বিদেশী বিনিয়োগ

ভারতের মোবাইল শিল্পে কর্মসংস্থানের নতুন ঢেউ

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি: রয়টার্স

প্রযুক্তি ও শিল্প খাতে উল্লেখযোগ্য নীতি সংস্কার এবং ব্যবস্থাপনাগত পরিবর্তন এনেছে ভারত সরকার। কর ও ভূমি ব্যবস্থাপনাসহ নানা ধরনের সুবিধা রয়েছে এর আওতায়। এসব কারণে বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশটি এখন উৎপাদনক্ষেত্র হিসেবে সেলফোন উৎপাদনকারী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ক্রমেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এ খাতে বিদেশী বিনিয়োগও এখন বাড়ছে। দেশটির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভারতে ক্রমবর্ধমান মোবাইল উৎপাদন শিল্পে শিগগিরই কয়েক লাখ কর্মসংস্থান যোগ হবে।

ইকোনমিকস টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ১২-১৫ মাসে দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখ কর্মী যোগ দেবেন এ খাতে। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুই ধরনের কর্মসংস্থানই অন্তর্ভুক্ত। মূলত স্থানীয় ও বিশ্বব্যাপী মোবাইল ব্যবহারকারী বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে ভারত।

কর সুবিধা, সস্তা শ্রম ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ছাড়াও বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোর ভারতকে বেছে নেয়ার পেছনে ভূরাজনৈতিক ঘটনাও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক বৈরিতা সূত্র অ্যাপেল এখন চীননির্ভরতা কাটাতে চাইছে। যাকে এখন বৈচিত্র্যকরণ নীতি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ভারতে কারখানা খুলতে চুক্তি করেছে আইফোনের তিন প্রস্তুতকারক ফক্সকন, উইস্ট্রন ও পেগাট্রন। সেই সঙ্গে যোগ দিয়েছে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ডিক্সন টেকনোলজি। শুধু অ্যাপলই নয় সাম্প্রতিক সময়ে আরো কিছু জায়ান্ট চীনের বাইরে তাদের উৎপাদনের ক্ষেত্র নিয়ে যেতে প্রস্তুত। সে সুযোগও এখন ভারতের অনুকূলে।

এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ বাজার ও রফতানি চাহিদা মেটাতে কারখানাগুলো কর্মশক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে প্রস্তুত।

বিদেশী ও বহুজাতিক সংস্থার বিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রশস্ত করতে ভারত সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তিন বছরে সরকারের প্রডাকশন লিংকড ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিম মোবাইল শিল্প খাতে প্রায় পাঁচ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করতে সাহায্য করেছে বলে জানায় নিয়োগ সংস্থা টিমলিজ সার্ভিসেস। এক্ষেত্রে ভারত সরকারের সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান সংস্থার সিইও কার্তিক নারায়ণ। তিনি বলেন, ‘চীনের বাইরে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ডিভাইস নির্মাতাদের প্রলুব্ধ করতে ভারত ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে ৩০ হাজার কোটি ডলার মূল্যের ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।’

সে লক্ষ্য অর্জনে ফলপ্রসূভাবে পিএলআই স্কিম বাস্তবায়ন করেছে ভারত সরকার। বিষয়টি উল্লেখ করে কার্তিক নারায়ণ জানান, যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়ায় গেছে ভারত। বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে। এসব কারণে আগামী বছরগুলোয় এ খাতে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন বাড়বে।

মানবসম্পদ বিষয়ক সংস্থা স্টাফিং অ্যান্ড র‌্যান্ডস্ট্যাড টেকনোলজিসের ভারত শাখার প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ইয়েশাব গিরি জানান, অনেক বৈশ্বিক কোম্পানি ভারতে উৎপাদন কাঠামো স্থাপন করেছে, যা চলতি অর্থবছরে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করবে। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ ভূমিকায় থাকবেন ৪০-৫০ হাজার কর্মী। পরোক্ষাভাবে যুক্ত হবেন ৭০-৮০ হাজার।

ইকোনমিকস টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের আইফোন তৈরি করবে অ্যাপল, যা ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক কোম্পানিটির বৈশ্বিক মোবাইল উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ। এ সংখ্যা তাদের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এর আগে বলা হয়েছিল, ওই অর্থ বছরে এ টেক জায়ান্ট বৈশ্বিক উৎপাদনের ৯ শতাংশ ভারতে স্থানান্তরিত করবে।

এদিকে ভারতে পিক্সেল স্মার্টফোন তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে আরেক প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগল। সংশ্লিষ্ট খাতের ভারতীয় কর্মকর্তাদের মতে, ভারতের প্রতি আগ্রহ প্রধান স্মার্টফোন নির্মাতাদের আগামীতে আরো বাড়াবে।

ক্রমবর্ধনশীল এ শিল্পে বিভিন্ন ধরনের দক্ষ কর্মী প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রনিকস বা ইলেকট্রিক্যাল টেকনিশিয়ান, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, অ্যাসেম্বলি অপারেটর, লাইন সুপারভাইজার, মোবাইল অ্যাসেম্বলার, ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার, ডাটা ইঞ্জিনিয়ার, মান-নিয়ন্ত্রণ পরিদর্শক, সাপ্লাই-চেইন ম্যানেজার ও লজিস্টিক কো-অর্ডিনেটর। এসব ক্ষেত্রে যথাযথ প্রশিক্ষণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। টিমলিজের কার্তিক নারায়ণের মতে, স্পষ্টতই বিদেশে রফতানির জন্য ভারতীয় উৎপাদনের অনেক সুযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্পে বর্তমানে ভারতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১২ লাখ কর্মী যুক্ত রয়েছে। এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়বে। স্টাফিং অ্যান্ড র‌্যান্ডস্ট্যাড টেকনোলজিসের ইয়েশাব গিরি বলেন, ‘‌আমরা ২০২৬ অর্থবছরের দিকে তাকিয়ে আছি। এ সময়ে ভারতে মোবাইল উৎপাদন খাত কমপক্ষে ২ লাখ ৮০ হাজার থেকে তিন লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হবে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন