আইসিসি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৪

ডাচদের হারিয়ে সুপার এইটের পথে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সেন্ট ভিনসেন্টে ৪৮ রানের এক জুটি গড়েন সাকিব আল হাসান ও তানজিদ হাসান তামিম ছবি: বিসিবি
Default Image

ক্যারিবীয় দ্বীপদেশ সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নস ভেল স্টেডিয়ামে গতকাল বিশ্বকাপের ‘ডি’ গ্রুপের ম্যাচ শুরুর আগে কিছুক্ষণ বৃষ্টি হলো। এতে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় নেদারল্যান্ডস। যদিও প্রত্যাশামতো বাংলাদেশকে বেকায়দায় ফেলতে পারেননি ডাচ বোলাররা। বৃষ্টিতে বিলম্বিত ম্যাচে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৫৯ রান তুলে নেয় বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান হার না মানা ফিফটিতে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন। পরে বাংলাদেশের বোলাররা দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে বাংলাদেশকে ২৫ রানের জয় এনে দেন।

এ জয় বাংলাদেশের সুপার এইটের সম্ভাবনা জোরালো করেছে। কোনো অঘটন না হলে ‘ডি’ গ্রুপ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে বাংলাদেশই যাচ্ছে সুপার এইটে। ৩ ম্যাচ থেকে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে ডাচদের ২ ও নেপাল ১ ম্যাচ থেকে ১ পয়েন্ট পেয়েছে। বাংলাদেশের জয়ে এবারের আসর থেকে বিদায় নিশ্চিত হলো শ্রীলংকার, যারা ৩ ম্যাচের সবগুলোয় হেরেছে। নেপাল পরের দুই ম্যাচ খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের বিপক্ষে। ডাচদের শেষ ম্যাচ শ্রীলংকার বিপক্ষে। 

গতকাল সাকিব ৪৬ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন। ৩৮ বলে ফিফটি পান তিনি। ২০২২ সালে বিশ্বকাপের আগে ক্রাইস্টচার্চে ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এর ২০ ইনিংস পর ফিফটির দেখা পেলেন তিনি। 

চারে ব্যাটিংয়ে নামা সাকিব তৃতীয় উইকেটে তানজিদ হাসানকে নিয়ে ৩২ বলে ৪৮, চতুর্থ উইকেটে তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে ২২ বলে ১৮, পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ৩২ বলে ৪১ ও ষষ্ঠ উইকেটে জাকের আলীকে নিয়ে ১৫ বলে ২৯ রান যোগ করে দলকে দেড়শোর্ধ্ব সংগ্রহ এনে দেন।

বাংলাদেশের স্কোরটা আরেকটু বড় হতে পারত। ১৬ ওভার শেষে দলের সংগ্রহ ছিল ১২৮/৪। সাকিব ৪৯ ও মাহমুদউল্লাহ ২৪ রানে ব্যাট করছিলেন। দুই আত্মবিশ্বাসী ব্যাটার ছিলেন বলে ধরেই নেয়া হচ্ছিল ১৭০ রান তুলবে বাংলাদেশ। তবে পরের ওভারে মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে রানের গতিতে ছেদ পড়ে। ওই ওভারে আসে ৫ রান! 

পল ফন মিকিরেনের বলে সীমানার কাছে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ। নিউইয়র্কে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ছক্কা মারতে গিয়ে সীমানার মাত্র ইঞ্চি খানেক দূরে ক্যাচ আউট হয়ে যান দলের জ্যেষ্ঠ এ ক্রিকেটার। গতকালও তিনি আউট হলেন সেভাবেই। মিকিরেনের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন এঙ্গেলব্রেখটকে। ২১ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ২৫ রান করে তিনি সাজঘরের পথ ধরেন। 

এরপর ৭ বলে ১৪ রান করে সাকিবকে সুযোগ্য সঙ্গ দেন জাকের আলী অনিক।

এ ম্যাচের আগে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে মুখোমুখি লড়াইয়ে ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। এর আগে টি-টোয়েন্টিতে তিনবারের মুখোমুখিতে বাংলাদেশ দুটি জয় পায় এবং দুটিই বিশ্বকাপে। ২০১৬ সালে ভারতের ধর্মশালায় ও ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার হোবার্টে ডাচদের হারায় টাইগাররা। তবে সর্বশেষ লড়াইটা জেতে ডাচরা। গত বছর কলকাতার ইডেন গার্ডেনস স্টেডিয়ামে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ম্যাচে ৮৭ রানে হারে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হেড টু হেড ৩-০ করল বাংলাদেশ।

গতকাল রান তাড়া করতে নেমে মাইকেল লেভিট ডাচদের ঝড়ো সূচনা এনে দেন। অবশেষে পঞ্চম ওভারে দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেন পেসম্যান তাসকিন। তার বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে কাভারের ওপর ক্যাচ দেন লেভিট। তাওহীদ হৃদয় দারুণভাবে ক্যাচটি নেন। ২২ রানে প্রথম উইকেট হারায় ডাচরা। ১৬ বলে ১৮ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন মারমুখী ব্যাটার লেভিট। এতে স্বস্তি আসে টাইগার শিবিরে। পরের ওভারে আরেক উইকেটের পতন। তানজিমের দ্বিতীয় বলে কাভার দিয়ে চার মারেন ম্যাক্স ও’ডাউড। এক বল পরে টেনে মারলে ফিরতি ক্যাচ নেন তানজিম। ফলে পাওয়ারপ্লের মধ্যেই প্রতিপক্ষের দুই উইকেটের পতন ঘটায় বাংলাদেশ। ৬ ওভার শেষে ডাচদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৬/২।

এরপর বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে ওঠেন বিক্রমজিৎ সিং। ১৬ বলে তিন ছক্কায় ২৬ রান করেন তিনি। তাকে ফিরিয়ে স্বস্তি আনেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ। তার বলে স্টাম্পিং হয়ে যান বিক্রমজিৎ (৬৯/৩)। আউট হওয়ার আগে এঙ্গেলব্রেখটকে নিয়ে গড়েন ২৩ বলে ৩৭ রানের জুটি। এঙ্গেলব্রেখট এরপর অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের সঙ্গে ৪২ রানের আরেকটি দারুণ জুটি গড়েন। এঙ্গেলব্রেখটকে আউট করে এ জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন।

একই ওভারে বাস ডি লিডিকেও ফেরান রিশাদ। তিনি লিটনের হাতে স্টাম্পিং হয়ে যান (১১১/৫)। ১৭তম ওভারে আক্রমণে এসে বাংলাদেশকে বড় শিকার এনে দেন অভিজ্ঞ মুস্তাফিজুর রহমান। তার বলে জাকের আলীকে ক্যাচ দিয়ে সাঝঘরে ফেরেন ডাচ অধিনায়ক। ২৩ বলে ২৫ রান করেন তিনি। 

ততক্ষণে আস্কিং রান রেট বাড়তে থাকে। এর মধ্যেই সপ্তম উইকেট হারায় ডাচরা। ১৮তম ওভারের প্রথম বলে লোগান ফক বিককে সাজঘরের পথ দেখান রিশাদ। নিজেরই বলে ফিরতি ক্যাচ নেন তিনি। শেষ ওভারে ৩৩ রানের প্রয়োজন পড়ে ডাচদের। ডাচরা ১ উইকেট হারিয়ে তুলতে পেরেছে ৭ রান (১৩৪/৮)।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৯/৫। নেদারল্যান্ডস: ২০ ওভারে ১৩৪/৮। ফল: বাংলাদেশ ২৫ রানে জয়ী। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন