অভিমত

হাওরাঞ্চল কৃষি: সম্ভাবনা অবারিত, নিয়ত উপেক্ষিত

ড. মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

ছবি : বণিক বার্তা

হাওরাঞ্চল, বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিশাল বিস্তীর্ণ জলরাশি। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদী বিধৌত নিম্নাঞ্চল নিয়ে এ জলরাশির অবস্থান। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অববাহিকা তথা গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার (জিবিএম) মেঘনা অংশের অন্তর্গত, যার মধ্য দিয়ে বছরে ১ লাখ ৬২ হাজার ৬১৯ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি বঙ্গোপসাগরে বহিঃপ্রবাহ হয় এবং এ পানির প্রায় অর্ধেক বাংলাদেশে সৃষ্ট। অধুনা প্রণীত বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-এর অন্যতম হাইড্রোলজিক্যাল হটস্পট। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি জেলা—নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়ে এ বিশাল-বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা গঠিত। সাত জেলার ৭৫টি উপজেলায় ৬১টি হাওর অবস্থিত। কালনী-কুশিয়ারা ও সুরমা-বউলাই নদী ব্যবস্থায় আরো ছোট ছোট নদী, স্রোত এবং সেচ-খাল, মৌসুমি প্লাবিত চাষের সমভূমির এক বিশাল এলাকা এবং শত শত হাওর ও বিলসহ জলাভূমির আবাসস্থলের একটি বিস্তৃত মোজাইক। এ অঞ্চলে প্রায় ৪০০টি হাওর ও বিল রয়েছে, যার আয়তন কয়েক হেক্টর থেকে কয়েক হাজার হেক্টর পর্যন্ত। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য, বাস্তুসংস্থান, ভূমিবিন্যাস, ভূমির ব্যবহার, ফসল উৎপাদন প্রক্রিয়া, জীবন সংস্কৃতি প্রভৃতি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে একটু বিশেষায়িত। পানির বৃহত্তম আধারের অঞ্চলটি সংগত কারণেই নানাবিধ স্বাদুপানির মাছ ও অসংখ্য জলজ প্রাণীর অন্যতম আশ্রম। তবে এটাও সবার অজানা নয় যে প্রাণী ছাড়াও বৈচিত্র্যময় জলজ উদ্ভিদও কিন্তু কম নয়। নীল কার্বন হলো জলজ অংশে সংবন্ধিত জৈব-কার্বন এবং হাওর হলো নীল-কার্বন সংবন্ধন ও সংরক্ষণের বৃহৎ আবাসস্থল। বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্তানুযায়ী, বৈশ্বিক উষ্ণতা সৃষ্টিকারী কার্বনের জলজ অংশে সংবন্ধন ও ক্ষমতা স্থলজ অংশের ১.৫-৫ গুণ বেশি। অষ্টাদশ শতকেও পুরো এলাকা ছিল প্রাকৃতিক, কৃষির তেমন বিকাশ ঘটেনি। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জলজ উদ্ভিদ ধ্বংস করে আস্তে আস্তে ফসল আবাদ বাড়তে থাকে। ধানের সংরক্ষণকাল দীর্ঘমেয়াদি, ফলে হাওরের গৃহস্থ ঘরে ধান সংরক্ষণ আছে মানে খাদ্যনিরাপত্তা বিদ্যমান। ভাত খেতে মাছ, মাংস, স্বল্প তরিতরকারি স্থানীয়ভাবেই পাওয়া যেত, সে পরিপ্রেক্ষিতে হাওর ছিল ব্যতিক্রম ছাড়া স্বয়ং সম্পূর্ণ এলাকা এবং সংগত কারণেই ধান হয়ে ওঠে প্রধান ফসল, তবে জাত ছিল স্থানীয়। হাওরাঞ্চলে একসময় প্রায় ২৩০ প্রজাতির বোরো ধান চাষ হতো। এসব প্রজাতির মধ্যে ছিল টেপি, বোরো, রাতা, শাইল, লাখাইয়া, মুরালি, চেংড়ি, কালিজিরা, সমুদ্রফেনা, কাশিয়াবিন্নি, দুধবাকি, দুধসাগর, লাটলী, মারতি, তুলশীমালা, আখনিশাইল, গাছমালা, খৈয়াবোরো, দেউড়ি, কন্যাশাইল, বিচিবোরো, লোলাটেপী, পশুশাইল, হাসেরডিম, গুয়াশাইল, বেতি, ময়নাশাইল, গদালাকি, বিরই, খিলই, ছিরমইন, আগুনি, গুলটিহি, ল্যাটা, জগলীবোরোর প্রভৃতি। আধুনিক ধান চাষ শুরু হয় স্বাধীনতার পরপরই। অধুনা দেশের হাওরাঞ্চল ধানভিত্তিক খাদ্যনিরাপত্তার এ দেশে প্রায় ২০ ভাগ ধান ফসলের জোগানদাতা এবং বলা হয় ধানই একমাত্র ফসল। বিবিএসের তথ্যসূত্রে হাওর এলাকায় আরো অনেক ফসলের আবাদ হচ্ছে এবং এসব ফসল যেমন সরিষা, বেগুন, টমেটো, মুলা, মিষ্টিকুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, কচু, ওলকপি, মরিচ, বাদাম, মিষ্টি আলু, ডালজাতীয় ও মসলাজাতীয় প্রভৃতি ফসল দেশের মোট উৎপাদনের ৩-৩০ শতাংশ জোগানদাতা। কারণ হাওরের বৈশিষ্ট্য হলো বর্ষাকালে এর বিস্তৃত জলরাশি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে শুকিয়ে যেতে থাকে এবং দিগন্ত বিস্তৃত শ্যামল প্রান্তরে রূপ নেয়, সেখানে কৃষকরা ভূমির বন্ধুরতা ভেদে নানান ধরনের ফসলের চাষ করে, আর নিম্ন ভূমি যেখানে পানি জমে থাকে তাতে ধানের চাষ করে। যদিও খাদ্য অর্থনীতির কারণে মাঝারি নিচু জমিতেও ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার করে ধান চাষ হচ্ছে। ফসল-মৎস্য-প্রাণিসম্পদ মিলে হাওরাঞ্চলে একটি বিশেষ কৃষি ব্যবস্থা বিদ্যমান, যা বদ্বীপের অন্য যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে ভিন্ন ও বিশেষায়িত। তবে অঞ্চলের ফসল, মাছ ও প্রাণী খাদ্য হিসেবে নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ, কারণ প্রতি বছর পানির মাধ্যমে সব অপদ্রব্য ধুয়েমুছে যায় এবং পাহাড়ি পলির মাধ্যমে জমিতে নানান ধরনের অনুপুষ্টি যুক্ত হয়, যা গাছের মাধ্যমে খাদ্যচক্রে যুক্ত হয়ে খাদ্যকে সমৃদ্ধ করে।

প্রকৃতিগত উচ্চ বৃষ্টিপাত হাওরাঞ্চলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং এ পানিকে অসংখ্য নদী, নালা, খাল, বিল ও বিস্তৃত অঞ্চল ধারণ ও প্রবাহ করতে পারে। কিন্তু এত সম্ভাবনার এ অঞ্চলে অনাকাঙ্ক্ষিত আকস্মিক বন্যা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে নিম্ন তাপমাত্রার চাপ এবং উজানে বাধার কারণে পলি সরবরাহ হ্রাস, অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জমি ভরাট, ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন, ফসল চাষে রাসায়নিকের অপরিণাম ব্যবহার ইত্যাদি মনুষ্যসৃষ্ট কারণে জমির অবনমন সমগ্র কৃষি ব্যবস্থাকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। আকস্মিক বন্যা সমস্যা নিরসনে প্রতি বছর সরকারি উদ্যোগ থাকে, কিন্তু ব্যবস্থাপনা অদক্ষতার কারণে অর্থ অপচয় হয়, উদ্যোগসমূহ ভেস্তে যায়। যা হোক, জলমগ্ন কৃষি, মৎস্যসম্পদ, প্রাণিসম্পদ ঘিরে নিম্নাঞ্চল অধ্যুষিত এলাকাটি প্রাচুর্যপূর্ণ কিন্তু একদম সনাতন তার কৃষি ব্যবস্থা। হাওরে কৃষি ব্যবস্থার যতটুকু উন্নয়ন প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা মূলত পরামর্শমূলক এবং কিছু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে। তবে প্রায়ই অভিযোগ থাকে যে এতে স্থানীয় চাহিদা উপেক্ষিত, কারণ প্রকল্প প্রণয়নে কখনো স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করা হয় না এবং পাশাপাশি নিবিড় গবেষণা উপেক্ষিত থেকেছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে হাওরের কৃষিজমিতে ৯টি কৃষি পরিবেশ অঞ্চলের সমাহার রয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং তার জীববৈচিত্র্যেও ভিন্নতা আছে। এখানে জন্মানো উচ্চ পুষ্টিসম্পন্ন শালুক, শাপলা, ভেট, কেউরালীসহ নানাবিদ জলজ সবজি, যাদের ব্যবহার সম্পূর্ণ অজানা রয়েছে। আবার নিচু জমি, নদীর পাড়, চট্টান জায়গায় সরিষা, বেগুন, টমেটো, মুলা, মিষ্টিকুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, কচু, ওলকপি, মরিচ, বাদাম, মিষ্টিআলু, ডালজাতীয় ও মসলা ফসল, পেঁয়াজ, ধনিয়া প্রভৃতি চাষ হয় ব্যাপকভাবে, কিন্তু জাত ও উৎপাদন ব্যবস্থা পুরোপুরি গতানুগতিক; যদিও এলাকার প্রায় ৭০-৯০ ভাগ জমিই কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়। হাওরে নানবিদ কচু জন্মায় এবং এগুলোর পুষ্টিগুণ অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি, বিশেষ করে আঁশের গুণাগুণ। বিবিএস তথ্যসূত্রে জানা যায় যে এসব জমির ফলন দেশের গড় ফলনের চেয়ে ২০-৩০ ভাগ কম, অথচ জমির উর্বরতার সূচক জৈব পদার্থ দেশের অন্য জেলার চেয়ে বেশি। হাওরাঞ্চলে কৃষির উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ খুবই সামান্য, সামাজিক বিনিয়োগ বিচ্ছিন্ন, আর ব্যক্তি বিনিয়োগ যা আছে তা ফসল হারানোর আশঙ্কায় যৎসামান্য বা অনীহা, সে কারণে দেশের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ কিন্তু হাওরাঞ্চলের প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ। বর্ষায় পানির আধিক্যের কারণে যেমন বিশেষ নামে ডাকা হয়, আবার সেখানে শুষ্ক মৌসুমে পানির ঘাটতিও দেখা দেয়, এতে গতানুগতিক ফসল উৎপাদন প্রায় বাধাগ্রস্ত হয়। তাছাড়া আকস্মিক বন্যা হাওরাঞ্চলের একটি নৈমিত্তিক ঘটনা, এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বর্তমানে বৈশ্বিক জলবায়ু কৃষিকেও সংকটাপন্ন করে তুলছে। জীবিকা ও উন্নত জীবনযাপনের জন্য মানুষের শহরমুখিতা ও স্থানচ্যুতি এখন নিত্যদিনের ঘটনা। সেবা প্রতিষ্ঠান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্যতীত এখানে আর কোনো প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি তেমন দৃশ্যমান নয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্যে অন্য এলাকার তুলনায় অনেক পিছিয়ে। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার পাশাপাশি অনুপুষ্টির অভাব বিশেষ করে শিশুদের বেলায় নিত্যসঙ্গী। খাদ্যাভ্যাসে তারা এত বেশি শহরানুসারী যে স্থানীয় পুষ্টিকর খাবার বাদ দিয়ে অপুষ্টিকর খাবারে ঝোঁক বেশি। প্রায়ই দেখা যায় মানুষ পুষ্টিকর মাছ বিক্রি করে ব্রয়লার কিনে বা হাঁসের ডিম বিক্রি করে লেয়ার ডিম কিনে খায়। মৌসুমভিত্তিক পুষ্টিকর খাদ্যের জোগান এ এলাকায় অনেক কম। শীতকালে নানান ধরনের খাবার থাকলেও বর্ষা মৌসুমে ফসলভিত্তিক বিশেষ করে সবজি, ফল খাবারের ঘাটতি প্রকট। 

বাংলাদেশের অর্থনীতির ও সংস্কৃতির প্রাণ কৃষি। কৃষি খাত বিগত দুই দশকে অন্য খাতগুলোকে ছাপিয়ে অনন্য এক সাফল্যগাথা তৈরি করেছে। কেভিড-১৯-এ যার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া গেছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, শিল্পায়ন ও নগরায়ণের চাপ মোকাবেলায় খাদ্যনিরাপত্তার স্থিতিশীলতা অর্জনে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধির গতি ও পরিমাণ বাড়ানো অত্যাবশ্যক। দেশে একটি বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে হাওরাঞ্চলকে বিশেষত এর কৃষির প্রায়োগিক উন্নতিকে গুরুত্বের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মূলত একটি অভিযোজনভিত্তিক কারিগরি ও অর্থনৈতিক মহাপরিকল্পনা, যা প্রণয়নের সময় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, ভূমির ব্যবহার, প্রতিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং এদের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে বিবেচনা করা হয়েছে, এর মূল লক্ষ্য উন্নত ও সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশের সব মানুষের জীবনমান সচল রাখা। কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় স্থানিক গবেষণা ও স্থায়িত্বশীল প্রয়োগ করাই হাওরের জীবনমান উন্নয়নের বাস্তবসম্মত সমাধান। হাওরের উন্নয়ন পরিকল্পনায় হাওরবাসীকেই প্রথম সম্পৃক্ত করা দরকার। তারপর এ অঞ্চলের মূল সমস্যা আকস্মিক বন্যা মোকাবেলায় কার্যকর পন্থা দরকার, যেহেতেু পানির পরিমাণ জানা আছে এখন তার উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ দরকার, সে ক্ষেত্রে প্রথম দরকার নদীর পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রবাহ সচল রাখা। পাশাপাশি আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা ফসলহানি কমাবে। ফসলের জাত উন্নয়নে স্থানীয় জাতের উচ্চ ফলনশীল সংক্ষরণ প্রবর্তন করা সমীচীন। তা না হলে ধানের উচ্চ ফলনশীল ব্রি ধান ২৮ ও ব্রি ধান ২৯-এর অবস্থা হবে। হাওরে এ দুটো আধুনিক জাত ব্যাপক চাষ হচ্ছে অথচ বারবার প্রমাণ পাওয়া গেছে এগুলোর ফলন-সময় স্থানীয় জাতের তুলনায় বেশি, কিন্তু হাওরাঞ্চলের আকস্মিক বন্যা এড়াতে পারছে না। তাই ফসলের নিবিড়তা বাড়াতে বিভিন্ন স্থানীয় জাতের উন্নত সংস্করণ প্রবর্তন করা প্রয়োজন। আবার শুষ্ক মৌসুমে পানির দেশে পানির আকাল হয়, সে ক্ষেত্রে মাঝারি উঁচু জমিতে ধান ব্যতীত অন্য ফসলের চাষ বাড়ানো দরকার, এতে পানির বিচারিক ব্যবহার বাড়বে, ফসলের বৈচিত্র্য যেমন বাড়বে, পাশাপাশি পুষ্টিনিরাপত্তা উন্নত হবে। জনমানুষের পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নতির জন্য পুষ্টিকর খাবারের সহজপ্রাপ্যতা দরকার, পাশাপাশি সারা বছর কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার, যা কৃষি খামারভিত্তিক হওয়া সবচেয়ে উপযোগী। ফলে ধান ব্যতীত অন্যান্য যেসব ফসলে পানি কম লাগে সেগুলো নির্বাচন ও বিস্তার করা যেমন জরুরি, তেমনি বর্তমান ফসল বিন্যাসের বৈচিত্র্য ও নিবিড়ায়ন বাড়ানো দরকার। তাছাড়া বিরাট জলরাশিতে মাছ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাঁস চাষ একটি লাভজনক ও জনপ্রিয় হচ্ছে। হাঁস পালনকে কীভাবে উদ্যোক্তাবান্ধব করা যায় তার পদক্ষেপ নেয়া দরকার। হাওরাঞ্চলে মুক্তার চাষ করা যেতে পারে এবং ঝিনুক থেকে নানা ধরনের ন্যানুপাউডার তৈরি করা, যা থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। চ্যাপা শুঁটকি একটি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার। হাওরাঞ্চল হলো এর সূতিকাগার, এটিকে সারা পৃথিবীকে ব্র্যান্ডিং করা যেতে পারে। এভাবে প্রতিটি প্রাকৃতিক সম্পদের প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান বের করে তার মূল্য সংযোজন পন্থা বের করা দরকার। তাই ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের জন্য জলবায়ুর আগাম তথ্য, জনমানুষের জীবনমানের উন্নয়নের পাশাপাশি হাওরাঞ্চল উপযোগী নতুন নতুন ফসল, জাত, প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ হবে এবং এ বিশেষ হাইড্রোলজিক্যাল হটস্পটটির সম্ভাব্যতার উপযুক্ত সমাধান হবে।

ড. মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন: গবেষক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন