সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াবের বাজেটবিষয়ক আলোচনায় বক্তারা

নৈতিকতাহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এগোচ্ছে দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে গতকাল সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব আয়োজিত আলোচনা সভায় আলোচকদের সঙ্গে আয়োজকরা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দেশে দুর্নীতি এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। সার্বিক নৈতিকতার ব্যাপক অধঃপতন হয়েছে। খেলাপি ঋণের মডেলই এখন দেশে বিজনেস মডেল। সব মিলিয়ে দেশ একটি নৈতিকতাহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এগোচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সম্পাদক পরিষদ ও সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনারস’ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) আয়োজিত গতকাল এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তারা এ মন্তব্য করেন। 

রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত ‘অর্থনীতির চালচিত্র ও প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫’ শীর্ষক এ আলোচনায় অংশ নেন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সাবেক অর্থ সচিব ও সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও দৈনকি যুগান্তরের প্রকাশক সালমা ইসলাম এমপি। আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য দেন নোয়াব সভাপতি সংসদ সদস্য এ কে আজাদ। ধন্যবাদ জ্ঞ্যাপন করেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম। সভাটি সঞ্চালনা করেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার প্রকাশক ও সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। 

অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর ও অস্থিতিশীল অবস্থায় আছে। দেশ থেকে পুঁজি পাচার হচ্ছে, ব্যাংক খাত আছে বিশৃঙ্খল অবস্থায়। বিদেশী ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় বাড়ছে। দেশ একটি নৈতিকতাহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এগোচ্ছে। এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও প্রস্তাবিত বাজেটকে এক হিসেবে বলা যায় বাস্তবসম্মত, আর কী-ই বা করার আছে? আবার অন্যভাবে বলা যায়, এ পরিস্থিতিতে বাজেট যেন হাত-পা বাঁধা বলির পশুর মতো, নড়াচড়া করার খুব সুযোগ নেই। আমি বাজেটের কথা বলছি; অর্থমন্ত্রীর কথা বলছি না।’ 

প্রশাসনের সর্বস্তরে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারি ব্যয়ে প্রচুর অপচয় হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। তবে স্মার্ট মানুষ যদি নীতিহীন হয়, তা আরো ভয়ংকর হতে পারে।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আপনি ব্যাংক থেকে ঋণ নেবেন, আর ফেরত দেবেন না। দেশে এখন এ মডেল চলছে। খেলাপি ঋণের এ মডেলই এখন দেশের বিজনেস মডেল হয়ে গেছে।’

চ্যালেঞ্জিং সময়ে নতুন বাজেট দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো নতুনত্ব দেখছি না। আগের বাজেটের অংক শুধু এদিক-সেদিক করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, সংকোচনমূলক বাজেট, অথচ বাজেটের ঘাটতি দেখে সংকোচনমূলক মনে হয় না।’

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এবারের বাজেট প্রণয়নে অলিগার্ক বা লুটেরা গোষ্ঠীর কথা শুনেছেন অর্থমন্ত্রী, যারা ক্ষমতার প্রশ্রয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছে। এ শ্রেণী গোষ্ঠীর কথা চিন্তা করেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। আবার এ বিশেষ শ্রেণীর কথা চিন্তা করে অর্থনীতিতে সংস্কার ও ব্যাংক খাত নিয়ে তেমন আলোচনা করা হয়নি।’

সূচনা বক্তব্যে এ কে আজাদ বলেন, ‘সৎভাবে আয় করে একজনকে ৩০ শতাংশ কর দিতে হবে। আর কালোবাজারি, অবৈধ টাকা, যার উৎস খোঁজা হবে না সে দেবে ১৫ শতাংশ। এটা হতে পারে না। আমি একজন সংসদ সদস্য, এ রকম তুঘলকি কাণ্ডের ওপর সমর্থন জানানোর জন্য জনগণ আমাদের ম্যান্ডেট দেয়নি। এটা বাতিলের জন্য ব্যক্তিগতভাবে সংসদে তুলব।’

সংসদ সদস্য সালমা ইসলাম বলেন, ‘ছাপা সংবাদপত্র শিল্প এখন হুমকির মুখে পড়েছে। অনলাইনের কারণে বিজ্ঞাপনের বড় অংশ সেখানে চলে যাচ্ছে। এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’

আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবীর, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, সংবাদের নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার করিম এবং দৈনিক করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন