গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাস

চলতি বছর পণ্যের বৈশ্বিক দাম গড়ে ১৫ শতাংশ বাড়তে পারে

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি: রয়টার্স

আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সংকোচনমুখী মুদ্রানীতিতে জোর দেয় শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলো। দফায় দফায় বাড়ানো হয় সুদহার। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করায় এ বছর যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশই সুদহার কমানোর কথা ভাবছে। আবার অনেক দেশ এরই মধ্যে কমাতে শুরু করেছে। ফলে চলতি বছর বিশ্বজুড়ে সব ধরনের পণ্যের চাহিদা বাড়বে বলে জানিয়েছে মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস। খবর অয়েলপ্রাইস ডটকম।

বিনিয়োগ ব্যাংকটির বিশ্লেষকরা এক নোটে বলেন, ‘‌বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও ঝুঁকি তুঙ্গে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সুদহার কমানোর বিষয়টি উৎপাদন শিল্পের পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে। পাশাপাশি বাড়াবে ভোক্তা চাহিদাও। এতে পণ্যের বৈশ্বিক দাম এক বছরের ব্যবধানে ১৫ শতাংশ বাড়তে পারে।’

বিশ্লেষকরা আরো জানান, চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, অ্যালুমিনিয়াম, তামা ও স্বর্ণসহ বেশকিছু পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় পরিবর্তনই এর মূল কারণ।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বর্তমানে ভালো করছে। এমন পরিস্থিতিতে সুদহার কমানো হলে পণ্যের বৈশ্বিক দাম বাড়তে শুরু করবে। বিশেষ করে বড় উল্লম্ফন দেখা দেবে তামা ও স্বর্ণসহ গুরুত্বপূর্ণ ধাতুর বাজারে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামও লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ চলতি বছরের জুনের মধ্যেই সুদহার কমাবে বলে ধারণা করছেন অনেক বিশ্লেষক ও বাজার পর্যবেক্ষক। এটি হতে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি ও পণ্যবাজারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তবে সুদহার কমানোর ক্ষেত্রে আপাতত তাড়াহুড়ো নেই বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ফেড। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। এ বছর মোট তিন ধাপে সুদহার কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে ফেডের।

এক মাস আগে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য পূর্বাভাস সংশোধন করেছিল গোল্ডম্যান স্যাকস। এতে বলা হয়, চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের গড় দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৭ ডলারে থাকবে, এর আগের পূর্বাভাসে যা ছিল ব্যারেলপ্রতি ৮৫ ডলার। দাম বাড়ার পেছনে লোহিত সাগর দিয়ে বাণিজ্যিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার বিষয়টিকে দায়ী করছে বিনিয়োগ ব্যাংকটি।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বর্তমানে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। স্পট মার্কেটে প্রতি আউন্স লেনদেন হচ্ছে ২ হাজার ১৭৬ ডলারে। ১৮ মার্চ তামার দাম বেড়ে ১১ মাসের সর্বোচ্চে উঠে আসে। প্রতি টনের মূল্য ৯ হাজার ১৬৪ ডলারে ওঠে। বর্তমানে এটি টনপ্রতি ৮ হাজার ৮৭৯ ডলারে লেনদেন হচ্ছে।

তবে বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম ধারাবাহিকভাবে কমছে। সবশেষ ফেব্রুয়ারিতে এসব পণ্যের গড় দাম কমে তিন বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মাসভিত্তিক মূল্যসূচক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। উৎপাদন বৈরী আবহাওয়ার মুখে না পড়লে আগামীতে দাম আরো কমে আসতে পারে।

রাবোব্যাংক ২০২৪ সালে দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আশঙ্কা করছে, যা কৃষিপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধিকে মন্থর করে দেবে। রাবোব্যাংকের কৃষিপণ্যবিষয়ক প্রধান কার্লোস মেরা জানান, তিন বছর ধরে বিশ্বব্যাপী কৃষিপণ্যের দাম অত্যন্ত অস্থিতিশীল ছিল। উৎপাদনকারীরা এখনো যুদ্ধ, খারাপ আবহাওয়া, অন্যান্য খরচ বৃদ্ধি ও দুর্বল চাহিদার প্রভাবগুলোর সঙ্গে লড়াই করছে। তবে ২০২৪ সালে অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিকতার দিকে ফিরতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন