অর্থনীতিবিদদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

মানুষের কথা চিন্তা করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন

বাসস

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গতকাল ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২২তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন-২০২৪’-এ প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় জনগণ ও বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা, নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য দেশের অর্থনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি অর্থনীতিবিদদের কাছে এটাই প্রত্যাশা করি, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে আপনারা আপনাদের পরিকল্পনা ও নীতিমালা প্রণয়ন করবেন।’

প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২২তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন-২০২৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

বিদেশীর পরামর্শ এখানে ফলপ্রসূ হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোনো একজন দু-একদিনের জন্য দেশে এসে আমাদের উপদেশ দিয়ে যাবে, ওই উপদেশ আমাদের কাজে লাগবে না। কাজে লাগবে নিজের চোখে দেখা এবং মানুষের জন্য করা। এটাই কাজে লাগবে। হ্যাঁ বাইরে থেকে আমরা শিখব কিন্তু, করার সময় নিজের দেশকে দেখে করব, মানুষকে দেখে করব। আমাদের কী সম্পদ আছে সেটা দেখে করব।’

গবেষণা আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি অর্থনীতি সমিতিকে বলব, আপনারা গবেষণা করছেন, আমাদের গবেষণা দরকার। আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে দেশকে মুক্ত রাখার পদক্ষেপ যেমন আমরা নিয়েছি, পাশাপাশি দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকারগুলো যাতে সুনিশ্চিত হয় সেটা মাথায় রেখেই আমাদের সব নীতিমালা এবং কার্যক্রম আমরা পরিচালনা করে যাচ্ছি। দেশকে ডিজিটালাইজড করায় এখন প্রত্যন্ত ইউনিয়নে ঘরে বসেও মানুষ ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বিদেশ থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারছে এবং ২০২৬ সাল থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হব—তা কার্যকর শুরু হবে।’

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা কার্যকর হওয়ার পর যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে সেগুলো মোকাবেলা করা আর যে সুযোগগুলো আসবে সেগুলো কাজে লাগানোর মতো পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। ‘২০২১ থেকে ২০৪১’ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি, যার লক্ষ্য ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি উন্নত ‘সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে উঠবে। পাশাপাশি নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। সেখানে উত্থান-পতন, অনেক চড়াই-উতরাই থাকবে এবং সেগুলোকে অতিক্রম করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। হতাশ হওয়ার কিছু নেই, কেউ হতাশ হবেন না।’

দুই দিনব্যাপী দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আইনুল ইসলাম।

গ্রামের অর্থনীতি বদলে গেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা আগে একবেলা ভাত খেতে পারত না, এখন দেখা যাচ্ছে প্রয়োজনে চারবেলাও খাচ্ছে। যেখানে হাট-বাজারের বাইরে কিছু পাওয়া যেত না, এখন সুপার মার্কেট হয়েছে। আমি অর্থনীবিদদের বলব—আপনারা চিন্তা করেন, গ্রামীণ অর্থনীতি যত বেশি মজবুত হচ্ছে আমাদের শিল্প কল-কারখানা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজার সৃষ্টি হচ্ছে, সেক্ষেত্রে রফতানিও আমাদের বাড়াতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ৬ তারিখে আমরা বাজেট দেব। ইনশাআল্লাহ বাজেট আমরা ঠিকমতো দিতে পারব এবং বাজেট বাস্তবায়নও করব। তবে আমরা যেহেতু যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার জন্য কিছুটা কৃচ্ছ্র করতে গিয়েছি, এ কৃচ্ছ্রের কারণে হয়তো জিডিপি গতবার যা ছিল তার থেকে কিছুটা কম হতে পারে। কিন্তু সেটাও আমরা পরে উত্তরণ ঘটাতে পারব, সে বিশ্বাস আমার আছে। সেভাবেই আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি।’ 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন