বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট ২০২৪: স্মার্ট বাংলাদেশ, অসীম সম্ভাবনা

বণিক বার্তা অনলাইন

ছবি : এশিয়াটিক মাইন্ড শেয়ার

এশিয়ার দ্রুতবর্ধনশীল সম্ভাবনাময় বাজারগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে আরো উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে যুগান্তকারী ইভেন্ট হিসেবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট ২০২৪’। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ফ্ল্যাগশিপ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের আয়োজনে এ দুই দিনের ইভেন্টে অংশ নেবেন বিভিন্ন দেশের স্টার্টআপ, এন্টারপ্রাইজ, ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট, এঞ্জেল ইনভেস্টর, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, থিংক ট্যাংক এবং শিল্প বিশেষজ্ঞরা। ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট অনুষ্ঠিত হয় এবং গত বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এ বছর আবারো এক ইভেন্টের আয়োজন করতে যাচ্ছে। গত বছর সামিটে ৫০০০-এরও বেশি মানুষের উপস্থিতি, এ বছর ‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট ২০২৪’-কে আরো বিশাল, আরো উন্নত এবং আরো ফলপ্রসূ করে তুলতে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। এ বর্ণিল আয়োজনটি আগামী ২৭ ও ২৮ জুলাই ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা-তে অনুষ্ঠিত হবে।      

বাংলাদেশের স্টার্টআপ চিত্র সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। গত দশকে ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে, যার বেশিরভাগই শেষ পাঁচ থেকে ছয় বছরে এসেছে। বর্তমানে দেশে শহর ও গ্রামীণ এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে আছে ২ হাজার ৫০০ সক্রিয় স্টার্টআপ। এ উদ্ভাবনী উদ্যোগগুলো সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি কর্মক্ষেত্র তৈরি করেছে। উদাহরণস্বরূপ: রাইড-শেয়ারিং স্টার্টআপ পাঠাও ৩ লাখ মোটরসাইকেল রাইডারের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করেছে। সবার জন্য বিনামূল্যে শিক্ষামূলক কনটেন্ট নিয়ে টেন মিনিট স্কুল অনলাইন এডুকেশন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মোট ৬.৭ মিলিয়নেরও বেশি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছেছে, যার মধ্যে এখনো প্রতি মাসে প্রায় ৩.২ মিলিয়নেরও বেশি শিক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে শিক্ষা গ্রহণ করছে। আই ফার্মার ১.১২ মিলিয়নেরও বেশি কৃষককে প্রায় ২.৪২ বিলিয়ন টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে, যা কৃষি উৎপাদনশীলতা ব্যাপকভাবে উন্নত করেছে।

এ স্টার্টআপগুলোর বৃদ্ধি বাংলাদেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে। তারা গতানুগতিক ব্যবসা থেকে বের হয়ে নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করছে এবং সামাজিক, পরিবেশগত আর অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মেট্রিক্স উন্নত করছে। এ অসাধারণ অগ্রগতি মূলত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ভিশনের জন্য, যা গত ১৪ বছরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, দক্ষতা উন্নয়ন এবং নীতিমালা তৈরির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

২০২৪ সালের সামিটের পটভূমি, ২০২৩ সালের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গঠিত। বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কারণে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। এ সময়কালে মুদ্রাস্ফীতির চাপ, রফতানি ক্ষেত্রে মন্দা এবং অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ রেমিট্যান্সেরও পতন দেখা যায়। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম উল্লেখযোগ্য স্থিতিস্থাপকতা এবং অভিযোজনশীলতা প্রদর্শন করেছে, যা ক্রমশ অসীম সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

এ বছর সামিটে প্রধান খাতগুলোর সেশনে ফিনটেক, জলবায়ু, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, লজিস্টিকস ও মোবিলিটি, ইমপ্যাক্ট এবং আরএমজি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও থাকছে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ, স্টার্টআপ এবং ইকোসিস্টেম প্রদর্শনী, পিচিং ইভেন্ট, বিনিয়োগকারী ম্যাচমেকিং, শেখার সুযোগ এবং নীতি আলোচনা।

২০২৩ সালে বৈশ্বিক স্টার্টআপ ফান্ডিং ৩৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে বাংলাদেশে বিশেষভাবে বছরের শেষ ৩ মাসে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ কার্যক্রম সংঘটিত হয়েছে, যা আগের ত্রৈমাসিকের তহবিলের তুলনায় ২.৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রবৃদ্ধিই বিনিয়োগকারীদের পুনরুজ্জীবিত আস্থা এবং বাংলাদেশের স্টার্টআপগুলোর অপার সম্ভাবনার প্রমাণস্বরূপ। আর্থিক সেবা, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল এবং শিক্ষা খাতগুলো উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ অর্জন করেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট ২০২৩-এ ১০০টিরও বেশি বৈশ্বিক এবং স্থানীয় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম এবং অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ৬০০টিরও বেশি স্টার্টআপ যোগ দেয়। ১০০+ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বক্তা তাদের বিশেষজ্ঞ মতামত প্রকাশ করে তাদের চিন্তাভাবনা এবং লক্ষ্য সম্পর্কে জানান। ১০০০-এরও বেশি স্টার্টআপ সংস্থা ইভেন্টে অংশ নেয়। সেখান থেকে ৫০+ স্টার্টআপ সংস্থা বিনিয়োগকারীদের কাছে তাদের ব্যবসায়িক প্রস্তাবনা পেশ করার সুযোগ পায়। ৫০০০-এরও বেশি মানুষের উপস্থিতিতে ইভেন্টটি সরকারের স্টার্টআপ উদ্যোগের প্রতি সমর্থনের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক তৈরি করে, যার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয় একটি স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির প্রতিশ্রুতি।

এ বছর আবারো স্টার্টআপগুলো সামিটে অংশগ্রহণ করে স্থানীয় এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশের সঙ্গে এক্সপোজারের সুযোগ পাবে। এই প্ল্যাটফর্মটি তাদের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ডিং সংগ্রহের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে। ফান্ডিং সংগ্রহের বাইরেও সামিটে থাকবে অনেক কিছু শেখার সুযোগ। ইন্ডাস্ট্রির নেতা এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে স্টার্টআপগুলো বাজার প্রবণতা, ব্যবসায়িক কৌশল এবং স্কেলিংয়ের সুযোগ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবে। এ সংযোগ স্টার্টআপগুলোকে জটিল বৈশ্বিক বাজার বুঝতে এবং সেখানে পৌঁছতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং কৌশল সম্পর্কিত সহায়তা দেবে। এছাড়াও সামিটটি একটি অন্যতম নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট, যা স্টার্টআপগুলোকে সমমনা উদ্যোক্তা এবং সম্ভাব্য সহযোগীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম করবে। এ সংযোগগুলো ব্যবসা বাড়াতে এবং উদ্ভাবনকে চালিত করতে কৌশলগত পার্টনারশিপের দিকে ধাবিত করবে।

বিনিয়োগকারীরা সামিটে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এশিয়ার অন্যতম গতিশীল এবং দ্রুতবর্ধনশীল স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশাধিকার পাবে। ইভেন্টটি বাংলাদেশের উদীয়মান প্রতিশ্রুতিশীল স্টার্টআপ এবং উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক আইডিয়া আবিষ্কারের জন্য সুযোগ দেবে। বিভিন্ন স্টার্টআপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিনিয়োগকারীরা একাধিক খাতে বিনিয়োগের সুযোগ সম্পর্কে জানতে পারবে। সামিটটি বাংলাদেশী বাজারের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ-সুবিধা বোঝার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম সহায়তাও দেবে। এ ধারণা বিনিয়োগকারীদের আরো তথ্যপূর্ণ এবং কৌশলগত বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করবে, তাদের পোর্টফোলিওগুলোকে বাজারের পরিবর্তনশীলতা এবং চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে পারবে।

করপোরেটরা সামিটে অংশ নিয়ে উদ্ভাবনী সমাধান প্রদানকারী গতিশীল স্টার্টআপগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপকে রূপান্তর করার এবং প্রবৃদ্ধি চালানোর সুযোগ পাবে। এটি উদীয়মান প্রবণতা, প্রযুক্তি এবং বাংলাদেশের আর তার বাইরের বাজারের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে ভালোভাবে বোঝার একটি সুযোগ তৈরি করে দেবে। ইভেন্টে অংশগ্রহণের মাধ্যমে, করপোরেটরা উদ্ভাবনী অংশীদারত্ব সম্পর্কে জানতে পারবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ-সুবিধাগুলো বুঝে নিয়ে, তাদের শিল্পগুলোতে এগিয়ে থাকার জন্য কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

উদ্যোক্তাদের জন্য সামিটটি প্রতিশ্রুতিশীল স্টার্টআপগুলোকে অর্থায়ন করতে আগ্রহী স্থানীয় এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের প্রবেশাধিকার দিয়ে ফান্ড সংগ্রহের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেবে। উদ্যোক্তারা ইন‍অ্যাক্টিভ সেশনগুলোর মাধ্যমে শিল্প নেতা এবং বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে শিখতে পারবে, বাজারের প্রবণতা, ব্যবসায়িক কৌশল এবং স্কেলিংয়ের সুযোগ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবে। ইভেন্টটি সমমনা উদ্যোক্তা এবং সম্ভাব্য সহযোগীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ করে দেবে, যা প্রবৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনকে ধাবিত করবে।

শিক্ষার্থীরা সামিটে অংশ নিয়ে মূল্যবান শিক্ষার অভিজ্ঞতা, পেশাদারদের পরিচালিত কর্মশালা এবং সেশনগুলো থেকে শেখার সুযোগ পাবে। শিক্ষার্থীরা স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম সম্পর্কে ব্যবহারিক জ্ঞান এবং অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করতে পারবে, শীর্ষস্থানীয় উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবকদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণামূলক গল্প শুনতে পারবে এবং শিল্প বিশেষজ্ঞদের কাজ থেকে হাতে কলমে অভিজ্ঞতা এবং সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে তাদের উদ্যোক্তা দক্ষতাগুলো উন্নত করতে সক্ষম হবে। ইভেন্টটি শিক্ষার্থীদেরকে স্টার্টআপ ল্যান্ডস্কেপ বোঝার এবং তাদের নিজস্ব উদ্যোক্তা যাত্রার জন্য প্রস্তুতের জন্য একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্ম।

স্টার্টআপের বিষয়ে আগ্রহী এবং উৎসাহী ব্যক্তিদের জন্য সামিটটি বাংলাদেশের এবং বৈশ্বিকভাবে স্টার্টআপ জগতের সর্বশেষ উন্নয়ন এবং প্রবণতা সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেবে। বিভিন্ন খাতে পরিবর্তন নিয়ে আসা এবং উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলা, উদ্ভাবকদের সঙ্গে দেখা এবং সংযোগ স্থাপনের সুযোগ করে দেবে। এ সামিটে উৎসাহী ব্যক্তিরা স্টার্টআপ অনুরাগীদের কমিউনিটির অংশ হয়ে সহযোগী পরিবেশে অবদান রাখতে এবং উপকৃত হতে পারে। সামিটের সেশন, আলোচনা এবং নেটওয়ার্কিং ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা প্রসারিত হবে।

২০২৩ সালের শেষ ৩ মাসে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের চিত্রকে প্রভাবিত করলেও স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চুক্তিতে অংশগ্রহণ করে বাড়তি আস্থা এবং সম্পৃক্ততা প্রদর্শন করেছেন। স্থানীয় এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ গতিশীলতা একটি দৃঢ় এবং বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরিতে অবদান রেখেছে, বিভিন্ন পর্যায় এবং খাত জুড়ে অনেক রকম স্টার্টআপের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করেছে।

‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট ২০২৪’ শুধুমাত্র একটি ইভেন্ট নয়, এটি বাংলাদেশী স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন হয়ে উঠবে। এটি স্টার্টআপগুলোকে তাদের উদ্ভাবনগুলো প্রদর্শনের এবং বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি যথাযথ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেবে, যা তাদের উদ্যোগগুলোকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি উদীয়মান বাজারের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর একটি সুযোগ। স্টার্টআপ সামিট নিয়ে বিস্তারিত জানতে www.startupsummit.gov.bd এ সাইটে ভিজিট করতে হবেবিজ্ঞপ্তি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন