সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রকে আগে নিজের ঘর সামলানো উচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ছবি: পিআইডি

মানবাধিকার নিয়ে বাংলাদেশসহ অন্যদের সবক না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আগে নিজের ঘর সামলানো উচিত বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনের পক্ষের বিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগ এবং গণহত্যা চালাতে ইসরায়েলকে অর্থ ও অস্ত্র জোগান দেয়ারও সমালোচনা করেছেন তিনি। থাইল্যান্ড সফর নিয়ে গতকাল গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সমালোচনা করেন। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।

যুক্তরাষ্ট্রে গুলিতে দুই বাংলাদেশীর নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের দেশে যে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, গুলি করে সাধারণ-নিরীহ মানুষগুলোকে হত্যা করা হচ্ছে, এটা তো তাদের দেখা উচিত। নিজের ঘরকে আগে সামলানো উচিত।’ সম্প্রতি ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন আন্দোলন দমন করতে মার্কিন পুলিশের ভূমিকারও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

থাইল্যান্ড সফরের মাধ্যমে অর্থনীতির নতুন একটি দুয়ার খুলেছে বলে জানিয়েছেন সরকারপ্রধান। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কী পেলাম আর কী পেলাম না, সেটা বড় বিষয় নয়। নতুন করে কিন্তু অর্থনীতির একটি দুয়ার খুলেছে। থাইল্যান্ডের সঙ্গে খাদ্য ও ফল উৎপাদনের বিষয়ে মতবিনিময় হয়েছে। থাইল্যান্ডকে বিনিয়োগের আহ্বান করা হয়েছে। পাসপোর্ট ছাড়া যেন বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে যাওয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।’

বন্ধুত্বকে সবসময় গুরুত্ব দেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সবসময় দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সহযোগিতা, যোগাযোগ এবং মতবিনিময়, অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কারণ সার্বিকভাবে আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য বন্ধুত্বটা গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই এখানে বলব নতুন সরকার গঠনের পর এবার প্রথম বিদেশ সফর করলাম থাইল্যান্ডে। বলতে গেলে ঘরের কাছের পড়শি দেশ। থাইল্যান্ডে কিন্তু খাদ্য, ফসল, ফল উৎপাদনে অনেক গবেষণা ও উৎকর্ষ আছে। এসব ক্ষেত্রে মতবিনিময় করছি। গবেষণা কীভাবে দুই দেশ ভাগাভাগি করতে পারি, অভিজ্ঞতা নিজেদের মধ্যে ব্যবহার করতে পারি।’

শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য, থাইল্যান্ড যেহেতু পর্যটন ক্ষেত্রে অগ্রগামী; সেই অভিজ্ঞতাটাও আমরা নিতে পারি। পাশাপাশি আমাদের যে ৮০ মাইল লম্বা বালুকাময় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত রয়েছে, সেখানেও বিনিয়োগ করতে আহ্বান জানিয়েছি। সেখানে জায়গা চাইলে আমরা দেব। তাই এ সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ভালো সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগবে।’ 

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে রিফিউজি হিসেবে আমাদের এখানে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে আমরা আলোচনা করেছি। মিয়ানমারের ওপর থাইল্যান্ডের একটা প্রভাব আছে। সেক্ষেত্রে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি এটা আরো গভীরভাবে দেখবেন। প্রত্যাবর্তনের যতটা সহযোগিতা দরকার সেটা তিনি করবেন। এ ব্যাপারে তিনি কথা দিয়েছেন। মিয়ানমারের এ বিষয়টি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। বর্তমান যে পরিস্থিতি চলছে সেটা নিয়ে থাইল্যান্ডও বেশ উদ্বিগ্ন।’

সমবায়ভিত্তিক কৃষি নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে নিজের ভাবনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ব্যবস্থায় সার, বীজ, চাষ ও মাড়াইয়ে সব ব্যবস্থাই সমবায়ের মাধ্যমে হবে। এখানে কৃষকের নিজের ব্যক্তিগতভাবে কোনো খরচ করতে হবে না। ওই ফসলের একটা অংশ সমবায়ের কাছে বা সরকারের কাছে থাকবে, যা পরবর্তী চাষের জন্য ব্যবহার করা হবে। সেভাবেই আমরা এটা করতে চাইছি। যেটা জাতির পিতা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু করতে দেয়া হয়নি। সেটা করতে দেয়া হলে আজ দেশে খাদ্যের ঘাটতি হতো না।’

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলনে, ‘এখন আমরা (ভূমি ব্যবস্থাপনা) ডিজিটালাইজড করে ফেলেছি, যার জমি তারই থাকবে। কৃষকের জমি কখনো নেয়া হবে না। এখন তো সমলয় চাষ হচ্ছে। সমলয়টা কিন্তু একই ধরনের, অনেকটা সমবায়ভিত্তিক। একসঙ্গে চাষ করে যার জমির ভাগ সে নিয়ে নিচ্ছে। এতে আস্থা হারানোর কোনো বিষয় নেই। বরং আমি বলব, যদি আমরা এভাবে চাষ করতে পারি, আমাদের ফসল উৎপাদন দ্বিগুণ-তিন গুণ হবে।’

ঢাকা শহরকেন্দ্রিক প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে যানজট কমে যাবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে যানজট শুধু কমবে না, জেলার সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ হবে। তাহলে সবাইকে আর ঢাকায় থাকতে হবে না। ঢাকার বাইরের উপশহরগুলোয় অনেকেই থাকবেন, ঢাকা এসে কাজ করে চলে যাবেন।’ রাজধানীর ফিটনেসবিহীন বাস প্রসঙ্গেও এ সময় কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। 

জলবায়ু সম্মেলনে উন্নত দেশগুলোর ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা হচ্ছে সব থেকে দুর্ভোগের যে প্রতিবার জলবায়ু সম্মেলন হয়, অনেক প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়। আমরা ডিমান্ড করি, কিন্তু কাজের জায়গায় অর্থ আর কেউ দেয় না। ধনী দেশগুলো বা যারা আজ নিজেরা উন্নত হয়ে গেছে। তাদের কারণেই আজ এ জলবায়ু পরিবর্তনটা; যার অভিঘাতে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এখানে অর্থ বরাদ্দ দেয়া তাদেরই এটা দায়িত্ব সব থেকে বেশি।’ 

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার হীরকজয়ন্তী উদযাপন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দলের ৭৫ বছর উদযাপন করব ব্যাপকভাবে। বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখব, আমরা কোনো কোনো দেশকে আমন্ত্রণ করব। ব্যাপক কর্মসূচির পালনের জন্য উপকমিটি করব। উপমহাদেশের একটি দল ৭৫ বছর উদযাপন করছে এটা বড় কথা।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন