উষ্ণ আবহাওয়া

মৌসুমের শুরুতেই চা উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম

দেশে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ১৭ লাখ ৪৮ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে ছবি: ফাইল/নিজস্ব আলোকচিত্রী

দেশে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছে। ধারাবাহিকতায় চলতি বছরও উৎপাদন প্রবৃদ্ধির আশা করেছিল বাগানগুলো। তবে মৌসুমের শুরু থেকেই টানা তাপপ্রবাহ চায় উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। চলতি মৌসুমের প্রথম কয়েক মাসেই চায় উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। এমনকি নিয়মিত বৃষ্টি না হলে বছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চা উৎপাদন সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ চা বোর্ড।

চা বোর্ড থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে চা উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১৭ লাখ ৪৮ হাজার কেজি। এর মধ্যে জানুয়ারিতে বাগানগুলো উৎপাদন করেছে মাত্র লাখ ৭৫ হাজার কেজি চা। আগের বছরের একই সময়ে চা উৎপাদন না হয়ে ছিল লাখ ৬৪ হাজার কেজি।

অন্যদিকে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মার্চে যথাক্রমে ৪৬ হাজার ২০ লাখ ৪৬ হাজার কেজি চা উৎপাদন করেছিল বাগানগুলো। চলতি বছরের একই সময়ে তা কমে ৪২ হাজার ১৫ লাখ ৩০ হাজার কেজিতে নেমেছে। এপ্রিল মে মাসের চয়ের পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি। তবে সময়ে তীব্র তাপপ্রবাহ থাকায় উৎপাদনের পরিমাণ আরো কমে গেছে বলে জানিয়েছেন চা বোর্ডের কর্মকর্তারা। এমনকি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নিলাম বাজারগুলোতেও চায়ের সরবরাহ কমেছে।

দেশের অন্যতম প্রধান চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক চা নিলামের প্রতিটিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কম চা সরবরাহ করেছে বাগানগুলো। ২৯ এপ্রিল শুরু হয়ে ২০ মে পর্যন্ত চারটি নিলামের মধ্যে তিনটিতেই আগের বছরের চেয়ে কম চা বিক্রির জন্য প্রস্তাব করেছে ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে আগামীকাল অনুষ্ঠেয় পঞ্চম নিলামেও একইভাবে তুলনামূলক কম চা সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছেন বাগান মালিকরা।

নিলাম প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, সর্বশেষ ২০ মে অনুষ্ঠিত চতুর্থ নিলামে বাগানগুলো ১৩ লাখ ৪৫ হাজার ৫৫৩ কেজি চা পাঠিয়েছে।  আগের বছরের একই নিলামে যার পরিমাণ ছিল ২০ লাখ ১১ হাজার ৯১৮ কেজি। আগামী সোমবার অনুষ্ঠেয় পঞ্চম নিলামেও ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ১৬ লাখ ৯৩ হাজার ৪০৬ কেজি চা বিক্রির জন্য প্রস্তাব করবে, যা গত বছরের একই নিলাম থেকে লাখ ৬৩ হাজার ১৭৩ কেজি কম।

বিষয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় চা বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্রোকার্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক অঞ্জন দেব বর্মণ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চায়ের জন্য অনুকূল পরিবেশ হচ্ছে নিয়মিত পরিমিত বৃষ্টিপাত। রাতে বৃষ্টি দিনে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া উত্তম চা উৎপাদনে সহায়ক। কিন্তু বছর অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে চা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে উৎপাদন কমে গেলে বছরব্যাপী এর প্রভাব থাকে। তবে আগামী মাসগুলোয় বৃষ্টিপাত পর্যাপ্ত হলে সংকট কেটে যেতে পারে।

চা উৎপাদনকারীরা জানিনেছেন, মৌসুমের প্রথম দিকের চা উৎপাদনে প্রাকৃতিক সেচ জরুরি। সময় অনিয়মিতভাবে কিছুটা বৃষ্টি হলেও তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে কুঁড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। টানা বাড়তি তাপমাত্রার কারণে চা গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যাওয়াসহ নিম্নমানের চা উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি বাগানের বিপুল পরিমাণ চা গাছকে কৃত্রিম পদ্ধতিতে সেচ দেয়ার সুযোগও নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন