মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান আইএমএফের

বণিক বার্তা ডেস্ক

আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়েরে অলিভিয়ার গৌরিঞ্চাস ছবি: এপি

যুদ্ধ, মহামারী ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে কয়েক বছর ধরেই সংকটের মধ্যে রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। এর মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি। অস্বাভাবিক বেড়ে যায় ভোক্তা ব্যয়। মন্দার কবলে পড়ে কিছু বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। তবে এখন স্থিতিশীলতায় ফিরতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি। এ অবস্থায় উন্নত দেশগুলোকে কঠোর মুদ্রানীতি গ্রহণ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সম্প্রতি সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়েরে অলিভিয়ার গৌরিঞ্চাস এ আহ্বান জানান। খবর দ্য ন্যাশনাল নিউজ।

পিয়েরে গৌরিঞ্চাস বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনীতি বর্তমানে দারুণ স্থিতিশীল। প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে এবং মূল্যস্ফীতিও কমতে শুরু করেছে। তবে সামনে আরো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।’

২০২৩ সালের উল্লেখযোগ্য স্থিতিশীল অবস্থার পর চলতি বছরের জন্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করেছে আইএমএফ। সংস্থাটির নতুন পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৪ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ।

যদিও ঐতিহাসিক মানদণ্ডের তুলনায় প্রবৃদ্ধির এ হার এখনো কম। কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছতে না পারার কারণ হিসেবে বিশ্বব্যাপী ঋণসংক্রান্ত ব্যয় বৃদ্ধি, কভিড-১৯ মহামারীর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ভূরাজনৈতিক বিভক্তির মতো সংকটকে দায়ী করেছে আইএমএফ।

সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২২ সালে মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করার পর তা নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাপকভাবে সুদহার বাড়াতে থাকে। ক্রমবর্ধমান সুদহার সত্ত্বেও বৈশ্বিক অর্থনীতি অনেকটাই স্থিতিশীল ছিল। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাপী হেডলাইন মূল্যস্ফীতি ২০২৩ সালের গড় ৬ দশমিক ৮ শতাংশের পর চলতি বছর ৫ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। আইএমএফ বলছে, শিগগিরই মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করা হবে।

বৈশ্বিক অর্থনীতি নিরাপদ অবস্থায় ফিরে আসার বিষয়টি সামনে আসায় বহুপক্ষীয় ঋণদাতা সংস্থাটির পরামর্শ, দেশগুলোর উচিত মূল্যস্ফীতি কমানোর দিকে অগ্রাধিকার দেয়া।

কয়েকটি উন্নত দেশের সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতির তথ্য তুলে ধরে পিয়েরে গৌরিঞ্চাস বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি হ্রাসের এ প্রবণতা উৎসাহজনক। তবে আমরা এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছতে পারিনি।’

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক তথ্য বলছে, ফেডারেল রিজার্ভের নেতৃত্বে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেশটির লড়াই স্থবির হয়ে আসতে পারে। এছাড়া জিসিসিভুক্ত দেশগুলোও বছরের শেষ পর্যন্ত তাদের বিধিনিষেধমূলক নীতি থেকে পিছু হটতে পারে।

ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ড চলতি বছর জুনের মধ্যে তাদের কঠোর নীতি থেকে সরে আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আইএমএফের প্রত্যাশা, গত মার্চের পূর্বাভাস অনুসারে, ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার এ বছর ৫ দশমিক ৪ থেকে ৪ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারে। এছাড়া ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ৫ দশমিক ৩ থেকে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে এবং ইসিবি ৪ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে কমিয়ে আনবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে তাদের আসন্ন সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ হিসেবে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, খুব বেশি সময় সুদহার ধরে রাখা এবং খুব তাড়াতাড়ি কমানো উভয়ই অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন