তামিল ইন্ডাস্ট্রির প্রথম অ্যাকশন হিরো

মাহমুদুর রহমান

বিক্রমের একটি গানে কমল হাসান ছবি: আইএমডিবি

সদ্য প্রকাশ হলো কমল হাসানের নতুন সিনেমার টিজার। ‘‌থাগ লাইফ’ নামে সিনেমাটি পরিচালনা করছেন মণি রত্নম। টিজারে দেখা যায় প্রতিদ্বন্দ্বীদের একজনের নাক ভেঙে দিচ্ছেন কমল। আরেকজনের ঘাড়ে মারছেন কাঠের লাঠি দিয়ে। মার্শাল আর্টের মতো হাত-পা চালিয়েছেন কমল। বছর তিনেক আগেও এ রকম ভায়োলেন্স তামিল ইন্ডাস্ট্রি মেনে নিত না। কিন্তু লোকেশ কনগরাজ ও নেলসন দিলীপকুমারের সিনেমার পর এখন দর্শক এমন সিনেমাই চায়। কোয়েন্টিন টারান্টিনোর মতো করে বলতে হয়, ‘‌অন স্ক্রিন ভায়োলেন্স দারুণ উপভোগ্য।’ মজার ব্যাপার তামিল ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে সে অ্যাকশনে এগিয়ে আছেন কমল হাসান। যদিও সাধারণভাবে মনে হবে লোকেশের ‘‌বিক্রম’ থেকে কমলের এ যাত্রা, কিন্তু আদতে আরো আগেই তা হয়েছিল।

সাম্প্রতিক তামিল সিনেমায় নতুন ধারার অ্যাকশন আনার চেষ্টা হয়েছে। এর মধ্যে ভায়োলেন্স বিষয়টি অন্যতম। কিন্তু তামিল ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাস দেখলে বোঝা যাবে কমল হাসানের সিনেমায় এ বিষয় আগেও ছিল। কমল শুরুতেই তার সিনেমার মাধ্যমে দর্শকের ওপর একধরনের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করতেন। তিনি রেশ রাখতে চাইতেন। কমল হাসানের ভায়োলেন্স ও অ্যাকশন দর্শককে ভয় পাওয়াত না, যেমন কার্থির ‘‌পারুথিভিরা’ (২০০৭) অনেককে প্যানিক অ্যাটাকে ফেলেছে। কমল হাসানের সিনেমার ভায়োলেন্সে অর্থবহ কিছু বিষয় থাকত। পারুথিভিরার সাত বছর আগে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘‌হে রাম’। ভারতের সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম সেরা একটি সিনেমা হে রাম। এ সিনেমায় ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে, অপর্ণার (রানী মুখার্জি) ওপর অত্যাচার ও অন্যান্য বিষয় অত্যন্ত ভায়োলেন্ট, কিন্তু সেটা মানুষের বিকার প্রকাশ করে।

স্মরণ করা যায় ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘‌কুরুধি পুনাল’। ওম পুরীর ১৯৯৪ সালের দ্রোহকাল সিনেমার এ রিমেকে কমল হাসান নৃশংসতাকে এতটা বাস্তব করে তুলেছেন যে দর্শক মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছে। এ সিনেমায় কমল ও অর্জুন সারজাকে অপহরণ করে সন্ত্রাসবাদীরা ও তাদের ইন্টারোগেশন থেকে সিনেমার অন্যান্য অংশে মারপিট ও রক্ত যেভাবে দেখানো হয়েছে তা আজকের তামিল ইন্ডাস্ট্রির জন্য রীতিমতো শিক্ষণীয়। ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘‌ভিরুমাদি’র দিকে নজর দিয়েছে দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। তাদের একটি প্রতিবেদন মতে একটি গ্রামে পরপর কয়েকটি খুন দিয়ে যে সিনেমাটির সূচনা তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে এ সময়ের বহু তামিল সিনেমা।

কমল হাসানের এ সময়ের সিনেমার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ‘‌বিক্রম’। এ সিনেমা নির্মিত হয়েছে কমল হাসানের ১৯৮৬ সালের বিক্রম থেকে। কমল হাসান সে সময়েও এমন সিনেমা করেছেন, যেখানে তাকে একজন এজেন্ট হিসেবে দেখা যায়। ২০২২ সালে এসে লোকেশ কনগরাজ মূলত কমল হাসানের পুরনো অবতারকেই নতুন করে আনলেন। বিক্রমে কমল হাসান অবশ্যই ভালো অভিনয় করেছেন, কিন্তু বিক্রম কখনই আশি বা নব্বইয়ের দশকের কমল হাসানকে ছাড়াতে পারে না। কেননা কমল হাসান সে সময়ই এমন সিনেমা করেছেন, যা তামিলে আগে কেউ ভাবেনি। এখন অনেকেই সিনেমায় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের প্রশংসা করেন কিন্তু ভিরুমাদির ক্লাইম্যাক্সে অনিরুদ্ধের বিজিএম ছিল না। তবু তা দর্শকের জন্য রোমহর্ষক ছিল।

লেখার শুরুতে টারান্টিনোর প্রসঙ্গ এসেছে এবং কমল হাসানের কথা বলতে গেলে টারান্টিনো প্রাসঙ্গিক। কেননা কমলের ‘‌আলাবান্ধা’র একটি অ্যানিমেটেড ভার্সন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন টারান্টিনো। নন্দকুমারের এ চরিত্রও তামিল অ্যাকশন জনরার একটি বড় সংযোজন। জনপ্রিয় ধারায় তিনি চাচী-৪২০ ঘরানার সিনেমার জন্য বেশি পরিচিতি পাওয়ার পাশাপাশি তামিল সিনেমায় নতুন ধারার অ্যাকশন ও থ্রিলার জনরার সিনেমা আসার কারণে কমল হাসানের অ্যাকশন ও ভায়োলেন্স পড়ে গেছে আড়ালে। কিন্তু টারান্টিনোর অনুপ্রাণিত হওয়ার কথা বাদ দিলেও রজনীকান্তের পাশাপাশি কমল হাসান ছিলেন তামিল ইন্ডাস্ট্রির স্বাতন্ত্র্য ধরে রাখা অ্যাকশন হিরো। রজনীর লার্জার দ্যান লাইফ চরিত্রকে পাশে সরিয়ে রাখলে কমল হাসানকেই বলা যায়, তামিল ইন্ডাস্ট্রির প্রথম অ্যাকশন হিরো।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন