নিষেধাজ্ঞা শেষে নদ-নদীতে মিলছে না প্রত্যাশিত ইলিশ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, চাঁদপুর ও বরিশাল

চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশের সরবরাহ অনেকটাই কম ছবি : নিজস্ব আলোকচিত্রী

জাটকা রক্ষায় দেশের পাঁচটি অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ শিকারে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে ৩০ এপ্রিল মধ্য রাতে। এরপর থেকেই উপকূলের নদ-নদীতে মাছ শিকারে নামেন জেলেরা। তবে গত তিনদিনে অনেকটা খালি হাতেই ঘাটে ফিরতে হয়েছে তাদের। বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড এবং চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশের সরবরাহ অনেকটাই কম দেখা গেছে।

জেলেদের দাবি, মৌসুমের এই সময়ে উপকূলের নদ-নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার কথা। নদ-নদীতে জাল ফেললেও তেমন ইলিশ উঠছে না। যে কয়েকটি পাওয়া যাচ্ছে, তাও আকারে ছোট। এসব মাছ বিক্রি করে ট্রলারের খরচই উঠবে না।

তবে মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, এখন মূলত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরকে ইলিশের মূল মৌসুম ধরা হয়। মে-জুন-জুলাইয়ে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ে না। হতাশার কিছু নেই। সামনের দিকে মাছ পাওয়া যাবে। জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে প্রজনন, উৎপাদনে হেরফের হচ্ছে। বৃষ্টি, নদীর স্রোত ও পানির চাপের সঙ্গে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন সম্পর্কিত।

নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রথম দিনে চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সাত-আট মণ মাছ উঠলেও দ্বিতীয় দিনে সরবরাহ কিছুটা বাড়তে দেখা গেছে। তবে দাম অনেক বেশি হওয়ায় ক্রেতা ছিল কম। তবে যেসব ইলিশ উঠেছে তা আকারে ছোট। অধিকাংশই এক কেজির নিচে। দুই কেজি ওজনের কিছু ইলিশও পাওয়া গেছে। ৬০০-৭০০ গ্রাম ওজনের মাছের দাম মণপ্রতি ৪৫-৪৭ হাজার টাকা। ৭০০-১০০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬৫-৭৫ হাজার টাকা।

জেলেদের অভিযোগ, অভিযানের সময় কিছু অসাধু জেলে গোপনে জাটকাসহ অন্যান্য মাছ ধরেছে। এ কারণে মাছের সরবরাহ কম। তারা সরকারি সুবিধা নিলেও মাছ আহরণ থেকে বিরত থাকেনি।

ব্যবসায়ী কামাল হোসেন জানান, প্রথম দিনে ইলিশ সরবরাহ কম ছিল। এ কারণে দামও ছিল চড়া। এদিন এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ২ হাজার থেকে ২০০ টাকা। ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০-১ হাজার ৭০০ টাকা এবং ৫০০-৬০০ গ্রাম ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০-১ হাজার ৩০০ টাকা।

চাঁদপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শবেবরাত সরকার জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষে দ্বিতীয় দিনে ঘাটের বিভিন্ন আড়তে ৯০-১০০ মণ ইলিশ সরবরাহ হয়েছে। তবে তার অধিকাংশই ছোট। দামও আগের তুলনায় অনেক বেশি। বৃষ্টি ও নদীতে পানি বাড়লে মাছ ধরা পড়বে।

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইলিশ রক্ষায় প্রতি বছর ১ মার্চ-৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অভয়াশ্রমে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। ২০০৬ সাল থেকে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস বিস্তীর্ণ নদ-নদীর সীমাকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করে জাটকা রক্ষা কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা পাঁচটি অভয়াশ্রমের ৩৯২ কিলোমিটার জলসীমা রয়েছে। অভয়াশ্রমের সীমানা হচ্ছে চর ইলিশার মদনপুর থেকে ভোলার চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর শাহাবাজপুর চ্যানেলের ৯০ কিলোমিটার। এছাড়া ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার,  চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজেন্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার, শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত নিম্ন পদ্মার ২০ কিলোমিটার। বাকি জলসীমা বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর নদীর হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দিগঞ্জের বামনীর চর, গজারিয়া নদীর হার্টপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট, হিজলার মৌলভীরহাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জসংলগ্ল মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার। এ সীমার মধ্যে থাকা নদীগুলো হচ্ছে মেঘনা, কালাবদর, আড়িয়াল খাঁ, নয়ভাঙ্গুলী, গজারিয়া ও কীর্তনখোলার আংশিক।

ছয়টি অভয়াশ্রমের মধ্যে শুধু পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটারে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা পালিত হয় ১ নভেম্বর-৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অভয়াশ্রমগুলোয় শুধু ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। তবে অন্য মাছ ধরার অজুহাতে নদীতে নেমে ইলিশ নিধন করতে না পারে সেজন্য সব ধরনের জেলে নৌকা পুরোপুরি নিষিদ্ধ থাকে এ সময়।

wনষেধাজ্ঞা শেষে গত বুধবার মধ্যরাত থেকে নদ-নদীতে ইলিশ শিকারে নামেন বরিশালের অর্ধলক্ষাধিক জেলে। আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়েনি জালে।

পোর্টরোড মোকামের আড়তদাররা জানান, গত বছরও এই সময়ে দিনে ৫০০ মণ ইলিশ এসেছিল। সেখানে এখন দিনে ৪০ মণও আসছে না। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ইলিশ শিকার করেছিলেন জেলেরা। এজন্য এবার বোধহয় উৎপাদন বাড়েনি। এছাড়া নিষেধাজ্ঞার আগে এবং চলাকালীন ব্যাপক হারে জাটকা শিকার হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে উৎপাদনে।

নদীতে ইলিশ কম ধরা পড়ার কারণ হিসেবে মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছর আর এ বছরের মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে।  গত বছর এত তাপমাত্রা ছিল না। এবার অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ইলিশ কম ধরা পড়ছে। এর সঙ্গে বৃষ্টি এবং জোয়ার-ভাটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন