রংপুর পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল

লোকবলের অভাবে পড়ে আছে ৩১ কোটি টাকার অবকাঠামো

এসএম পিয়াল, রংপুর

চিকিৎসক নিয়োগ না হওয়ায় রোগী আসছে না রংপুর শিশু হাসপাতালে ছবি : নিজস্ব আলোকচিত্রী

রংপুর নগরীর সাবেক সদর হাসপাতালের জমিতে নির্মাণ করা হয় ১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল। ৩১ কোটি ৪৮ লাখ ৯২ হাজার ৮০৯ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। তবে প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে চার বছরের বেশি সময় ধরে হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

অবশ্য গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে স্বল্প পরিসরে হাসপাতালটির বহির্বিভাগ চালু করা হয়। তবে সেটি রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের সম্প্রসারিত শিশু ওয়ার্ডে। দুজন চিকিৎসক এবং একজন কনসালট্যান্ট নিয়মিত চিকিৎসা দেয়ার কথা থাকলেও সেখানকার অবস্থাও করুণ বলে অভিযোগ রোগীর স্বজনের। দীর্ঘদিন বন্ধ এবং অব্যবহৃত পড়ে থাকায় কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের জন্য স্থাপিত আইসিইউর চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রমেক হাসপাতালে একটি মাত্র শিশু বিভাগ দিয়ে এ অঞ্চলের শিশুদের চিকিৎসা দেয়া কঠিন। তাই দীর্ঘদিন থেকে পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন এ অঞ্চলের বিশিষ্টজনরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্মিত হয় ১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল। তবে লোকবলের অভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্প্রসারিত শিশু ওয়ার্ডে হাসপাতালটির বহির্বিভাগ চালু করা হয়। সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত  হাসপাতালের একটি ভবনের নিচতলায় চলে চিকিৎসা কার্যক্রম। আপাতত দুজন চিকিৎসক এবং একজন কনসালট্যান্ট নিয়মিত চিকিৎসা দেয়ার কথা থাকলেও একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। অন্যজন বদলি হয়ে গেছেন।

এ ব্যাপারে রংপুরের  সিভিল সার্জন ডা. মো. ওয়াজেদ আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘১০০ শয্যার শিশু হাসপাতালের দ্রুত লোকবল নিয়োগ হচ্ছে—এ ধরনে কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। তবে লোকবল নিয়োগের বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন।’

ভবনটিতে থাকা আইসিইউসহ বন্ধ রুমের চিকিৎসা উপকরণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা উপকরণ যত্নের সঙ্গে রেখেছে।’

সরজমিনে শিশু হাসপাতালে দেখা গেছে, মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. সুজন চন্দ্র বর্মণ রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অফিস আদেশে মিঠাপুকুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবর্তে এখানে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যদিন পীরগাছা ও বদরগঞ্জ উপজেলার জুনিয়র কনসালট্যান্ট দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নিয়মিত দুজন মেডিকেল অফিসার থাকলেও বর্তমানে ডা. ইশরাত মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। অন্যজন ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস বদলি হয়ে গেছেন। প্রতিদিন গড়ে ৩০-৩৫ জনের মতো রোগী আসে। প্রচার করলে আরো রোগী বাড়বে। কিন্তু একজন চিকিৎসকের পক্ষে তা সামাল দেয়া কষ্টকর।’

ভবনটি ঘুরে দেখা গেছে, কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল চলাকালীন ভবনে রাখা চিকিৎসা উপকরণ এবং ১০ শয্যার আইসিইউ যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত পড়ে আছে দিনের পর দিন। প্রতিটি রুমে প্রধান দরজায় তালা মেরে রাখা হয়েছে। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় অনেক স্থানে ময়লার স্তূপ জমে গেছে। ভবনের ভেতরে ফাঁকা স্থানে শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য বসানো খেলনাসামগ্রীও অব্যবহৃত পড়ে আছে দীর্ঘদিন।

রংপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর শিশু হাসপাতাল নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মল্লিক এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স অনিক ট্রেডিং করপোরেশনকে। নগরীর সাবেক সদর হাসপাতালের ১ দশমিক ৭৮ একর জমিতে ৩১ কোটি ৪৮ লাখ ৪৮ হাজার ৬০০ টাকা ব্যয়ে শিশু হাসপাতালের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর। ভবন হস্তান্তর হয়েছে ২০২০ সালের ৮ মার্চ।  মূল হাসপাতাল ভবনের তৃতীয় তলা পর্যন্ত প্রতি তলার আয়তন ২০ হাজার ৮৮২ দশমিক ৯৭ বর্গফুট। এছাড়া নির্মাণ করা হয়েছে তিনতলার সুপারিনটেনডেন্ট কোয়ার্টার। সিঁড়ি বাদে প্রতি তলার আয়তন ১ হাজার ৫০০ বর্গফুট। রয়েছে ছয়তলার ডক্টরস কোয়ার্টার। এছাড়া রয়েছে স্টাফ অ্যান্ড নার্স কোয়ার্টার। বিদ্যুৎ সাবস্টেশন স্থাপনে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ভবন।

সমাজ পরিবর্তন ও উন্নয়ন ফোরাম রংপুরের সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদুল ইসলাম বাবলু বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ভবন হস্তান্তর হওয়ার চার বছরের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে লোকবল নিয়োগ না করা দুঃখজনক। ১০০ শয্যার শিশু হাসপাতালের একাধিক ভবন ফেলে রাখলে তা পরিত্যক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন