বিক্রি কমে যাওয়ায় ইউরোপীয় বন্দরে গাড়ির জট

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইউরোপের বন্দরে ছাড়ের অপেক্ষায় থাকা বেশির ভাগ ইভি চীনে তৈরি ছবি: অ্যান্টওয়ার্প-ব্রুজেস পোর্ট

জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা নিয়ে বৈশ্বিক আশঙ্কার মুখে গাড়ি শিল্পের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। বিশেষ করে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি (ইভি) খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে। তবে এ ধরনের গাড়ি বিক্রি বাড়ার ব্যাপক পূর্বাভাস থাকলেও উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে বাস্তবে। এ কারণে ইউরোপীয় বন্দরগুলোয় বিভিন্ন দেশ থেকে আসা গাড়ি ছাড়ের পরিমাণ কমে গেছে। খবর ইউরোনিউজ।

নতুন প্রযুক্তির গাড়ির বাজার বড় হবে, এমন ধারণা করে কোম্পানিগুলো উৎপাদন বাড়িয়েছিল। কিন্তু ইউরোপের মতো প্রধান বাজারে গাড়ির উৎপাদন ও সরবরাহের অনুপাত এ খাতে মন্দা তৈরি করেছে। এ কারণে আমদানি করা গাড়িগুলো বন্দরে আটকে আছে।

প্রতিবেদনে বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্প ও জিব্রুগ বন্দরের উল্লেখ করে জানানো হয়, বন্দরের গাড়ির চালান রাখার স্থান প্রধানত চীন থেকে আমদানি করা ইভিতে ভরে গেছে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ছাড় না হওয়ার গাড়ি শুধু চীনে থেকে এসেছে এমন নয়। ‘অন্য আরেকটি দেশ এ সমস্যায় প্রভাব ফেলছে’ বললেও দেশটির নাম তারা প্রকাশ করেননি।

লে মন্ডের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, অ্যান্টওয়ার্প ও জিব্রুগের কাছের ক্যালু বন্দরে ১ লাখ ৩০ হাজার নতুন গাড়ি আটকে আছে। এতে এমজি, বিওয়াইডি, নিও, এক্সপেং, ওমোডাসহ বিভিন্ন কোম্পানির গাড়ি রয়েছে, যার উল্লেখযোগ্য অংশ চীনের তৈরি।

সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপীয় বাজার থেকে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে চীনা ইভি কোম্পানিগুলো। কারণ এ অঞ্চলের অনেক দেশে ইভি ক্রয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এমনকি ক্রেতারা বিভিন্ন ধরনের সহায়তাও পেয়ে থাকেন।

আমদানির পাশাপাশি ইউরোপ চেষ্টা করছে স্থানীয় গাড়ি শিল্পকে আরো দ্রুতগতি দিতে। তবে সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে চীন থেকে ইভি রফতানি বেড়ে চলেছে। অ্যাসোসিয়েশন অব দি ইউরোপীয় ভেহিকল লজিস্টিকসের (ইসিজি) পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) চীন থেকে গাড়ি রফতানির পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। এর বেশির ভাগই ছিল ইভি।

এর মাঝে ফেব্রুয়ারিতে চীনা গাড়ি নির্মাতাদের শীর্ষ গন্তব্য ছিল বেলজিয়াম। কিন্তু বাজার পরিস্থিতির কারণে আমদানিকারকরা গাড়ির ছাড়পত্র নিতে দেরি করছেন। তাই বন্দরের গাড়ি রাখার স্থানগুলো অস্থায়ী পার্কিংয়ে পরিণত হয়েছে।

ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর অ্যান্টওয়ার্প-ব্রুজেস বন্দরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এ চিত্র ইউরোপের সব বন্দরে প্রায় একই।

গত বছর এ বন্দরের মাধ্যমে আমদানি হওয়া গাড়ির পরিমাণ ছিল ১৭ লাখের কম। এর আগে ২০১৯ সালের ১৯ লাখ ৫০ হাজার গাড়ি আমদানি হয়। লে মন্ডের মতে, এ পরিস্থিতি পূর্বাভাস দেয় যে অ্যান্টওয়ার্প-ব্রুজেসে চলতি বছর চীন থেকে আসা যানবাহনের সংখ্যা ৬-১০ লাখের মধ্যে থাকবে।

বন্দরে গাড়ি জটের কারণ হিসেবে ইউরোপে বিক্রি কমে যাওয়ার কথা বলছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। অ্যান্টওয়ার্প-ব্রুজেস বন্দরের মতে, জট সৃষ্টির আরেকটি কারণ আমদানীকৃত গাড়ি নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিবহন ও চালক নেই। এছাড়া ইউরোপের অভ্যন্তরে গাড়ি পরিবহনের মতো বন্দর কম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্দরে গাড়ি পার্কিং থাকার ঘটনাও রয়েছে।

অন্যদিকে দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ইউরোপে বিপণন ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে। বলা হচ্ছে, চীনা মডেলগুলো বিক্রির জন্য বিস্তৃত কোনো নেটওয়ার্ক তৈরি ছাড়াই ইউরোপে পাঠানো হয়। এ কারণে চীনা ইভি ইউরোপের বাজারে আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন