সুইফটোনমিকস

যেখানে কিছু সময়ের জন্য হলেও অর্থনীতির গতি বাড়ান টেইলর সুইফট

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি : বণিক বার্তা

বিশ্ব সংগীতাঙ্গনে কয়েক বছর ধরে রীতিমতো ঝড় তুলছেন টেইলর সুইফট। তার ‘ক্রয়েল সামার’, ‘ব্লাংক স্পেস’ কিংবা ‘ফোর্টনাইট’ গান দুনিয়ার শ্রোতাদের হৃদয়ে অনুরণন তোলে। শিল্পীসত্তার বাইরে সুইফটের পরিচয় গীতিকার, প্রযোজক ও অভিনেত্রী। এসব পরিচয়গুণের জন্যই হয়তো অর্থনীতিতেও নিজের প্রভাব তৈরি করতে পেরেছেন মার্কিন এ গায়িকা। 

প্রধানত গানের ক্যাটালগ, রেকর্ড, কনসার্টের টিকিট বিক্রি ও সম্প্রচার স্বত্ব থেকে আয় করেন সুইফট। তবে তিনিই সম্ভবত গুটিকয়েক শিল্পীদের একজন, যারা ফ্যাশন লাইন, বিউটি ব্র্যান্ডস, রেস্টুরেন্ট কিংবা অন্যান্য ‘পার্শ্ব ব্যবসা’র বাইরে নিজেদের মূল পেশা থেকেই অধিকাংশ আয় করেন। দুনিয়াজুড়ে হাজারো ভক্তের কল্যাণে সুইফট এরই মধ্যে ১০০ কোটি ডলারের মালিক বনে গেছেন। ফলে সংগীতের বাইরে তার প্রভাব অর্থনীতিতেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষত তিনি যেসব শহরে কনসার্ট করেন, সেখানকার অর্থনীতি স্বল্পমেয়াদে হলেও স্ফীত হয়। লাখ লাখ মানুষের সমারোহে স্থানীয় হোটেল-মোটেল, শপিং মল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন খাত সবই পায় নতুন গতি। ফলে টেইলর সুইফটের নামেই একটি অভিধা চালু হয়েছে, সুইফটোনমিকস।

সম্প্রতি ইউরোপিয়ান ‘দ্য ইরাস ট্যুর’-এ বের হয়েছেন পপ-সম্রাজ্ঞী। আগামী আগস্টের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চলবে এ সংগীত ভ্রমণ। এ সময় অঞ্চলটির ১৮টি শহরে ৫১টি কনসার্টে অংশ নেবেন টেইলর। নিউইয়র্কভিত্তিক ট্রাভেল এজেন্সি এমবার্ক বিয়ন্ড ধারণা করছে, প্যারিস অলিম্পিক ঘিরে যত পর্যটক আসার কথা, টেইলর সুইফটের কনসার্ট ঘিরেই শহরটিতে এর চেয়ে পাঁচ গুণ মানুষের আগমন ঘটবে। 

গবেষণা প্রতিষ্ঠান লাইট হাউজের সিইও সিন ফিটজপ্যাট্রিক বলছেন, ‘টেইলর সুইফ শুধু সংগীত কিংবদন্তি নন। তিনি নিজেই একজন অর্থনৈতিক শক্তি। তিনি কোথাও কনসার্টে গেলে স্থানীয় পর্যটন খাত, বিশেষ করে স্বল্পমেয়াদে হোটেল ভাড়া বেড়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই ইউরোপের পর্যটন খাতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।’ 

লাইট হাউজের হিসাবে, কনসার্টের শহরগুলোয় শুধু হোটেল ভাড়াই এ সময়ে গড়ে ৪৪ শতাংশ বেড়ে যাবে। ওয়ারশ, লিভারপুল, স্টকহোমের মতো শহরে ভাড়া বাড়ার হার ১০০ কিংবা ১৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়া লিয়ন, জুরিখ, ভিয়েন ও ইসেসের মতো শহরে ৫০-৮৮ শতাংশ ভাড়া বাড়বে। 

তবে বৃদ্ধির বিষয়টি শুধু হোটেল ভাড়াতেই সীমাবদ্ধ নয়। বার্কলের মতে, ‘শুধু যুক্তরাজ্যে সুইফটের কনসার্ট উপলক্ষে আগত ভক্তরা টিকিট, আবাসন, পরিধেয় ও ভ্রমণ বাবদ গড়ে প্রায় ৮৪৮ পাউন্ড বা ৯৯৫ ইউরো ব্যয় করতে পারেন, যা দেশটির নাগরিকদের রাত্রিকালীন আড্ডায় ব্যয়ের প্রায় ১২ গুণ। ধারণা করা হচ্ছে দেশটিতে সুইফটের কনসার্টে প্রায় ১২ লাখ মানুষের সমাগম হতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি প্রায় ৯৯ কোটি ৭০ পাউন্ডের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করতে পারে।’ কনসার্ট চলাকালে একেক জন পর্যটক আবাসন বাবদ প্রায় ১২১ পাউন্ড, নতুন পরিধেয় বাবদ প্রায় ৫৬ পাউন্ড ব্যয় করতে পারেন। ভ্রমণ ব্যয় হতে পারে প্রায় ১১১ পাউন্ড। ফলে অর্থনীতির ওপর সুইফটের প্রভাব বলাই বাহুল্য। 

তবে মুদ্রার অন্য পিঠও আছে। সুইফটোনমিকস কতটা বাস্তব, আর কতটা ‘ধারণা’ এ নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের হলি ক্রস কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক ভিক্টর ম্যাথেসন বলেন, ‘সুইফটের কারণে অর্থনীতি স্ফীত হওয়ার বিষয়টি বাস্তবতাবিমুখ। কেননা কনসার্ট ঘিরে টিকিট বা মার্চেন্ডাইজ বাবদ যা আয় হয়, তার অধিকাংশই ট্যুর কর্তৃপক্ষ কিংবা টেইলর সুইফট নিজেই নিয়ে নেন। স্থানীয়ভাবে এ অর্থের সঞ্চালন খুব কমই হয়। এক্ষেত্রে হোটেল ভাড়ার বিষয়টি সামনে আসতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কনসার্টগুলোয় স্থানীয় নাগরিকদের উপস্থিতিই বেশি থাকে। আর কনসার্টের খরচ জোগাতে আগে থেকে ব্যয়সাশ্রয় করতে থাকেন তারা। ফলে সুইফটোনমিকস হয়তো স্বল্পকালে অর্থনীতিতে গতি দিতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এর তেমন প্রভাব নেই। খবর ইউরোনিউজ।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন