ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা

নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর সড়ক সম্প্রসারণকাজ দেড় বছর বন্ধ

রাকিব হোসাইন রনি I লক্ষ্মীপুর

নোয়াখালীর ছয়ানী বাজার সড়কের একাংশে স্থাপনা থাকায় বন্ধ রয়েছে সম্প্রসারণকাজ ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর সড়ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। ২০২০ সালের জুনে শুরু হওয়া প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণে বরাদ্দ রাখা হয় ১২০ কোটি টাকা। আর ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় মূল সড়ক সম্প্রসারণের জন্য। এ সময়ের মধ্যে ২০ কিলোমিটার সড়কের লক্ষ্মীপুর অংশে শুধু সাত কিলোমিটার সম্প্রসারণ করা হয়েছে। তবে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় নোয়াখালী অংশে ১৩ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ কাজ বন্ধ রয়েছে দেড় বছর ধরে।

সওজ কর্মকর্তারা বলছেন, কাজ করার সময় স্থানীয়দের বাধা ও কয়েকটি স্থানে ভূমি অধিগ্রহণ করতে না পারায় প্রকল্পটি বন্ধ রাখা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, জমির ন্যায্যমূল্য দিচ্ছে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। যাদের কাছ থেকে ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে তাদের ঠিকমতো মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে না।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর সড়কটি ১৮ ফুট চওড়া রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় এটি ৪০ ফুট করা হবে। দুই পাশে ৬ ফুট সম্প্রসারণের পাশাপাশি ৫ ফুট করে ১০ ফুট মাটি ফেলে ভরাট করা হবে। নোয়াখালীর মাইজদি বাজার থেকে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের শাহী পেট্রলপাম্প পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে প্রায় ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সড়কটির কাজ পায় কুমিল্লার রানা বিল্ডার্স। পরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যৌথভাবে কাজে চুক্তিবদ্ধ হয় হাসান বিল্ডার্স ও মেসার্স সালেহ আহমেদ। ২০২০ সালের জুনে কাজ শুরু হয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যাদের কাছ থেকে জমি নিয়ে গাইডওয়াল করা হয়েছে, তাদের কোনো টাকা দেয়া হয়নি এবং ৮ ধারা নোটিসও দেয়া হয়নি। কিন্তু ৪ ধারা ও ৭ ধারা নোটিস সাধারণ মানুষ পেয়েছে। সওজের কর্মকর্তাদের সঠিক তদারকি না থাকায় ঠিকাদারের লোকজন খামখেয়ালিভাবে নির্মাণকাজ শেষ না করেই চলে গেছে। সড়ক নির্মাণে পুরনো ইট-খোয়া ও রাবিশ ব্যবহার করা হয়েছে। নামমাত্র নতুন মাটি, খোয়া ও বালি ব্যবহার করা হয়েছে। এখন ব্যস্ততম এ সড়কে দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে হয় কয়েক লাখ মানুষকে।

এদিকে ভূমি অধিগ্রহণ করে সড়কটি দ্রুত সম্প্রসারণ করতে গত সোমবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন রাজগঞ্জ ও ছয়ানী বাজারের ৭০ জন ব্যবসায়ী। এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেন তারা। তবে সেতুমন্ত্রী বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

নোয়াখালীর ছয়ানী বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২০১৯-২০ সালে দুই প্যাকেজে ২০ কিলোমিটার সড়কের কাজ পায় নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালে সড়কের আশপাশের মানুষদের কাছ থেকে ভূমি অধিগ্রহণ করা হলেও মসজিদ ও দোকান রেখেই কাজ শুরু। হঠাৎ করে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। লক্ষ্মীপুরের সাত কিলোমিটার অংশে রাস্তার পাশে মসজিদ ও দোকান রেখে চন্দ্রগঞ্জের হাদারঘর পর্যন্ত কাজ শেষ করা হয়েছে। মাঝে রাজগঞ্জ বাজার, ছয়ানী বাজার ও বসুরহাটে গত দেড় বছর কাজ বন্ধ রাখা হলেও ৮ ধারা নোটিস তারা পাননি। অনেক স্থানে সড়কটি ধসে পড়েছে। সাধারণ মানুষের জমি অধিগ্রহণ করলেও সড়ক কর্তৃপক্ষ কাউকে টাকা দেয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, সওজের কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবাল ও নোয়াখালী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে ইচ্ছামতো প্রাক্কলন তৈরি করেছিলেন। এতে ২০ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ ও সংস্কারে ৯০ কোটি  টাকা বরাদ্দ করা হয়।

রাজগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মো. সেলিম ও ছয়ানী ইউপি ওহিদুজ্জামানের অভিযোগ, ২০২০ সালের জুনে শুরু হওয়া কাজ রাজগঞ্জ বাজার পর্যন্ত করা হয়। আবার মাঝখানে কাজ করে ছয়ানীবাজার পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়। আবার ওই সড়ক দিয়ে ঘুরে কয়েকটি বাজারে কাজ না করে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের হাদার ব্রিজ পর্যন্ত প্রশস্ত করা হয়। ঠিকাদারের মনগড়া কাজের কারণে প্রতিদিন ওই সড়কের বাজারগুলোয় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আলম ও কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা নাজমুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে রানা বিল্ডার্সের নিয়োগপ্রাপ্ত কার্য সহকারী মো. তুহিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমি কিছু বলতে পারব না, যা বলার সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীরা বলবেন।’

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী সওজের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই জেলার দু-একজন কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার কারণে এ অনিয়ম হচ্ছে। সড়কটির কাজ দেড় বছর বন্ধ রয়েছে।’

লক্ষ্মীপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা নোয়াখালীর প্রকৌশলীদের কাজটি করতে সহযোগিতা করেছি। কোনো অনিয়মের অভিযোগ কেউ করেনি।’

এ বিষয়ে নোয়াখালী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী সৌম্য তালুকদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর অংশে সাত কিলোমিটার সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নোয়াখালী অংশে ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে রাজগঞ্জ ও ছয়ানী বাজার অংশে ভূমি অধিগ্রহণে সমস্যার কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। ১২০ কোটি টাকা ভূমি অধিগ্রহণে বরাদ্দ রয়েছে। সড়কের কাজের জন্য রয়েছে ৯০ কোটি টাকা। তবে কিছু কাজ শেষ হয়েছে, বাকিটুকু সহসাই শুরু করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন