ডুন টুর সিনেমাটোগ্রাফি

অ্যাকশন দৃশ্যে ব্যবহৃত হয়েছিল ইনফ্রারেড লাইট

ফিচার ডেস্ক

অ্যাকশন দৃশ্যে টিমোথি শ্যালামে ও অস্টিন বাটলার ছবি: এন্টারটেইনমেন্ট উইকলি

মুক্তির পরই বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিল দেনি ভিলেনোভের ‘‌ডুন টু’। সেই সঙ্গে পেয়েছে দর্শকের প্রশংসা। সমালোচকরাও সিনেমাটিকে এগিয়ে রেখেছেন অনেক দিক থেকে। এর মধ্যে সিনেমাটোগ্রাফি অন্যতম। প্রথম পর্বের মতোই এবারো প্রশংসায় ভেসেছে দৃশ্যায়ন। পুরো সিনেমাকেই একটি ভিজুয়াল মাস্টারপিস হিসেবে দেখা হচ্ছে। একটি সিকোয়েন্স বিশেষ করে মনোযোগ টেনেছে। অ্যাকশন দৃশ্যের শেষ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ফেইড রাউঠার (অস্টিন বাটলারের) উদযাপন ছিল অতুলনীয়। আর এখানেই ভিলেনোভ ব্যবহার করেছেন বিশেষ প্রযুক্তি। ইনফ্রারেড লাইট (অবলোহিত রশ্মি) ব্যবহার করেছেন তিনি।

সিনেমা শুরুর দিকেই দেখা যায় অ্যাকশন দৃশ্যটি। সেখানে ব্যারন ভ্লাদিমির হারকোনেন ও লেডি মার্গোট ফেনরিংও সবার সঙ্গে বসে উপভোগ করেন প্রতিযোগিতা। পুরো বিষয়টি ভিলেনোভ যেভাবে কল্পনায় সাজিয়েছিলেন, তাকে দৃশ্যমান রূপ দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে ইনফ্রারেড প্রযুক্তি। বিষয়টি সহজ ছিল না, কিন্তু তা সফল করেছিলেন সিনেমাটোগ্রাফার গ্রেগ ফ্রেজার। কেননা ইনফ্রারেড প্রযুক্তির ব্যবহার আগেও করেছেন ফ্রেজার। ২০১২ সালের ‘জিরো ডার্ক থার্টি’ ও ২০১৬ সালের ‘রোগ ওয়ান’-এর জন্যও প্রযুক্তিটির ব্যবহার করেছেন। ফলে ডুন টুর প্রসঙ্গে তিনি ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যবহৃত নিরাপত্তা ক্যামেরায় (সিসিটিভি) সাধারণত অবলোহিত রশ্মিই ব্যবহার করা হয়, যদিও কেউ দেখতে পায় না। ঠিক এ কারণেই আমার কাছে ইনফ্রারেড প্রাধান্য পেয়েছে। চোখে দেখতে না পারলেও ক্যামেরায় দেখা যায়, বিষয়টি চমৎকার।’

ভিলেনোভ তার সিনেমায় গিয়েদি প্রাইমকে অন্য যেকোনো গ্রহের চেয়ে পৃথকভাবে চিত্রিত করতে চেয়েছিলেন। বালির মধ্যে অ্যাকশন দৃশ্য করাটা প্রথমেই নাকচ করা হয়েছিল। কারণ সেক্ষেত্রে ঠিক আরাকিসের মতো দেখা যাবে। বিষয়টিকে ভিন্ন হিসেবে হাজির করতেই আসে সাদা-কালো করার চিন্তা। বিষয়টি ফ্রেজারের মাথায় ছিল। তিনি আরো একধাপ এগিয়ে নেন। তিনিই তখন ইনফ্রারেড প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তাব রাখেন। কৌশল দেখানোর জন্য ব্যবহার করেন রজার ইউয়ানকে। তার কোনো চুল ছিল না। দেনি দেখলেন আর উচ্ছ্বাসের সঙ্গে সম্মতি দিলেন। ভিলেনোভের স্বীকৃতি পাওয়ার পর সিকোয়েন্সগুলো শট করা হয় এলেক্সা এলএফ ক্যামেরায়, যাকে কিছুটা এদিক-ওদিক করে ইনফ্রারেড ক্যামেরায় পরিণত করা হয়েছিল। অর্থাৎ ক্যামেরার ভেতর দিয়ে দেখা সবকিছুই মূলত ইনফ্রারেড। আর এভাবেই তৈরি হয়ে গেল নতুন দুনিয়া। 

অবশ্য ফ্রেজারের দেয়া সমাধানের মধ্য দিয়ে কস্টিউম ডিজাইনার ওয়েস্টের জন্য তৈরি হয়েছিল নতুন জটিলতা। কারণ আগে ভেবে রাখা কস্টিউমের অধিকাংশই যেহেতু ইনফ্রারেডে সাদা কিংবা কালো হয়ে যাচ্ছিল, ফলে রঙ নির্বাচন ছিল নতুন চ্যালেঞ্জ। ওয়েস্ট বলেন, ‘আমি জানতাম না, ঠিক কোন পোশাকটা সাদা হতে চলছে। ফলে একই কস্টিউমের বিবেচনায় কয়েকটা পোশাকের কথা মাথায় রাখতে হতো।’ একই দিকে ইশারা করে ফ্রেজার বলেন, ‘আমাদের প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়েছে বিষয়টি নিয়ে, যেন প্রতিটি মানুষের জামা কালো দেখায়। এমনকি ফেইডেরটাও।’ 

বাটলারের ফেইড রাউঠার দৃশ্যায়ন হয়েছিল অনেকটাই সুইস আর্টিস্ট এইচআর গাইগারের অনুপ্রেরণায়। ওয়েস্ট বলেন, ‘কস্টিউম পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আমি মধ্যযুগীয় চিত্রকলার আশ্রয় নিয়েছি। বিশেষ করে নাইটদের। তাদের পেছনে যে কাজ করা ছিল, সেটাই আমি কালো রঙে হাজির করেছি পোশাকে।’ 

এডিটর জো ওয়াকারের ১৬ মাসের বেশি সময় লেগেছে ধারণকৃত দৃশ্যগুলোকে এডিট করতে। ওয়াকার ও ভিলেনোভ দুজনই জানতেন, আধুনিক সময়ের খেলার অনুষ্ঠানের মতো হবে না এটা। কোলাহলও থাকবে না এখনকার মতো। দৃশ্যটাকে ৩০টি ভাগে ভাগ করে নেয়া হয়। সে সময় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে প্রাসঙ্গিকতায়। দুজনই চাচ্ছিলেন ফাইট সিনটি বহুমাত্রিক হোক। তার জন্য সারা বছর ধরে কাটাকাটি চলেছে দৃশ্যের। সবসময় গল্পটাকে সামনে ও কেন্দ্রে রাখার চেষ্টা চলেছে।

সূত্র: ভ্যারাইটি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন