এক বছর আগে ফাইভজি নেটওয়ার্কের জগতে প্রবেশ করেছে ভারত। টেলিযোগাযোগ খাতে যা দেশটির জন্য অন্যতম একটি বিষয়। তবে নেটওয়ার্ক অবকাঠামো, ইন্টারনেট ব্যবহারে সীমাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন কারণে এটি এখনো সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। এরই মধ্যে দেশটিতে টুজি সেলফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়ার আলোচনা দীর্ঘদিন থেকেই চলছে। কিন্তু এটি বন্ধ করে দেয়া কি ইতিবাচক হবে না নেতিবাচক, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।
ইটি টেলিকমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ভারতে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো ২০-২৫ কোটি ফিচার ফোন ব্যবহারকারী রয়েছে এবং সবাই টুজি নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সম্প্রতি ভারতে টেলিযোগাযোগ খাতের অন্যতম কোম্পানি রিলায়েন্স জিও পুনরায় টুজি বন্ধের আলোচনা তুলেছে। কোম্পানিটি ফোরজি নেটওয়ার্ক পরিষেবা দিয়ে থাকে। অন্যদিকে এয়ারটেল ও ভোডাফোন সম্মিলিতভাবে টুজি ও ফোরজি নেটওয়ার্ক পরিষেবা দেয়। রিলায়েন্স ও এয়ারটেল উভয়ের ফাইভজি নেটওয়ার্কও রয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, নতুন প্রযুক্তির কারণে বর্তমানে দেশটির গ্রাহকরা ফোরজি/ফাইভজি নেটওয়ার্কে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে টুজি নেটওয়ার্কের ব্যবহারকারী কমছে। এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শুধু ভয়েস কল ও মেসেজ পাঠানো যায়।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুযায়ী, ভারতে বর্তমানে ১২০ কোটি মোবাইল ব্যবহারকারী রয়েছে, যার মধ্যে ২০-২৫ কোটি এখনো টুজি নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত। তাদের জন্য এ নেটওয়ার্ক পরিচালনা করাও কঠিন। বিভিন্ন প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নত প্রযুক্তির পরিষেবায় স্থানান্তর হওয়ার ক্ষেত্রে এসব ব্যবহারকারীর সামনে বড় বাধা হচ্ছে অর্থনৈতিক সক্ষমতা।
প্রযুক্তিবিদদের মতে, ভারতে টুজি নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যাবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আগামী তিন-চার বছরের জন্য এ সিদ্ধান্ত থেকে দূরে থাকতে হবে। সম্প্রতি টুজি ও থ্রিজি নেটওয়ার্ক বন্ধে নীতিমালা প্রণয়নে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রিলায়েন্স। এর মাধ্যমে নেটওয়ার্ক খাতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের ফোরজি ও ফাইভজি নেটওয়ার্কে নিয়ে আসার কথাও জানিয়েছে এ কোম্পানি।
ভোডাফোন আইডিয়া এ পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। কোম্পানির মতে, নীতিমালা করে জোরপূর্বক টুজি ও থ্রিজি নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া হলে তা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফিচার ফোন ব্যবহারকারীদের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর চাপ তৈরি করবে। এছাড়া এটিএম ও পস মেশিনের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে।
টুজি নেটওয়ার্ক পরিষেবায় ভোডাফোন আইডিয়ার গ্রাহক সংখ্যাই বেশি। এ নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া হলে কোম্পানিটি অধিকাংশ গ্রাহক হারাবে। অন্যদিকে গ্রাহক ধরতে জিওফোন ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাযুক্ত সাশ্রয়ী মূল্যের সেলফোনও বাজারজাত করছে। ইউনিভার্সাল সার্ভিসেস অবলিগেশন ফান্ডের (ইউএসওএফ) মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মোবাইল ব্যবহারকারীদের সহায়তা দেয়া হয়। বর্তমানে এ প্রকল্পের অধীনে ৭৭ হাজার ১১৩ কোটি রুপি অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। জিও ও ভোডাফোন অতিরিক্ত এ অর্থ টুজি/থ্রিজি ব্যবহারকারীদের উন্নত নেটওয়ার্কে নিয়ে আসায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে সম্মতি দিয়েছে।
অন্যদিকে সেলফোন নেটওয়ার্কের উন্নয়ন ও পরিধি বাড়াতে নতুন করে তরঙ্গ বিক্রির পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত সরকার। ভারতের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, নিলামের মাধ্যমে ৯৩ হাজার ৬৩০ কোটি রুপি মূল্যের তরঙ্গ বিক্রি করা হবে।
৮০০, ৯০০, ১৮০০, ২১০০, ২৩০০, ২৫০০, ৩৩০০ মেগাহার্টজ ও ২৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে ১০ হাজার ৫২৩ দশমিক ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বিক্রি করা হবে বলে জানা গেছে। তবে কবে নাগাদ তরঙ্গ বিক্রির নিলাম আয়োজিত হবে সে বিষয়ে সরকারি সূত্রে কিছু জানা যায়নি।
ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, নিলামের পর টেলিকম পরিষেবার উন্নয়ন ও গ্রাহক পর্যায়ে কভারেজ বাড়াতে অবিক্রীত তরঙ্গ ব্যবহার করা হবে। এছাড়া নিলামের মাধ্যমে রিলায়েন্স জিও ইনফোকম, ভারতী এয়ারটেল ও ভোডাফোন আইডিয়ার মতো ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলো পরিষেবা বাড়াতে পারবে।