যুক্তরাজ্যে এক কোটির বেশি মানুষের সঞ্চয় হাজার পাউন্ডের নিচে

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাজ্যে সঞ্চয়ের তুলনায় ক্রেডিট কার্ড ও বন্ধকি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ছবি: রয়টার্স

জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নানা স্তরের চাপের মুখোমুখি হচ্ছে যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা, যার প্রভাব পড়েছে প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষের সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে। যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের হাতে নেই অতিরিক্ত অর্থ। দেশটির মোট জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য একটি অংশে গড় সঞ্চয় ১ হাজার পাউন্ডেরও কম। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

সম্প্রতি এক গবেষণায় সতর্ক করে বলা হয়েছে, মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছে দরিদ্র পরিবারগুলো। এ কারণে দুর্দিনের জন্য হাতে থাকছে না প্রয়োজনীয় অর্থ।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রেজল্যুশন ফাউন্ডেশন এ বিষয়ে জরিপ পরিচালনা করেছে। ফলাফলে দেখা গেছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে সঞ্চয়ের হার সংকুচিত হয়েছে। মোট জনসংখ্যার ১ কোটি ১২ লাখ কর্মক্ষম মানুষের সঞ্চয় ১ হাজার পাউন্ডেরও নিচে নেমে এসেছে। মূলত মৌলিক চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত আয় না থাকায় সঞ্চয় সংকটে রয়েছে প্রান্তিক অঞ্চলের কর্মক্ষম সাধারণ মানুষ।

রেজল্যুশন ফাউন্ডেশন বলছে, অপর্যাপ্ত সঞ্চয়ের তিন ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বেকারত্ব, পারিবারিক ভাঙন ও অবসর জীবনের জন্য পর্যাপ্ত আয় না থাকা।

ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ১ হাজার পাউন্ডের নিচে সঞ্চয় রয়েছে এমন নাগরিকদের সংখ্যা মোট কর্মক্ষম জনসংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ, যা যুক্তরাজ্যের মোট দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্ধেক। এছাড়া ১২ শতাংশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে তাদের সঞ্চয় ১০০ পাউন্ডের কম। আর ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো সঞ্চয়ই নেই।

অন্যদিকে ফাইন্যান্সিয়াল ফেয়ারনেস ট্রাস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে জরুরি অবস্থা ও অবসরকালীন পরিস্থিতি তহবিলে ৭ হাজার ৪০০ কোটি পাউন্ড ঘাটতি রয়েছে। এর সঙ্গে তারা সেসব দেশের তুলনা করেছে, সেখানে প্রতিটি পরিবারের অন্তত তিন মাসের আয় সঞ্চয়ে রাখা হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে কর্মক্ষম অর্ধেকের সামান্য বেশি মানুষের এ পরিমাণ সঞ্চয় রয়েছে।

ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পরিবারগুলো আরো অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে পড়তে পারেন বলেন সতর্ক করে দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। সম্প্রতি দেশটিতে সঞ্চয়ের তুলনায় ক্রেডিট কার্ড ও বন্ধকি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে বন্ধকি ঋণের সংখ্যা সঞ্চয়কারীদের প্রায় দ্বিগুণ। ক্রেডিট কার্ড ও ঋণের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর নতুন করে চাপ তৈরি হচ্ছে।

এ পরিস্থিতির উত্তরণে সরকারের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে জানায় গবেষণা সংস্থা রেজল্যুশন ফাউন্ডেশন। প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষ যাতে সঞ্চয় বাড়াতে পারে, সে পদক্ষেপ নিতে সংস্থাটি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এক্ষেত্রে নিয়োগকর্তাদের পেনশন স্কিম বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। পেনশন ব্যবস্থা টেকসই ও সহজ করার জন্য সরকারি নীতি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের পেনশন ব্যবস্থা অস্বাভাবিক রকম কঠোর। সরকারের উচিত অন্যান্য দেশের মতো নমনীয় হওয়া। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে সঞ্চয়কারীরা যেকোনো সময় তাদের নিয়োগকর্তার দেয়া অবসর ভাতায় প্রবেশ করতে পারেন। নিউজিল্যান্ডে নিজেদের প্রথম বাড়ি কেনার জন্য ভবিষ্যৎ পেনশন থেকে সুবিধা নিতে পারেন চাকরিজীবীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন