হিলি স্থলবন্দর

অব্যাহত আমদানির মধ্যেও ফের ঊর্ধ্বমুখী আলুর বাজার

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, হিলি

২-১১ নভেম্বর পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৪ হাজার ৭১৯ টন আলু আমদানি হয়েছে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় আলু আমদানি অব্যাহত থাকলেও গতকাল ঊর্ধ্বমুখী ছিল পণ্যটির দাম। পাইকারি পর্যায়ে প্রকারভেদে আলুর দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫-৬ টাকা। কারণ হিসেবে ভারতে আলুর দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়া ও চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে না পারাকে দায়ী করেছেন আমদানিকারকরা। নতুন করে দাম বাড়াকে আমদানিকারকদের কারসাজি বলে অভিযোগ করেছেন বন্দরে আলু কিনতে আসা পাইকাররা।

দেশের বাজারে হঠাৎ করেই আলুর বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে সরকার গত ৩০ অক্টোবর আলু আমদানির অনুমতি দেয়। ২ নভেম্বর থেকে আলু আমদানি শুরু হলে দাম কমতে শুরু করে। কিন্তু হঠাৎ করেই দুদিন ধরে দাম বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল বন্দরে কার্টিনাল জাতের লাল আলু বিক্রি হয়েছে ৩৪-৩৬ টাকা কেজি দরে। দুদিন আগেও একই জাতের আলু বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৩০ টাকায়। এছাড়া ২৬-২৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ৩১-৩২ টাকায়। আর নতুন আলুর দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা। ৬০ টাকা থেকে এ জাতের আলু বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা দরে।

হিলি স্থলবন্দরে আলু কিনে দেশের বিভিন্ন মোকামে সরবরাহকারী আইয়ুব আলী বলেন, ‘‌আলুর দাম আবারো বাড়তে শুরু করেছে। আমরা দুদিন আগেও বন্দর থেকে প্রকারভেদে ২৬-৩০ টাকা কেজি দরে আলু কিনেছি। এখন তা ৩১-৩৬ টাকায় কিনতে হচ্ছে। হঠাৎ করে দাম বাড়ায় পুঁজি বেশি লাগছে।’ 

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আলু আমদানিকারক আবু হাসনাত খান রনি বলেন, ‘‌আমরা আমদানির অনুমতি পেলেও ব্যাংকগুলোতে চাহিদা মোতাবেক আলুর এলসি খুলতে পারছি না। বিভিন্ন ব্যাংকে এলসি খুলতে গিয়ে দিনের পর দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরনা দিয়েও এলসি পাচ্ছি না। ডলার সংকটের কথা বলে ব্যাংকগুলো আমাদের ফেরত পাঠাচ্ছে অথবা অপেক্ষা করাচ্ছে। অনেক চেষ্টা করে শতভাগ টাকা দেয়ার পর দু-একটি ব্যাংকের মাধ্যমে সীমিত পরিমাণে এলসি খুলতে পারছি। এ কারণে আমরা চাহিদা মোতাবেক আলু আমদানি করতে পারছি না।’

এ আমদানিকারক বলেন, ‘‌আমরা প্রতি টন আলু প্রকারভেদে ১০০-১৫০ ডলার মূল্যে আমদানি করলেও কাস্টমস ১৮০ ডলার মূল্য ধরে শুল্কায়ন করছে। ফলে কেজিপ্রতি ৭ টাকা শুল্ক দিতে হচ্ছে। এর সঙ্গে বন্দরের মাশুলসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে এক কেজি আলুতে শুল্ক বাবদ ৯ টাকার মতো খরচ পড়ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শুল্ক ছাড় দিলে ও চাহিদা অনুযায়ী এলসি পেলে বন্দর দিয়ে আলু আমদানি বাড়বে। আর আমদানি বাড়লেই দাম কমে যাবে।’

আলু ব্যবসায়ী মোস্তফা হোসেন বলেন, ‘‌ভারত থেকে আমাদের দেশে আলুর আমদানি শুরু হওয়ায় সেখানে চাহিদা বেড়েছে। এ সুযোগে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা আলুর দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এছাড়া আমদানির খবরে দেশের বিভিন্ন স্থানে কোল্ড স্টোরেজগুলো ব্যাপক পরিমাণে আলু ছাড়তে শুরু করে। এতে দেশের বাজারে আলুর সরবরাহ বাড়ায় দাম কমে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে কোল্ড স্টোরেজগুলোয় আলুর স্টক (মজুদ) কমে গেছে। এ কারণে দেশে আমদানীকৃত আলুর চাহিদা বেড়েছে।’ 

হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘‌শনিবার বন্দর দিয়ে ৪৩টি ট্রাকে ১ হাজার ৪৫ টন আলু আমদানি হয়েছে। আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি চলবে।’ তিনি জানান, ২-১১ নভেম্বর সাপ্তাহিক ছুটি বাদে মোট আটদিন বন্দর দিয়ে আলু আমদানি অব্যাহত ছিল। এ সময়ের মধ্যে বন্দর দিয়ে ১৮৭টি ট্রাকে ৪ হাজার ৭১৯ টন আলু আমদানি হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন