স্থানীয় সরবরাহ ঠিক রাখতে গত বছর চাল রফতানিতে শর্তসাপেক্ষে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ভারত। মূলত স্থানীয় বাজারকে গুরুত্ব দিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও বৈশ্বিক চালের বাজারে দেশটির শীর্ষস্থানে হেরফের হবে না বলে আভাস দিয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)।
ইউএসডিএর পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি বছর দেশটি বিশ্বব্যাপী চালের চাহিদার বেশির ভাগ জোগান দেবে। ২০২৪-২৫ সালে ভারত ১ কোটি ৮০ লাখ টন চাল রফতানি করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২০ লাখ টন বেশি। তবে ২০২১-২২ সালের রেকর্ড ২ কোটি ২০ লাখ টন রফতানির চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কম হবে।
২০২৪-২৫ সালের বিশ্ববাজারের চিত্র তুলে ধরে ইউএসডিএ জানিয়েছে, বছরজুড়ে চালের সরবরাহ, বাণিজ্য, ভোগ ও মজুদ হ্রাসের উচ্চগতি পরিলক্ষিত হতে পারে। এ সময় বৈশ্বিক সরবরাহ বেড়ে ৫২ কোটি ৭৬ লাখ টনের রেকর্ড স্পর্শ করতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
ভারত, চীন, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া চাল উৎপাদনে শীর্ষ দেশ। তবে চীন ছাড়া বাকি তিন দেশে চালের ব্যবহার বাড়ায় বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া চলতি বছর বৈশ্বিক চাল ব্যবহার ৫২ কোটি ৬৪ লাখ টনের রেকর্ড গড়তে পারে।
ইউএসডিএ আরো বলছে, উল্লিখিত দেশগুলোয় চাল উৎপাদন ও ব্যবহার বেড়েছে। তাই বৈশ্বিক বাণিজ্যে সরবরাহ মাত্র ৫ কোটি ৩৮ লাখ টন বাড়তে পারে, যা ২০২২ সালে ভারতে প্রথমবার রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আগের চেয়ে কম।
প্রসঙ্গত, খুচরা মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও দেশীয় মজুদ বাড়াতে গত বছর নন-বাসমতি চাল রফতানি নিষিদ্ধ করে ভারত সরকার। ওই বছরের জুলাইয়ে দেশটির ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড এক বিজ্ঞপ্তিতে সাদা নন-বাসমতি চাল রফতানি নিষিদ্ধের বিষয়টি জানায়।
বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত খাদ্যশস্য চাল। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শস্যটির বাজার ছিল স্থিতিশীল। কিন্তু ভারত চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে এ ধারায় ভাটা পড়ে। বাড়তে শুরু করে দাম। ঘনীভূত হতে থাকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা। রফতানিতে বিধিনিষেধ, উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা ও সরবরাহ সংকটে ওই সময় প্রায় ১৫ বছরের সর্বোচ্চে উঠে আসে শস্যটির বাজারদর।
তবে গত বছরের এমন অস্থিরতা কাটিয়ে চলতি বছর সরবরাহের পাশাপাশি দামেও স্থিতি ফিরতে শুরু করেছে। যদিও এল নিনোর প্রভাবে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়ায় এ বছরও শস্যটির বাজার নাজুক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কমোডিটি মার্চেন্ট লুইস ড্রেফাসের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেনস মার্কাস বলেন, ‘আমরা অনেক বেশি সংকোচনমুখী একটি পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম বলেই মনে হচ্ছে। একদিকে ভারতের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ছিল, অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ায় হুহু করে বাড়ছিল চালের চাহিদা। এ দুটি বিষয়ের কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়েছিল। ফলে লাফিয়ে দাম বেড়েছে। তবে এখন মনে হচ্ছে চালের দাম ও সরবরাহ দুটোতেই স্থিতি ফিরতে শুরু করেছে।’