সব মাধ্যমেই কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি

ছবি: সোহেল মণ্ডল

বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় ‘মায়ার জঞ্জাল’ সিনেমায় অভিনয় করে আলোচিত হয়েছেন তরুণ অভিনেতা সোহেল মণ্ডল। সম্প্রতি পেয়েছেন ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস বাংলা ২০২৪-এর সেরা নবাগত পুরস্কার। ‘তাকদীর’, ‘ঊনলৌকিক’, ‘বলি’সহ বেশ কয়েকটি সিরিজে অভিনয় করে দর্শকমহলে পরিচিতি পাওয়া এ অভিনয়শিল্পী বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাকেরা তাসনীম ইরা

দেশের বাইরের একটা পুরস্কার পেলেন। কেমন লাগছে?

পুরস্কার জিনিসটাই খুব আনন্দের। গিফট পাওয়ার মতো আরকি অনেকটা। তবে পুরস্কার পাওয়ার ঘটনাটা খুবই অপ্রত্যাশিত ছিল। মানে আমি ধারণাই করতে পারিনি যে সেরা পার্শ্ব চরিত্রে মনোনয়ন পাব বা নবাগত অভিনেতার পুরস্কার পাব। তবুও পুরস্কারটা পেলাম। তাই বিষয়টা খুব আনন্দের ও ভীষণ উৎসাহব্যঞ্জক। আর যাদের সঙ্গে আমি মনোনয়ন পেয়েছিলাম সে নমিনেশন পাওয়াটাও এক ধরনের পুরস্কারের মতো ছিল। সবকিছু মিলিয়ে খুব ভালো একটা অনুভূতি কাজ করছে। 

পুরস্কার মানে তো অভিনেতার কাজের একটা স্বীকৃতি। পুরস্কার নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

পুরস্কারকে আমি ঠিক ততটুকুই গুরুত্ব দিই যতটুকু উৎসাহের জন্য লাগে। আপনি যে কাজ করছেন সেটা আপনি ঠিকঠাক করছেন কিনা তার একটা স্বীকৃতি হয়তো পুরস্কার। পুরস্কারকে আমি এতটুকুই গুরুত্ব দিই। এর বাইরে পুরস্কার না পাওয়ার মানে যে কোনো কাজ ভালো হয়নি বা কাজটা মন্দ হয়েছে, এমন নয় কিন্তু। অন্তত আমি এভাবে চিন্তা করতে চাই না। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমরা যখন একটা কাজ করি, তখন এর গল্প, নির্মাণ, অভিনয় যদি সততার সঙ্গে করতে পারি, সেটাই আসলে মূল পুরস্কার হয়ে দাঁড়ায়। বাকি যে পুরস্কারগুলো আছে সেগুলো আসলে অলংকারের মতো। সেগুলো পেলে ভালো লাগে, উৎসাহ পাই। 

মায়ার জঞ্জালে অভিনয় করার সময়কার কোনো বিশেষ স্মৃতি বা ঘটনা জানতে চাই।

বিশেষ স্মৃতি হচ্ছে কলকাতা ইন্ডাস্ট্রিতে একটা শুট করেছিলাম। সেটা তো একটা বিশেষ স্মৃতিই হবে। কারণ ২০০৭ সালের দিকে আমি যখন থিয়েটার করা শুরু করি, তখন প্রথমবার একাডেমির মঞ্চে পারফর্ম করেছিলাম। ‘‌প্রাগৈতিহাসিক’ নামের নাগরিক নাট্যাঙ্গনের একটা প্রডাকশন ছিল। কলকাতায় গিয়ে সেটাই আমার প্রথম কাজ ছিল। এরপর একটা লম্বা সময় পাড়ি দিয়ে ভিজুয়াল মিডিয়ামের শুটের জন্য আবার কলকাতায় গেলাম। হয়তো ২০০৭ সালে এমনটা হতেও পারে তা মাথায়ই ছিল না বা এ রকম একটা জায়গায় পৌঁছাব একদিন সেটাও আমার ধারণা ছিল না। তো কলকাতা ইন্ডাস্ট্রিতে যাওয়া, সেখানকার মানুষের সঙ্গে ওঠা-বসা, তাদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নেয়া, এগুলোই আমার কাছে ভালো স্মৃতি হয়ে আছে। সেই সঙ্গে ঋত্বিক চক্রবর্তী, এমনকি আমার খুব প্রিয় অভিনেত্রী অপি করিমের সঙ্গেও আমার সেখানেই মূলত পরিচয় ঘটে। এটা একটা আনন্দদায়ক ঘটনা ছিল। আর আমার যে পরিচালক ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরীকে নিয়ে যদি বলি, তাহলে একবাক্যে বলব, তার সঙ্গে পরিচয়ের ঘটনাটা আমার অভিনয় জীবনের জন্য একটা বড় স্মৃতি হয়ে থাকবে। 

আপনি তো মঞ্চে অভিনয় করেছেন। মঞ্চ আর ক্যামেরার সামনে অভিনয়ে পার্থক্য কী দেখেন? কোনটা আপনি পছন্দ করেন?

অভিনেতার তো আসলে কাজটাই হচ্ছে অভিনয় করা। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যম একজন অভিনেতার জন্য কোনো পার্থক্য বয়ে আনে না। কারিগরি কিছু পার্থক্য ছাড়া অভিনয়ের যে কাজ, সেটা তো সব মাধ্যমে একই। প্রস্তুতি থেকে শুরু করে চরিত্র রূপায়ণ পর্যন্ত যা যা আছে তা সব মাধ্যমে একই রকম। পার্থক্যটা কেবল এক জায়গায়, ক্যামেরার সামনে অভিনয় করা আর লাইভ দর্শকের সামনে অভিনয় করা। কেউ যদি অভিনয়টাকেই ভালোবাসেন, তাহলে যেকোনো জায়গায়ই তার অভিনয় করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করার কথা। আমার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই। একজন পেশাদার শিল্পী হিসেবে আমি সব মাধ্যমেই কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। 

মঞ্চে আগের মতো সময় দেয়াটা কি এখন সম্ভব হয়? 

সত্যি কথা বলতে মঞ্চে খুব একটা সময় দিতে পারছি না। একটা সময় আমি থিয়েটারেই নিয়মিত কাজ করতাম। এখন যেহেতু ভিজুয়াল মাধ্যমে ব্যস্ততা বেড়েছে, তাই থিয়েটারে একটু কম সময় দেয়া হচ্ছে। থিয়েটারে আসলে পূর্ণাঙ্গ সময় দেয়ার প্রয়োজন হয়। থিয়েটার একটা লাইফস্টাইল। যেহেতু আমি এখন সেটা করতে পারছি না, তাই একটু অনিয়মিত হয়ে গেছি। 

ঈদে আপনাকে নাটকে বা ওটিটিতে দেখা যাবে কি?

ওটিটিতে এবার ঈদে একটাই কাজ করেছি। দীপ্ত টেলিতে আসার কথা, আলোক হাসানের ত্রিভুজ নামের একটি ওয়েব সিরিজ। এবার ঈদে আমাকে টেলিভিশনেই বেশি দেখা যাবে। প্রায় ছয়-সাতটা নাটক ঈদে সম্প্রচার হওয়ার কথা। এর মধ্যে একটি হচ্ছে জামাল মল্লিকের পরিচালনায় শাড়িওয়ালা ‘‌ক্লদিং সেন্টার’। নাটকটি মাছরাঙা টেলিভিশনে প্রচার হবে। আরেকটি অনন্য ইমামের নাটক ‘‌অভাব’। এছাড়া আরো বেশকিছু কাজ আছে, যেগুলো সম্প্রচারের সময় শিগগির জানা যাবে। 

নতুন কোনো সিনেমার খবর দর্শককে জানাবেন?

নতুন সিনেমা আসছে। একটা হচ্ছে ‘‌শ্যামার কাব্য’। সিনেমাটি নির্মাণ করছেন বদরুল আনাম সৌদ। শিগশিরই এর মুক্তির তারিখ ঘোষণা করা হবে। আরেকটা মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের ‘‌বনলতা সেন’। এর পোস্ট প্রডাকশনের কাজ চলছে। এ বছরের শেষ নাগাদ এটি মুক্তি পাবে। 

ঈদের ছুটি কীভাবে কাটাবেন? 

ঈদ আমি সবসময়ই বাড়িতে কাটাই। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করি। বছরের পুরোটা সময়ই যেহেতু বাড়ির বাইরে থাকা হয়, বাবা-মা, দিদা আশা করেন একসঙ্গে ঈদটা করার। তাই আমিও ঈদে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করি না। ঈদের পুরোটা সময় পরিবারের সঙ্গেই কাটাব। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন