প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শেরেবাংলা নগরে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ছবি : বাসস

কৃষি গবেষণা ও উৎপাদনে সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এখন অন্তত বলতে পারি, মাছ-ভাতের অভাবটা নেই, ডাল-ভাতেরও অভাব নেই। তবে মানুষের চাহিদা এখন মাংস।’ রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠে গতকাল আয়োজিত প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম উদ্দিন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‌আমাদের আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, যেমন খালেদা জিয়া ঘোষণা দিল যে দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াবে। সেই ডাল-ভাত খাওয়াতেও কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিল। এরপর ২০০৭ সালে এল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ফখরুদ্দীন সাহেব প্রধান উপদেষ্টা, ইয়াজউদ্দিন রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান মঈন উদ্দিন। মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন আবার ঘোষণা দিলেন আলু খাওয়ার জন্য। হাজার পদের আলুর নানা রকমের তালিকা তৈরি করা হলো এবং তার আবার প্রদর্শনী হলো বেশ উন্নত হোটেলে। মানুষ ভাত পাচ্ছে না তাতে কী! আলু খাবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ আমাদের ডাল-ভাত খাওয়াতে চাইল, কেউ আমাদের আলু খাওয়াতে চাইল, মাছে-ভাতে বাঙালি আমরা; আমাদের মাছ-ভাত পেলেই তো যথেষ্ট। সেটাই তো আমরা চাই। সেটাই তো আমাদের লক্ষ্য। কাজেই আমরা সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছি। এখন অন্তত বলতে পারি, মাছ-ভাতের অভাবটা নেই, ডাল-ভাতেরও অভাব নেই। তবে মানুষের চাহিদা এখন মাংস। আরো বড় বড় মাছ, সবকিছু খাবে।’

বাংলাদেশ এখন মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এত খাল-বিল, নদী-নালার দেশ আমরা, আমাদের দেশের মানুষের কেন আমিষের কষ্ট হবে? ‌অনেক হারিয়ে যাওয়া দেশী মাছ গবেষকরা গবেষণা করে করে সেগুলো কিন্তু আজকে উৎপাদন করছে। আমরা আমাদের অনেক প্রায় বিলুপ্ত মাছগুলো আবার ফিরে পাচ্ছি। গবেষণা ছাড়া কোনো দেশ এগিয়ে যেতে পারে না, এটাই হলো বড় কথা। তাছাড়া মুরগির ক্ষেত্রেও গবেষণা করে করে বিভিন্ন ধরনের পাখি এখন উৎপাদন হচ্ছে। শুধু ডিমই না, মাংসও এখন মানুষ খেতে পাচ্ছে।’

সরকারপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‌৪০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি পূরণ করেও বাংলাদেশকে আমরা উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশে উন্নীত করি। পার্লামেন্টে যেদিন আমি ঘোষণা দিলাম যে আজ থেকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ সেদিন বিএনপি বিরোধী দলে, খালেদা জিয়া বিরোধী দলের চেয়ারে বসা। তার অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান উঠে দাঁড়িয়ে বলল, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না, তাহলে খাদ্য সাহায্য পাওয়া যাবে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘‌তাদের চিন্তাধারাটা ছিল, আমরা প্রতিনিয়ত অন্যের কাছে হাত পেতে চলব। অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকব আর ভিক্ষা চেয়ে খাবার এনে খাব। যেখানে জাতির পিতা বলে গেছেন, আমাদের মাটি আছে, সোনার মাটি। আমাদের ফসল আমরা ফলাব এবং আমরা তা প্রমাণ করেছি। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, ২০২৬ সাল থেকে তা শুরু হবে। এর মধ্যে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। একদিকে যেমন আমাদের গণমানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে আমিষ সরবরাহের জন্য আমাদের হাঁস, মুরগি, পশু-পাখি যা কিছু দরকার তা আমরাই তৈরি করব। আমাদের প্রথম লক্ষ্য হলো খাদ্যনিরাপত্তা দেয়া। দ্বিতীয় হলো পুষ্টির নিশ্চয়তা দেয়া। এখন আমরা সে পদক্ষেপই হাতে নিয়েছি।’

সমুদ্রসম্পদ আহরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‌আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। আজকে এ সমুদ্রসম্পদ কাজে লাগানোর জন্য আমরা সুনীল অর্থনীতি ঘোষণা দিয়েছি। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো গভীর সমুদ্রের সম্পদ এখনো আমরা আহরণ করতে পারিনি। আসলে উদ্যোক্তাও পাওয়া যাচ্ছে না, এটা হলো বাস্তবতা। তবে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে আমরা এখন কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ উৎপাদন আরো বাড়াতে চাই।’

প্রোটিনের স্থানীয় চাহিদা মেটাতে ডেইরি ও পোলট্রি খাতকে আরো সমৃদ্ধ করতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। অন্যদের মধ্যে দেশের ডেইরি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি ইমরান হোসেন ও পোল্ট্রি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান। উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী ঘুরে ঘুরে প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীরা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ঘুরতে পারবে। সারা দেশের পোল্ট্রি ও ডেইরি খামারিরা তাদের গবাদিপশু-পাখি প্রদর্শনের জন্য যোগ দিয়েছেন। দুই দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী শেষ হবে আজ। একই সময়ে ৬৪ জেলার ৪৬৬টি উপজেলায় এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন