রোগীর ভোগান্তি কমছে অটোমেশনে, বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসক সংকট

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বরগুনা

বরগুনায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

বরগুনায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালকে ডিজিটাল করার লক্ষ্যে চিকিৎসাসেবায় চালু করা হয়েছে অটোমেশন পদ্ধতি। এতে রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে সঙ্গেই রোগীর তথ্য যুক্ত হচ্ছে কেন্দ্রীয় সার্ভারে। ফলে ভোগান্তি কমছে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের। অন্যদিকে হাসপাতালে বেড়েছে সরকারের রাজস্ব আয়। তবে এ পদ্ধতিকে শতভাগ সফল করতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসক সংকট, জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।

সম্প্রতি বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে জরুরি বিভাগ কিংবা বহির্বিভাগে রেজিস্ট্রেশন করলেই তার সব বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সার্ভারে। এরপর হাসপাতালের প্রয়োজনীয় সব বিভাগের অনলাইনে যুক্ত হচ্ছে রেজিস্ট্রেশন করা রোগীর তথ্য। এতে কোনো রোগী চিকিৎসা নিতে এসে টিকিট কাটার পর চিকিৎসকের চেম্বারে পৌঁছানোর আগেই ডাক্তার জানতে পারছেন রোগীর সব তথ্য। এছাড়া অটোমেশন পদ্ধতি চালুর ফলে রোগীর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রেও আগাম তথ্য যাচ্ছে ল্যাবে।

হাসপাতালকে ডিজিটাল করার লক্ষ্যে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করায় রোগীর ভোগান্তি কমার পাশাপাশি বন্ধ হচ্ছে ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা কীটের অপব্যবহার। এছাড়া অটোমেশনের ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ২০২২ সালে ৩৬ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ২০২৩ সালে আয় হয়েছে প্রায় ৬৯ লাখ টাকা।

এছাড়া রেজিস্ট্রেশন করা একজন রোগীর তথ্য সার্ভারে সংরক্ষণ থাকায় হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে কোন ওষুধ, কী পরিমাণ, কতবার নিয়েছেন সব তথ্য যুক্ত হচ্ছে কেন্দ্রীয় সার্ভারে। ফলে দায়িত্বরত যে কেউ দেশের যেকোনো জায়গা থেকে এসব বিষয়ে তদারকি করতে পারছেন খুব সহজে।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা আশা সাদিয়া জামান বলেন, ‘‌বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় যে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু হয়েছে, এটি সাধারণ মানুষের জন্য খুবই উপকারী। আমি আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে যখন রিসিট কাটলাম তখন দেখলাম, আমার নামে একটি প্রোফাইল তৈরি হয়েছে। এতে আমার চিকিৎসাজনিত সব তথ্য হাসপাতালে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ পদ্ধতি খুবই আধুনিক, আমার ভালো লেগেছে এবং সাধারণ জনগণের জন্য এটা খুবই উপকারী মনে করি।’

এ বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তাজকিয়া সিদ্দিকাহ বলেন, ‘‌অটোমেশনের আওতায় আসতে রোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র আবশ্যক। বহির্বিভাগ ও জরুরি ভর্তিতে সবার জন্যই জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে হাসপাতালে আসা প্রয়োজন। তবে এখনো বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা অনেকে পরিচয়পত্র নিয়ে আসেন না।’

এ পদ্ধতি বাংলাদেশের কিছু হাসপাতালে চালু রয়েছে বলে জানিয়েছেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. একেএম নজমুল আহসান। তিনি বলেন, ‘‌চিকিৎসক সংকট থাকায় ব্যবস্থাপত্রগুলো কম্পিউটারের মাধ্যমে দিতে পারছি না। একজন চিকিৎসককে প্রতিদিন প্রায় ৮০-৯০ জন রোগী দেখতে হয়। এত রোগীর ব্যবস্থাপত্র কম্পিউটারে টাইপ করা একজন চিকিৎসকের পক্ষে কঠিন হয়ে যায়। তবে আমরা প্রতিদিনই কিছু ব্যবস্থাপত্র অটোমেশন পদ্ধতিতে দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে আমরা সব ব্যবস্থাপত্রই কম্পিউটারের মাধ্যমে দেয়ার চেষ্টা করছি।’

তিনি আরো জানান, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ৫৫ জন চিকিৎসক থাকার কথা। এর বিপরীতে আছেন মাত্র ১৬ জন। চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়লে দ্রুত অটোমেশন পদ্ধতিকে শতভাগ সফল করা সম্ভব।

এ বিষয়ে বরগুনা ১ (আমতলী-তালতলী-সদর) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, ‘‌সবকিছুই ডিজিটাল হচ্ছে, স্বাস্থ্য বিভাগও ডিজিটাল হচ্ছে। এটি একটি ভালো পদক্ষেপ।’ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে স্থানীয় কোনো গড়িমসি থাকলে তা বন্ধ এবং সাধারণ জনগণের সচেতনতা বাড়াতে সব রকমের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন