বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে প্রাথমিকভাবে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের লক্ষ্যে খসড়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন বিনিময় করেছে বাংলাদেশ ও চীন। গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার উল্লেখযোগ্য অর্জন। এ অর্জন বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা তৈরির পাশাপাশি বেশকিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করবে। এর মধ্যে ২০২৬ সালের পরে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে পণ্য রফতানির সময় শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা হারানো এবং মূল্য সংযোজনের হার অন্যতম। এর ফলে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যকে ওইসব দেশের বাজারে প্রবেশের সময় সাধারণভাবে আরোপিত শুল্কের সম্মুখীন হতে হবে। ফলে ওইসব দেশে বাংলাদেশের রফতানি বাজার সংকোচনের আশঙ্কা রয়েছে।’
কবে নাগাদ এফটিএ সই হতে পারে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘এখনো চুক্তি হয়নি। আলোচনা শুরু হবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন করতে পারলে ভালো। যদি না হয় আমাদের আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। আলোচনা শেষ না হলে ততদিন যেন আমাদের এলডিসি হিসেবে এ সুবিধাগুলো তারা দেয় সে অনুরোধ করব।’
চুক্তির ফলে বাংলাদেশ কী ধরনের সুবিধা পাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘আমাদের প্রধান রফতানি পণ্য গার্মেন্টের বাইরে আরো কিছু পণ্য আছে। রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানিয়েছেন আম ও পাটজাত পণ্যের অনেক সম্ভাবনা আছে। তারপর হস্তশিল্পের বিষয় আছে। এছাড়া আরো পণ্য আছে। আমরা এরই মধ্যে চামড়া রফতানি করছি। আমরা মানসম্মত চামড়াজাত পণ্য রফতানি করতে পারি। চীনের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি। সেখানে আমরা বৈচিত্র্যময় পণ্য নিয়ে যেতে পারি। চুক্তি হয়ে গেলে বিনিয়োগ বাড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।’
এফটিএ সই হওয়ার পর বিনিয়োগ আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে চীনের বড় বিনিয়োগ রয়েছে। এখন চীন বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহৎ বিনিয়োগকারী দেশ। এফটিএ সই হওয়ার পর বিনিয়োগ আরো বাড়বে। বাংলাদেশ চীনে আম, কাঁঠাল, আলু, পাটপণ্য ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করতে পারে। বর্তমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এফটিএ করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুসারে বাংলাদেশের রফতানি বাজার সংরক্ষণ এবং সম্প্রসারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশ ও ট্রেড ব্লকের সঙ্গে আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়, পণ্য ছাড়াও সেবা এবং বিনিয়োগ খাতেও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের ১৪-১৫ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মধ্যে এফটিএ স্বাক্ষরের বিষয়ে যৌথ সম্ভাব্যতা যাচাইসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়। এটি বাস্তবায়নের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে উভয় দেশের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা সংক্রান্ত দল (ওয়ার্কিং গ্রুপ) গঠন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২০-২১ জুন চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে বাংলাদেশ-চীন সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্যে যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা সংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা সংক্রান্ত দল খসড়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রণয়ন করে। পরবর্তী সময়ে নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এ বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি। পরবর্তী সময়ে উভয় দেশ যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনের নিজ নিজ অংশ প্রস্তুত করে।