এশিয়ার স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম ফের ঊর্ধ্বমুখী

বণিক বার্তা ডেস্ক

জ্বালানির ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার কারণে এলএনজির দাম বেড়েছে ছবি: রয়টার্স

এশিয়ার স্পট মার্কেটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম আবার বেড়েছে। গত জানুয়ারির পর থেকে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে এ পণ্যের দাম। সম্প্রতি এশিয়ার দেশগুলোয় তাপমাত্রা বাড়ায় বিদ্যুৎ খাতে জ্বালানির চাহিদাও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। আর জ্বালানির ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা এলএনজির দাম বৃদ্ধির পেছনে মূল প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর রয়টার্স। 

শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় আগামী জুলাইয়ে সরবরাহের জন্য প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির গড় দাম চলতি সপ্তাহে ১০ ডলার ৯০ সেন্টে পৌঁছেছে। আগের সপ্তাহে যার দাম ছিল ১০ ডলার ৫০ সেন্ট। এশিয়ার স্পট মার্কেটে গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে চলতি সপ্তাহে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে এলএনজির দাম।

এ বিষয়ে কমোডিটি প্রাইসিং এজেন্সি আর্গাসের এলএনজি প্রাইসিংয়ের প্রধান স্যামুয়েল গুড বলেন, ‘‌গত কয়েকদিনে এশিয়ার স্পট মার্কেটে এলএনজির সরবরাহ মূল্য বেড়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্রেতাদের চাহিদা এবং গত তিনদিনে ইউরোপে দাম বাড়ার কারণে এশিয়ার স্পট মার্কেটেও এলএনজির দাম বেড়েছে।’

এছাড়া সামনের মাসগুলোয় উত্তর-পূর্ব চীনে গড় তাপমাত্রা বাড়ার পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। তাপমাত্রা বাড়লে বাড়তি বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে জ্বালানি হিসেবে দেশটি গ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি। অতিরিক্ত চাহিদার পূর্বাভাসের কারণেই এলএনজির দাম বেড়েছে।

বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান রাইস্টাডের এনার্জি অ্যানালিস্ট মাসানোরি ওডাকা একটি নোটে বলেছেন, ভারতের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চলমান তাপপ্রবাহের কারণে জুন ও জুলাইয়ে এলএনজির ব্যবহার বাড়াবে।’ 

কয়েকদিন ধরেই এশিয়ার স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম অব্যাহত বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের কারণে কাতার থেকেও এলএনজির সরবরাহ কমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। কাতার এলএনজি রফতানিতে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ দেশ। সরবরাহ কমে যাওয়ার এ আশঙ্কাও মূল্যবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে। 

এদিকে এলএনজির পরিবহন ব্যয়ও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। কারণ ইউরোপমুখী জাহাজগুলো লোহিত সাগর এড়িয়ে চলছে। ফলে বিকল্প পথে এলএনজির পরিবহনে ব্যয় হচ্ছে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ। প্রতি এমএমবিটিইউর দাম ১০ ডলারের ওপরে উঠে যাওয়ায় ভারত ও চীনসহ এশিয়ার ক্রেতা দেশগুলো ফের আমদানির পরিমাণ কমাতে শুরু করেছে।

প্রসঙ্গত, এলএনজি বৈশ্বিক চাহিদা ২০৪০ সাল নাগাদ ৫০ শতাংশেরও বেশি বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধিতে রসদ জোগাচ্ছে চীন এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে জ্বালানিটির ব্যবহার বাড়াচ্ছে এসব দেশ। ব্রিটিশ বহুজাতিক জ্বালানি তেল ও গ্যাস কোম্পানি শেল এনার্জি এক প্রতিবেদনে এমনটা জানায়। বার্ষিক ওই প্রতিবেদনে জ্বালানি খাতের জায়ান্ট কোম্পানিটি জানায়, ২০২৩ সালে এলএনজির বৈশ্বিক বাণিজ্য আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৪০ কোটি ৪০ লাখ টনে উন্নীত হয়েছিল। এ সময় জ্বালানিটির গড় দাম এবং বাজার অস্থিতিশীলতাও ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ফলে বাধাগ্রস্ত হয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি।

বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান আইসিআইএস ও রাইস্টাডের দেয়া তথ্যমতে, চলতি বছর এলএনজি আমদানিতে ২০২১ সালের রেকর্ড ভাঙবে চীন। ওই বছর দেশটি ৭ কোটি ৮৭ লাখ ৯০ হাজার টন আমদানি করেছিল। এ বছর তা বেড়ে আট কোটি টনে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৩ সালে আমদানির পরিমাণ ছিল সাত কোটি টন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন