অর্থ পাচার হয়ে যাওয়ার পর তথ্য দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক —দুদক চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘অর্থ পাচার হয়ে যাওয়ার পর সবাই জানে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ অর্থ পাচার হয়ে যাওয়ার ছয় মাস পর আমাদের তথ্য দিয়েছে।’

গতকাল ‘দুর্নীতি দমনে নাগরিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) এ সেমিনারের আয়োজন করে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সময়মতো পদক্ষেপ নেয় না জানিয়ে মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে আপনি যান তো একটা টাকা পাঠানোর জন্য, আপনার চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার ডলার নিয়ে যান তো। বাংলাদেশ ব্যাংকের পারমিশন ছাড়া পারবেন? তো এগুলো যায় কীভাবে? মন্দ লোন যে হয়, ব্যাড লোন যেগুলো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের বা বিভিন্ন দপ্তরের অডিটিং সিস্টেম আছে না? তারা তো অডিট করে। যেগুলো লোন দেয়া হয়, অডিট করে; কোথাও আসে? যখন খেলাপি হয়ে যায়, তখন জানা যায়।’

দপ্তরগুলো শুধু দুদকের ভূমিকা দেখতে চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘নিয়মের বাইরে কাজ করলেই তো দুর্নীতি হয়। সব ডিপার্টমেন্ট ছেড়ে রাখছে, দেখি দুদক কী করে! দুদকের পক্ষে সম্ভব? যেখানে দুর্নীতিগুলো হচ্ছে, সেখানে তারা যদি সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে, আমার এখানে তো খুব কম আসবে, আসবেই না। আপনারা কিন্তু ওইসব কথা বলেন না। খালি বলেন, দুদক কী করলে? দুদকে আসবে কেন, আমার কথা হলো এটা।’

দুদক চেয়ারম্যান জানান, দুদকের ১০-১২ হাজার টাকার আইনজীবীর বিপরীতে আসামিরা ১০-১২ লাখ টাকার আইনজীবী দাঁড় করান। তার পরও বিচারে দুদকের সফলতা গড়ে ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় শতভাগ।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রধান যদি অত্যন্ত দুর্নীতিপরায়ণ হয়, তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে আপনিও দুর্নীতিকে সহায়তা করছেন। এ বিবেকটা জাগ্রত করতে হবে। আপনার পাশের বাসায় ইলিশ মাছ ভাজে, আপনি সেটার ঘ্রাণ পান না? আপনার পাশের বাসার লোকটা যদি দুর্নীতি করে আপনি টের পান না? আপনার কি কিছুই করণীয় নেই?’

বাড়ির মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনার বাসার ভাড়া ৫০ হাজার টাকা। অথচ যার বেতন ২০-৩০ হাজার টাকা, তাকে বাসা ভাড়া দিচ্ছেন কেন?’

কমিশনে তার সোয়া তিন বছরে কোনো রাজনৈতিক বা বেসরকারি কারো প্রভাব কিংবা হুমকি পাননি বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান।

শামিম হায়দার পাটওয়ারীর বক্তব্যের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিদেশে মন্ত্রী-সচিবরা দুর্নীতির টাকায় বাড়ি করেছে, এটা বলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিদেশে ওইসব বাড়ির সুনির্দিষ্ট ঠিকানা দরকার। ওইসব ঠিকানা পাওয়া গেলেই দুদক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে।’

দুদকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমনে দুই বছরে প্রায় ৩০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। দুদকে প্রতিদিন গড়ে ৬০টি অভিযোগ আসে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুদকের মামলা প্রমাণ করতে অকাট্য দালিলিক প্রমাণ, কাগজ দরকার হয়। এটা সব সময় পাওয়া যায় না।’ অনুষ্ঠানে সভাপতি এইচআরপিবির প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘বিচার বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে দুদক সরব নয়।’

সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামিম হায়দার পাটওয়ারী দুদকের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘সরকার সৎ হলে এমপিরা সৎ হবেন, আমলারা সৎ হবেন। বড় বড় দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে দুদকের প্রতি জনগণের আস্থা আরো তলানিতে ঠেকবে।’

বিশেষ অতিথি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন রশিদ বলেন, ‘আমলাদের সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে লেখাপড়া করছে। তাদের টাকার উৎস কী? অনেক অসাধু ব্যবসায়ী রাতারাতি ধনী হয়ে যাচ্ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘দেশে দুর্নীতি ও মাদক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ দুটি অপরাধ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর হওয়া জরুরি।’

এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন বলেন, ‘গণমাধ্যম একটা জায়গায় বন্দি। গণমাধ্যমকে এখন ঢাল ও তলোয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।’

দুদকে কর্মরত সবার সম্পদের হিসাব দুই বছর পরপর জনগণের সামনে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছে এইচআরপিবি। সম্পদের বিবরণ দুদকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করাসহ ১৯টি সুপারিশ দিয়েছে সংগঠনটি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন