বাড়ছে তিস্তা ও পদ্মার পানি

উত্তরাঞ্চলে বন্যার শঙ্কা কুষ্টিয়ায় ৪০ গ্রাম প্লাবিত

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, রংপুর ও কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী চরের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

উজানের ঢল টানা বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। এতে উত্তরাঞ্চলের চার জেলায় বন্যার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যার পূর্বাভাস সতর্কীকরণ বার্তায় বলা হয়েছে, ভারি বর্ষণের কারণে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর কুড়িগ্রামের চরাঞ্চল ছাড়াও কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। এছাড়া পদ্মা নদীর কুষ্টিয়া অংশে হঠাৎ করেই পানি বেড়ে সীমান্তবর্তী দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টা রংপুর বিভাগ তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা রয়েছে এবং পরবর্তী দুদিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসতে পারে। তিস্তা, ধরলা দুধকুমার নদীগুলোর পানি সমতলে দ্রুত বাড়তে পারে। তা পরবর্তী একদিন পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকতে পারে। অবস্থায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তার পানি সমতল সতর্ক-সীমায় প্রবাহিত হতে পারে এবং জেলাগুলোর সংশ্লিষ্ট চরাঞ্চল এবং কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। অন্যদিকে আগামী তিনদিন পর্যন্ত কুড়িগ্রামের ধরলা দুধকুমার নদীগুলোর পানি সমতলে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দুদিন ধরে রংপুর বিভাগে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল সকালে তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি বাড়তে থাকে। দিনভর সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বেলা ৩টায় পানি বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

এদিকে তিস্তার জেগে ওঠা চরে শীতকালীন আগাম সবজি চাষের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। নদীর পানি বাড়ায় তা ভেস্তে গেছে।

গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, ‘বন্যায় আমার ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানি যেহেতু বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে, তা এই এলাকার মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘রংপুর বিভাগে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেই সঙ্গে উজানে অতিভারি বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বাড়ছে। বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় পানি বাড়ার খবর দেয়া হয়েছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে ৯১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরে ১৩১ মিলিমিটার, দিনাজপুরে ১৯৭, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১৮৩, ডিমলায় ১৪১, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১৭৪ কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘শুক্রবারের মতো শনিবারও রংপুর বিভাগের অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণের পূর্বাভাসও রয়েছে।

অন্যদিকে পদ্মা নদীর কুষ্টিয়া অংশে হঠাৎ করেই পানি বেড়েছে। এতে সীমান্তবর্তী দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নদীসংলগ্ন এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলে ফসলি জমি সড়ক ডুবে গেছে। চরাঞ্চলটিতে মাসকলাই ডাল উৎপাদন হয়। সবেমাত্র চারা গজিয়েছিল। তবে পানিতে সব নষ্ট হয়েছে গেছে বলে জানিয়েছেন কৃষক। এছাড়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কয়েকটি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পদ্মায় সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে, যা গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত অপরিবর্তিত ছিল। পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ১২ দশমিক ৩৮ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার।

পাউবোর কর্মকর্তারা বলছেন, আগস্টের মাঝামাঝি নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং মাসের শেষের দিকে কমতে শুরু করে। গত এক সপ্তাহ ধরে পদ্মায় ফের পানি বাড়তে শুরু করে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চলের মরিচা, ফিলিপনগর, রামকৃষ্ণপুর চিলমারী চারটি ইউনিয়নের অন্তত ৪০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি। ফসলি জমি সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে চরবাসী। চারপাশে পানি উঠে যাওয়ায় এরই মধ্যে উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান জানান, ইউনিয়নের ২১ গ্রামই প্রায় পানিবন্দি। রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চর এলাকার আবাদি জমিগুলো ডুবে গেছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল জানান, ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামের মধ্যেও ১৬টি গ্রামের চারপাশে পানি চলে এসেছে।

দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, মরিচা, ফিলিপনগর, চিলমারী রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রায় হাজার ৬২০ হেক্টর জমির মাসকলাই পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়া ৭০ হেক্টর মরিচ, ৭৩ হেক্টর কলা ১৩ হেক্টর সবজি পানিতে ডুবে গেছে। পানি কয়েকদিন স্থির থাকলে ডুবে যাওয়া ফসল পচে যাবে। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে।

কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, উজানের পানি নেমে আসায় পদ্মার পানি আরো কয়েক দিন বাড়তে পারে। প্লাবিত গ্রামগুলোয় নদীপরে বাঁধ নেই। পানি সরাসরি প্রবেশ করে। পানিতে নিমজ্জিত থাকায় চরাঞ্চলের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

পাবনা পাউবোর ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম শুক্রবার জানান, যদি বৃষ্টিপাত না বাড়ে, তবে পানি দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে কমতে শুরু করবে।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়দুল্লাহ শুক্রবার জানান, উপজেলায় মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসন প্রস্তুত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন