টিসিবি ভবনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

বিদেশী বিনিয়োগে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সাড়া মিলছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মুহূর্তে ২৬টি দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সাড়া মিলছে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। গতকাল রাজধানীতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ভবনেবাংলাদেশের বাণিজ্য নীতির বিবর্তন, বর্তমান অবস্থা ভবিষ্যৎ নির্দেশনা শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) চেয়ারম্যান . জাইদি সাত্তার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম।

রফতানি বাড়াতে আমদানির বিকল্প নেই উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অনেক পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তাই রফতানি বাড়াতে কাঁচামাল আমদানি করতেই হবে। যেমন তৈরি পোশাকের জন্য তুলা। এখন তুলা দিয়ে খুব সহজেই সুতা তৈরি করা যায়। যেসব দেশ থেকে আমরা তুলা আমদানি করি, সেসব দেশ আগামীতে নিজেরা সুতা উৎপাদন বৃদ্ধি করলে আমরা তুলা পাব না। ফলে এখানে তুলা থেকে সুতা তৈরির বড় ইন্ডাস্ট্রি গড়া ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কারণ আমাদের এখানে তুলা উৎপাদন বলার মতো হয় না। তাই প্রত্যেকটি খাতে আন্তর্জাতিক বাজার, চাহিদা কাঁচামালের সম্ভাব্যতা যেমন যাচাই করতে হবে, তেমনি নিজেদের সক্ষমতা, বাস্তবতা সম্ভাবনাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

বঙ্গোপসাগরকে যুক্ত করে বিশ্ববাণিজ্য বাড়ানোর চেষ্টা চলছে জানিয়ে আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘এক্ষেত্রে গত তিন মাসে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে সবার ধারণা পজিটিভ। আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে শুধুই পণ্য বিক্রি করে। আমরা নিজেদের ইমেজ বিক্রি করি, এরপর পণ্য বিক্রি করি। অর্থাৎ বিদেশীরা বাংলাদেশী পণ্য শুনলে এগিয়ে আসে। ফেসভ্যালুটা একদিনে তৈরি হয়নি। এটা বহুদিনের প্রচেষ্টার ফল। বর্তমান সময়ে এসে ইমেজ আন্তর্জাতিক বাজারে দিন দিন বৃদ্ধি করে যাচ্ছে তৈরি পোশাক খাত। খাতের পাশাপাশি অন্য খাতগুলোকেও এগিয়ে নিতে হবে।

টিটু দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে আরো কাজ করার তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘ শিল্প এখন ভালো অবস্থানে আছে। দেশের মানুষ এখন বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার পাশাপাশি দেশের ট্যুরিস্ট স্পটগুলোয়ও যাচ্ছেন। আমাদের কক্সবাজারসহ বিশাল সমুদ্র রয়েছে। সুন্দরবন রয়েছে। আমরা এগুলোকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি। মালদ্বীপ শুধু পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল একটা অর্থনীতি গড়েছে। নেপাল, ভুটান, ভারত অঞ্চলের অনেক দেশই পর্যটন খাতে ভালো ব্যবসা করছে। আমাদের সম্পদ আছে, সম্ভাবনা আছে। সেটিকে কাজে লাগাতে পারলে অর্থনীতির জন্য বড় মাইলফলক তৈরি হবে।

সেমিনারে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের দেশে পাট ছাড়া আর কোনো কাঁচামাল নেই, যেটা আমরা রফতানি করতে পারি। যার কারণে সব কাঁচামাল আমাদের আমদানি করতে হয়। কাঁচামাল আমদানি করতে হলে আমাদের অন্য কিছু রফতানি করতে হবে। আমরা কাঁচামাল আমদানি করে পণ্য তৈরি করে সেগুলো রফতানি করি। এর জন্য আমাদের উৎপাদনকারী শিল্প রয়েছে। উৎপাদনকারী শিল্পকে এনবিআর এবং সরকার নানাভাবে সাপোর্ট দিচ্ছে। এনবিআর কয়েক বছর ধরেমেড ইন বাংলাদেশ কনসেপ্টটি লালন করছে। এটি দুইভাবে হতে পারে। একটি. আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদার কিছুই বাইরে থেকে আমদানি করব না। পুরোটাই যেন আমাদের দেশে উৎপাদন হয়, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি। যখনই আমরা আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে ফেলব, তখন অটোমেটিক রফতানি হবে। তাই আমরা প্রথমে মার্কেট থেকে সব বিদেশী পণ্য বিদায় করতে চাই। অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে রফতানির জায়গা তৈরি হয়ে যাবে। লেদারে আমরা (এনবিআর) অনেকদিন ধরে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি। তারপরও লেদার যেভাবে এক্সপোর্ট মার্কেট দখল করার কথা, সেভাবে পারছে না। এখানে মূল সমস্যা কমপ্লায়েন্স ইস্যু।

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের বাইরের মার্কেটে যেতে হলে নিজেদের সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। সেই সক্ষমতা তৈরির তাগিদ যদি তৈরি না হয়, তাহলে আমরা বাইরের মার্কেটে যেতে পারব না। যারা পণ্য উৎপাদন করেন, তাদের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। তাদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। আমরা যত উন্নয়নশীল দেশ হব, তত আমাদের কাস্টমস সাপোর্টের জায়গাটা বাড়বে এবং কাস্টমসের আয়ও কমে আসবে। এটা মাথায় রেখেই এনবিআর কাজ করে যাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন