জলাশয় ভরাট ও অপরিকল্পিত নলকূপ স্থাপন

যশোরে শুষ্ক মৌসুমে প্রকট হচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানির সংকট

আব্দুল কাদের, যশোর

ছবি : নিজস্ব আলোকচিত্রী

বর্ষাকালে যশোর অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর থাকে ২৭-২৮ ফুট। তবে সংকট দেখা দেয় মার্চ-এপ্রিলে। বছরের এই সময়ে পানির স্তর নেমে যায় ৩২-৩৬ ফুট নিচে। জলাশয় ভরাট অপরিকল্পিত নলকূপ স্থাপনের কারণে শুষ্ক মৌসুমে সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। এরই মধ্যে অনেক টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। আর যেসব টিউবওয়েলে পানি উঠছে তার পরিমাণও খুবই কম। খাবারের পানিসহ নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেচ সংকটে কৃষিপণ্য উৎপাদনেও প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা কৃষকের।

সামনে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে অবস্থা থেকে উত্তরণে উপরিভাগের জলাধার সংরক্ষণে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার আট উপজেলায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নামতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত ৩২-৩৬ ফুট পর্যন্ত নেমেছে। সামনে পানির স্তর আরো নামবে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ পারভেজ জানান, জেলায় ২৪ হাজার ৩২৩টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অগভীর নলকূপগুলো প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। সাবমার্সিবল তারা টিউবওয়েলে কিছুটা পানি উঠছে।

টিউবওয়েলে ঠিকমতো পানি উঠছে না। পানির অভাবে কৃষক খেতের পরিচর্যা করতে পারছেন না। যশোর সদর উপজেলার চাঁন্দুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা বাবুর আলী। ১৩ দিন ধরে তার বাড়ির টিউবওয়েলে ঠিকমতো পানি উঠছে না।

একই গ্রামের আবুল কালাম জানান, টিউবওয়েল চেপে এক বালতি পানি তুলতে গিয়ে যেন জীবন যায় যায় অবস্থা। বাড়ির পাশের মাঠের স্যালোমেশিনের পানি দিয়ে পানির প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিচ্ছেন। স্যালোমেশিনেও পানি উঠছে কম। ছয় লিটার তেল ব্যয় হলেও সাড়ে তিন বিঘা জমি ভেজানো সম্ভব হচ্ছে না।

শহরের সব এলাকার টিউবওয়েলেও পানি উঠছে না। বেজপাড়ার রফিকুল ইসলাম জানান, গত ১০ দিন বাড়ির টিউবওয়েলে ঠিকমতো পানি উঠছে না। পাশের বাড়ির সাবমার্সিবল থেকে পানি নিতে হচ্ছে তার মতো অনেককে।

একই অবস্থা সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। কাশিমপুর গ্রামের রেজাউল ইসলাম জানান, বাড়ির টিউবওয়েলে পানি উঠছে না বললেই চলে। খাবার জন্য মাঠের গভীর নলকূপের পানি ভরে আনছেন।

চুড়ামনকাটি গ্রামের সালমা খাতুন জানান, বাড়ির টিউবওয়েল দীর্ঘ সময় চেপেও এক বালতি পানি ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না। আবার কোনো কোনো সময় মোটেও পানি থাকছে না।

চান্দুটিয়া গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, স্যালো টিউবওয়েলে তেমন পানি উঠছে না। ছয় লিটার তেল খরচ করেও সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পুরোপুরি পানি দিতে পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে তার মতো অনেক চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

যশোর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর অঞ্চলে বর্ষাকালে পানির লেয়ার ২৭-২৮ ফুট থাকে। তবে মার্চ-এপ্রিলে ৩২-৩৬ ফুট পর্যন্ত নামে। গত বছর যশোরে পানির স্তর ৩৭ ফুট নেমেছিল। বছর সদর উপজেলায় ৩৪ ফুট নিচে নেমেছে।

কারণ হিসেবে যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক . সাইবুর রহমান মোল্যা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বৃষ্টিপাত না হওয়া অপরিকল্পিত নলকূপ স্থাপনের কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমেছে। সাধারণত পানির স্তর ২৬ ফুটের নিচে নামলে হস্তচালিত নলকূপে পানি ওঠে না। আর যদি ৩০ ফুটের নিচে যায়, তাহলে বৈদ্যুতিক মোটর দিয়েও পানি তোলা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এভাবে ভূ-গর্ভের পানির স্তর খালি হয়ে পড়লে তা পূরণে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।

যশোর বিএডিসির (সেচ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল রশিদ জানান, বৃষ্টিপাত হলেই পানির সংকট কেটে যাবে। পরিমাপ করে দেখা গেছে, যশোর সদর উপজেলা, চৌগাছা বাঘারপাড়ায় পানির স্তর নেমেছে ২৯-৩১ ফুট পর্যন্ত। মণিরামপুর কেশবপুর উপজেলার কিছু গ্রামের টিউবয়েলে পানি উঠছে। আবার কিছু গ্রামে পানিই উঠছে না। গভীর নলকূপে পর্যাপ্ত পানি উঠলেও স্যালোমেশিনে তেমন পানি উঠছে না। এতে কৃষকের সেচ খরচ বেড়েছে। যশোর জেলায় গভীর নলকূপ রয়েছে হাজার ৮৬৭টি। এসব নলকূপ দিয়ে ২৫ হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে পানি দেয়া হয়। আর স্যালোমেশিন রয়েছে ৬৩ হাজার ৭৯৩টি, যা দিয়ে লাখ ২৩ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, চলতি মৌসুমে লাখ ৬০ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। পানির স্তর নিচে যাওয়ায় স্যালোমেশিনে ঠিকমতো পানি উঠছে না। কারণে কৃষকের ব্যয় বেড়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন