অপরিশোধিত ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদন ৩.৭ শতাংশ বেড়েছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি: রয়টার্স

ফেব্রুয়ারিতে অপরিশোধিত ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। এ প্রবৃদ্ধিতে প্রধান প্রভাবকের ‍ভূমিকা রেখেছে ভারত, চীন, তুরস্ক ও ইরান। ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।

চীনের বাজারে বাড়লেও চলতি বছর বিশ্বজুড়ে ইস্পাতের দাম নিম্নমুখী থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মূল্যস্ফীতির চাপ, ধারাবাহিক সুদহার বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কাসহ নানা কারণে বছরজুড়ে ধাতুটির চাহিদা থাকবে কম। বিপরীতে বাড়তে পারে উৎপাদন।

ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে ১৪ কোটি ৮৮ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়। গত বছরের একই সময় উৎপাদন হয় ১৪ কোটি ৩৬ লাখ টন। বছরের প্রথম ‍দুই মাসে উৎপাদন হয়েছে ৩০ কোটি ৬৯ লাখ টন। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে যা প্রায় ৩ শতাংশ বেশি। 

বাজার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফিচ সলিউশনের গবেষণা ইউনিট বিএমআই চলতি বছরে ধাতুটির বৈশ্বিক মূল্য পূর্বাভাস সংশোধন করেছে। আগে টনপ্রতি ৭৮০ ডলারের পূর্বাভাস দেয়া হলেও সম্প্রতি তা কমিয়ে ৭৪০ ডলারে ‍নামিয়ে আনা হয়েছে। বছরের শুরুতে প্রত্যাশার চেয়েও কম দামে লেনদেন হয়েছে ধাতুটির। তবে কয়েক মাসের মধ্যে এ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চীন বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদক ও ব্যবহারকারী। ২০২২ সাল ও গত বছরের শুরুর দিকে দেশটিতে ইস্পাতের দামে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছিল। প্রপার্টি খাতে ব্যাপক অস্থিরতায় ওই সময় দেশটিতে অবকাঠামো নির্মাণ কমে যায়। ফলে এ খাতে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ ইস্পাতের চাহিদায়ও ভাটা পড়ে। গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। দেশটির সরকার অর্থনীতিকে গতিশীল করতে নানা উদ্যোগ নেয়। প্রপার্টি খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়ও জোর দেয়া হয়। বাড়তে শুরু করে ধাতুটির চাহিদা ও দাম, যা বৈশ্বিক বাজারকেও ঊর্ধ্বমুখী করে তোলে।

ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশন জানায়, বিশ্বের শীর্ষ উৎপাদক চীনে গত মাসে ৮ কোটি ১২ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।

ইস্পাতের বৈশ্বিক সরবরাহ ও উৎপাদনে পুনরুদ্ধারের আভাস দেখা যাচ্ছে বলেও জানিয়েছে বিএমআই। এটি জানায়, বর্তমানে ইস্পাত উৎপাদন কমিয়ে দেয়ার কঠোর নীতি শিথিল করেছে চীন সরকার। ফলে দেশটির কারখানাগুলো উৎপাদন বাড়াতে শুরু করেছে। পাশাপাশি ভারতসহ অন্য শীর্ষ বাজারগুলোয়ও বাড়ছে উৎপাদন।

ভারতে উৎপাদন ১১ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ১ কোটি ১৮ লাখ টনে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারত সরকার অর্থনীতিকে গতিশীল করতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আগামী অর্থবছর দেশটির অর্থনীতি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিকে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে চলতি ও আগামী বছর দেশটিতে আরো বেশি ইস্পাতের প্রয়োজন।

অন্য দেশগুলোর মধ্যে তুরস্ক গত মাসে ৪ কোটি ৬৬ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন করে, যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। ইরান উৎপাদন করেছে ২২ লাখ টন, যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। জাপানে উৎপাদন ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৭০ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে।

তবে রাশিয়ার উৎপাদন ৪ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৫৭ লাখ টনে নেমেছে। উৎপাদন নেতিবাচক ছিল দক্ষিণ কোরিয়ায়ও। দেশটিতে ৫১ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়, যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ কম।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র গত মাসে ৬৫ লাখ টন উৎপাদন করে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ২ শতাংশ কম। জার্মানিতে তা ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ৩১ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। এক্ষেত্রে বড় প্রবৃদ্ধি দেখেছে ব্রাজিল। দেশটি ২৮ লাখ টন উৎপাদন করেছে, যা ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় ১৩ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।

অঞ্চলভেদে ইস্পাত উৎপাদনে বড় প্রবৃদ্ধি দেখেছে আফ্রিকা। সেখানে ধাতুটির উৎপাদন এক বছরের ব্যবধানে ৮ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর উৎপাদন ৩ দশমিক ৩ শতাংশ কমে গেছে।

এশিয়া ও ওশেনিয়ায় উৎপাদন বেড়েছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ হারে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ১০ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে উত্তর আমেরিকার দেশগুলোয় ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। তবে দক্ষিণ আমেরিকা উৎপাদনে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন