর চালু হবে কিনা তাও সিলেট রেলওয়ের কোনো কর্মকর্তা বলতে পারছেন না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, যাত্রীসেবার মান বাড়াতে চীন থেকে ২০ সেট ডেমু ট্রেন কিনেছিল রেলওয়ে। ২০১৩ সালে ডেমু ট্রেন  কিনতে ব্যয় হয় ৬৫৪ কোটি টাকা। হিসাবে একটি ট্রেনের দাম পড়ে ৩২ কোটি লাখ টাকা। ওই সময় রেলওয়ে থেকে বলা হয়, এসব ট্রেন সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তির। প্রতিটি ডেমু ট্রেনের মেয়াদকাল ছিল ৩০ বছর করে। এছাড়া ট্রেনটি কমপক্ষে ২৫-৩০ বছর সচল থাকার নিশ্চয়তাও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ২৫ বছর দূরে থাক মাত্র পাঁচ বছর হওয়ার পর থেকেই সমস্যা দেখা দেয়। এক সময় ইঞ্জিন পুরোপুরি বিকল হয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যায় যাত্রী পরিবহন।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি বগির দাম কোটি ৪৫ লাখ টাকা। হিসাবে একটি ডেমু ট্রেনের টাকায় ছয়টি এসি বগি কেনা যেত। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি বগি থেকে বছরে গড়ে আড়াই কোটি টাকা আয় হয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘কোনো প্রকল্প নেয়ার আগে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। ডেমু ট্রেন নিয়েও নিশ্চয়ই রকম পর্যালোচনা করেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু বিশাল অংকের টাকায় কেনা ডেমু ট্রেন মাত্র কয়েক বছরেই বিকল হয়ে গেল! এতে প্রমাণ হয় প্রকল্পের নামে সরকারের টাকা লুটপাট করা হয়েছে। জনগণের সুবিধার পরিবর্তে জনগণের ট্যাক্সের টাকা লোপাট করা হয়েছে। ট্রেন কেনায় যারা জড়িত তাদের শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এভাবে নতুন ট্রেন কেনার নামে অর্থ লোপাট না হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে।

সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. নুরুল ইসলাম ডেমু ট্রেন প্রসঙ্গে বলেন, ‘একসময় ট্রেন ভালো সার্ভিস দিয়েছিল কিন্তু ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সিলেট থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় ট্রেনটি। মেরামতের বিষয়টি ঢাকা থেকেই দেখভাল করা হয়।

ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘তখনকার সময়ে যাত্রীদের উন্নত সেবা দেয়ার জন্য ডেমু ট্রেন কেনা হয়েছিল। কিন্তু যারা এটি কেনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের হয়তো এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা ছিল না। প্রায় সব ডেমু ট্রেন নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো এখন আর কোনো কাজে আসছে না। নষ্ট ইঞ্জিন মেরামত করা হলেও বেশি দিন ভালো থাকেনি। ফলে ডেমু ট্রেন নিয়ে রেলওয়ে একটা অস্বস্তিতে রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন