
বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে যেকোনো
অধিকারের লড়াইয়ের উদ্দীপনা হয়ে এসেছে কাজী নজরুল ইসলামের চিরসবুজ গান ‘কারার ওই লৌহ
কপাট’। এ গান নিয়ে শ্রোতাদের রয়েছে আলাদা আবেগ। তাতেই আঘাত করেছেন ভারতীয় সুরকার, গায়ক
ও সংগীতায়োজক এ আর রহমান। গ্র্যামি বা অস্কারের মতো পুরস্কার ঝুলিতে থাকলেও গানটির
মর্ম বুঝতে পারেননি এ সংগীতজ্ঞ।
মূলত বলিউড সিনেমা ‘পিপা’র জন্য নতুন
সংগীতায়োজনে ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ রেকর্ড করেছেন রহমান। কিন্তু ফোক মোটিফ ও বাদ্যযন্ত্র
ব্যবহার করে সুরের মূল ভাষাই বদলে দিয়েছেন তিনি। সেই অভিযোগ উঠেছে ইউটিউব ও অন্যান্য
সোশ্যাল মিডিয়ার মন্তব্য ও পোস্টে।
এ বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় গীতিকার, গায়ক
ও সুরকার লুৎফর হাসানের ভাষ্যে, “আমি এ আর রহমানের চূড়ান্ত এবং যা তা রকমের ফ্যান।
উপাসনার মতো তার সব গান আমার প্রতিদিনের সঙ্গী৷ আমি একটা দিন তার গান ছাড়া কাটাই না।
তবে, কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ও সুরের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটা নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা
না করে এআর রহমান মনে হচ্ছে ভুল করলেন। রক্তে আগুন লেগে যাওয়া একটা গানকে তিনি নিয়ে
গেলেন ঘুম পাড়ানো গানে। ভালো লাগলো না। অনেকভাবে চেষ্টা করলাম, যেন ভালো লাগে। শেষ
পর্যন্ত নিজেকে বললাম ‘সবাই সব জায়গায় সঠিক না, নির্ভুল মানুষ’ও ভুলের ঊর্ধ্বে না।”
নির্মাতা দীপংকর দীপন লেখেন, ‘কিমুনটা
লাগে। এ আর রাহমানকে কেউ মনে হয় গানের কথা ট্রান্সলেট করে দেয় নাই বা প্রপার ন্যারেশন
দেয় নাই। গানটার রস বদলে ফেলেছেন তিনি। কথার একটা চাহিদা থাকে... সেটা কেন উনি বুঝলেন
না কে জানে।’
লেখক-নির্মাতা রেজা ঘটকের মতে, ‘এই
গান শুনলে যেখানে মানুষের রক্ত গরম হয়ে যায়, সেখানে এ আর রহমানের বিকৃত সুরের গানটি
শুনলে বাঙালির স্রেফ ঘুম আসবে, পাশাপাশি বিরক্তিও আসবে! নজরুলের গানটি নিয়ে এরকম এক্সপারিমেন্ট
করতে গিয়ে মিস্টার রহমান গানটির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন! সেইম সেইম!’
ইউটিউবে এক শ্রোতা লিখেছেন, তরুণ প্রজন্মের
কাছে শক্তিশালী বিপ্লবী বার্তা নিয়ে শক্তিশালী গানটি লেখা। একে এলোমেলোভাবে হালকা রোমান্টিক
ধরনের সুরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এলোমেলো কিছু পপ কর্ডের সঙ্গে গানটি গাওয়া হয়েছে।
সুরের কেন্দ্রীয় কোনো কাঠামো নেই। অসাধারণ এ গানে কেন কসাইয়ের মতো ছুরি চালিয়েছেন?
মহান কাজী নজরুল ইসলামের কাজকে বিকৃত করা কেন?
আরেকজন লেখেন, রহমান স্যার, অমর একটি
সৃষ্টিকে ধ্বংস করেছেন। আপনি আমাদের আবেগ নিয়ে খেলতে পারবেন না।
আরেকটি মন্তব্য এমন, এই নজরুল গীতি
নিজেই একটি মাস্টারপিস। একে আরও ভালো শোনাতে বিশ্বের কোনো সংগীতশিল্পীর কোনো পরিবর্তনের
প্রয়োজন নেই। নিজে একজন সংগীতশিল্পী হয়ে আপনার এই মানের একজন শিল্পীকে অসম্মান করা
উচিত ছিল না।
রাজা কৃষ্ণ মেনন পরিচালিত ‘পিপা’র কেন্দ্রবিন্দু
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। যাকে ভারতীয় সিনেমায় ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ’ বলা হচ্ছে। ওই
বছরের নভেম্বরে সীমান্তবর্তী গরীবপুরে সংগঠিত যুদ্ধ এ ছবিতে উঠে এসেছে। অভিনয় করেছেন
ইশান খাট্টার, প্রিয়াংশু পাইনুলি, সোনি রাজদান ও ম্রুণাল ঠাকুর।