পাহাড়ি ঝরনার ইজারা মূল্য বাড়লেও নিরাপত্তা বাড়েনি

মিরসরাইয়ে পাঁচ বছরে ১১ পর্যটকের মৃত্যু

রাজু কুমার দে, মিরসরাই

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে খৈয়াছড়া ঝরনায় পাড়ি দিচ্ছেন পর্যটকরা ছবি: ফাইল/নিজস্ব আলোকচিত্রী

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিভিন্ন পাহাড়ে পাঁচটি ঝরনা রয়েছে। এগুলো ইজারা দেয় বন বিভাগ। বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যানের অধীনে ঝরনাগুলো দেখাশোনা করা হয়। তবে প্রতি বছর ইজারা মূল্য বাড়লেও পর্যটকদের জন্য এখনো নিরাপদ হয়ে ওঠেনি ঝরনাগুলো। এসব ঝরনা দেখতে এসে প্রাণ হারাচ্ছেন বিভিন্ন স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেড়াতে এসে গত পাঁচ বছরে ১১ পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে।

ঢাকায় ওয়ান ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চাকরি করেন মো. মাহবুবুর আলম। চট্টগ্রামে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনায় বেড়াতে এসেছিলেন। নিচে থাকা কূপ সম্পর্কে ধারণা ছিল না তার। গতকাল অসাবধানতাবশত পড়ে যান কূপে। পরে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তারা মরদেহ উদ্ধার করেন। মাহবুবুর আলম যাত্রাবাড়ীর ধনিয়াপাড়ার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দিন দিন বিপজ্জজনক হয়ে উঠছে ঝরনাগুলো। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে অসতর্কতায় বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। বেড়াতে আসা বেশির ভাগ পর্যটক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে অনেকে সাঁতার জানেন না। তাই অসতর্কতার কারণে ঝরনার নিচে থাকা কূপে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন।

বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক . কামাল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বেশির ভাগ পর্যটক আসেন সমতল থেকে। তাদের পাহাড় ঝরনার নিচের কূপের গভীরতা সম্পর্কে ধারণা থাকে না। না জেনে পর্যটকরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তথ্যমতে, ২০২০ সালের খৈয়াছড়া নাপিত্তাছড়া ঝরনায় দুজনের মৃত্যু হয়। সময় আহত হয়েছেন অন্তত চারজন। ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর খৈয়াছড়া ঝরনায় ওপর থেকে পড়ে আহত হন এক পর্যটক। ২০২২ সালে দুই সহোদরের প্রাণহানি হয়। আহত হন তিনজন। এছাড়া ২০২৩ সালে আরো দুজনের মৃত্যু হয়। আহত হন একজন। ওই বছরের ২৭ জুন সোনাইছড়ি ঝরনা দেখতে এসে পথভ্রষ্ট হন ১৫ পর্যটক। সময় জরুরি সেবায় যোগাযোগ করে সাহায্য চান তারা। পরে মিরসরাই থানা পুলিশ ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুর্গম পাহাড় থেকে তাদের উদ্ধার করেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরো তিনজন। সর্বশেষ গতকাল খৈয়াছড়া ঝরনায় ঢাকার এক ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন ঢাকার শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আল শাহরিয়া (২১) অন্য তিনজনের মধ্যে দুজন কুমিল্লা সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী অঞ্জন বড়ুয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল হক। অন্যজন ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের চারুকলা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সিফাতুর রহমান। সবচেয়ে বেশি পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে খৈয়াছড়া ঝরনায়। সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন সাত পর্যটক।

পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে ঝরনার দায়িত্বে থাকা বারৈইয়াঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পর্যটকদের টিকিট দেয়ার সময় বিপজ্জনক স্থানগুলোয় না যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া বন বিভাগ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে না যেতে ঝরনার পথে ফেস্টুন দেয়া হয়েছে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যানের অধীনে ঝরনাগুলো ইজারা দেয় বন বিভাগ। ওই বছর ১২ লাখ টাকায় ইজারা দেয়া হয়। ২০২৩ সালে ২৯ লাখ টাকায় ইজারা নেন এএইচ এন্টারপ্রাইজ। চলতি বছর ৩০ লাখ টাকায় ইজারা নেন সমোসন এন্টারপ্রাইজ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন