আমাদের মতো লোকাল মার্কেটে ব্যবসা ও এক্সপোর্ট দুটোই করে এমন প্রতিষ্ঠান খুব বেশি নেই

এনভয়ের পণ্য ও সেবা লোকাল মার্কেট কেন্দ্র করেও আছে, আবার এক্সপোর্ট মার্কেট কেন্দ্র করেও আছে। আপনার প্রতিষ্ঠানকে আপনি কোন মার্কেটে বেশি শক্তিশালী মনে করেন এবং কেন?

দুটোই আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। এটি সত্য যে আমি ব্যবসা শুরু করেছি এক্সপোর্ট দিয়ে। তাই এক্সপোর্টের দিকে আমার একটু দুর্বলতা আছে। কিন্তু আমরা জানি যে এ মুহূর্তে ডলারের সংকট চলছে। লোকাল বিজনেসে কিন্তু ইমপোর্ট থাকে। ডলার আয় করতে পারলে ইমপোর্ট করা সহজ হয়। এক্সপোর্ট ও ইমপোর্ট দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি লোকাল মার্কেটে পণ্যের চাহিদা মেটানোর মাধ্যমে ইমপোর্ট কমাতে পারি, তাহলে ডলার বাঁচাতে পারব। আবার এক্সপোর্ট করতে পারলে ডলার আয় হবে। তাই দেশের জন্য গুরুত্ব কোনোটিরই কম নয়। আবার আজকে যে পণ্যটা আমরা লোকাল মার্কেটের জন্য তৈরি করছি, আগামীতে যে সেগুলো এক্সপোর্ট করব না, তা কিন্তু নয়। যদি আমরা গার্মেন্টসের কথাই ধরি, একসময় এ খাত কেবল লোকাল চাহিদাই পূরণ করত। সত্তরের দশকের শেষে কিংবা আশির দশকের শুরুতে গার্মেন্টসগুলো কিন্তু ছিল লোকাল মার্কেটকেন্দ্রিক। তারপর রিয়াজ গার্মেন্টস সম্ভবত প্রথম এক্সপোর্টে যায়। আমাদের জানামতে, সম্ভবত এটিই প্রথম এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড গার্মেন্টস। লোকাল মার্কেটে ব্যবসা করলেই যে এক্সপোর্ট করতে পারব না, তা কিন্তু নয়। গ্লোবালি তো সবকিছুই ওপেন। তাই লোকাল মার্কেট ও এক্সপোর্ট মার্কেট কোনোটিকেই অবহেলা করা উচিত নয়। আমরা যারা লোকাল ও এক্সপোর্ট দুটোই করি, এমন প্রতিষ্ঠান খুব বেশি নেই। আমাদের ব্যবসা কিন্তু অনেক ডাইভারসিফায়েড। রিয়েল এস্টেট দিয়ে আমরা স্থানীয় বাজারে ব্যবসা শুরু করেছি, তারপর পর্যায়ক্রমে কন্সট্রাকশন, কনসালটেন্সি, হোটেল ব্যবসা, সিরামিক, টাইলস, ইলেকট্রিক পোল ম্যানুফ্যাকচারিং, শিরিষ কাগজ বা অ্যাবরেসিভ পেপার ইত্যাদিতে সম্প্রসারিত হয়েছে। আমাদের এয়ারলাইনসে ৭-৮টি জিএসএ আছে। একটি ব্রোকারেজ হাউজ আছে। এটি বর্তমানে র‍্যাংকিংয়ে ১-৩-এর মধ্যে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের ব্যবসার পদচারণা আছে। অনেক ধরনের ব্যবসা আমরা করি। আমরা যেটাই করি, তা সুনামের সঙ্গে করার চেষ্টা করি। এতটুকু বলতে পারি যে আমাদের ওপর মানুষের আস্থা আছে। 

আপনাদের তো ডাইভারসিফায়েড ব্যবসা। কিন্তু আমি যদি সিঙ্গেল প্রডাক্টের কথা বলি, আপনার এক্সপোর্টের সবচেয়ে শক্তিশালী পণ্য কোনটি?

এখন পর্যন্ত গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল সবচেয়ে শক্তিশালী। গার্মেন্টসের ডিমান্ড বাড়লে টেক্সটাইলের ডিমান্ডও বেড়ে যায়। এটি উল্টোভাবেও বলা যায়, যখন আমরা দেখি যে টেক্সটাইলের ডিমান্ড বাড়ছে, তখন আমরা বুঝতে পারি যে গার্মেন্টসের অর্ডার আসবে। এটি একধরনের সংকেত। 

আপনাদের সবচেয়ে শক্তিশালী কি ডেনিম?

হ্যাঁ ডেনিম। কিন্তু আমরা রিসেন্টলি ওভেন ক্যাটাগরিতে আরো সম্প্রসারিত করার জন্য চিন্তাভাবনায় আছি। যদি পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা হয় এবং বাজার পরিস্থিতি অনুকূলে আসে তাহলে দ্রুত ওভেন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারব। আমরা যদি আরেক ধাপ নিচে নামি, তাহলে স্পিনিংয়ের কথা বলতে হবে। স্পিনিংয়ের ক্ষেত্রে আমার জানামতে এখন পর্যন্ত আমরা সেরাদের মধ্যে অন্যতম। উৎপাদিত সুতায় আমরা বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম হয়েছি। ইদানীং আমরা আরেকটি ফ্যাক্টরি করেছি। ব্লেন্ডেড প্রজেক্ট। কটন ও সিনথেটিক মিক্স করে যেটি করে। যেটি আমরা আগে চীন ও অন্যান্য দেশ থেকে শতভাগ আমদানি করতাম। আমাদের ক্ষেত্রে একই প্রডাক্টেরও ডাইভারসিফিকেশন হচ্ছে, আবার ডিফরেন্ট প্রডাক্টেরও ডাইভারসিফিকেশন হচ্ছে। যেমন আমাদের টেক্সটাইল মিলের ডাইভারসিফিকেশন বলতে বোঝাচ্ছি, আমরা এখন ডেনিম করছি, কিন্তু আমরা চিন্তা করছি ওভেন করার। আমরা স্পিনিং করেছিলাম কটন ইয়ার্ন, তারপর আমরা ব্লেন্ডেড ইয়ার্নে চলে গেছি। তুলা থেকে পোশাক পর্যন্ত সবকিছুই আমরা করার চিন্তাভাবনা করছি। এভাবে আমরা পূর্ণাঙ্গ কম্পোজিট মিল করার পথে অগ্রসর হচ্ছি।

আমাদের রফতানি তো সবসময় সম্ভাবনাময়। এর বর্তমান পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

বর্তমানে রফতানি ডেফিনিটলি চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে। কারণ আমাদের টোটাল মার্কেট কিন্তু একটি প্রডাক্টের ওপরই নির্ভরশীল। অর্থাৎ পোশাক খাতকেন্দ্রিক। এ শিল্পের ব্যবসা বৈশ্বিক অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন সারা বিশ্বে এখন অর্থনৈতিক স্থবিরতা চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। সারা বিশ্বের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। ক্রয়ক্ষমতার অগ্রাধিকারে সবার আগে আসে খাদ্য, তারপর আসে বাসস্থান, তারপর আসে বস্ত্র। প্রথম দুটোকে ডিঙ্গিয়ে তৃতীয়টি আসে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ছিল কভিডকাল। তখন সবাই ঘরে থাকত। বের হতো না তেমন। তখন কিন্তু কাপড়ের চাহিদা এমনিতেই কমে গিয়েছিল। সুতরাং গার্মেন্টস সেক্টর বৈশ্বিক অনেক ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে ন্যাশনাল পলিসি ও ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ভূমিকা পালন করে। ন্যাশনাল পলিসিতে তো আমরা সাপোর্ট পাই। সরকারের কাছ থেকে আমরা আগেও সাপোর্ট পেয়েছি, এখনো পাচ্ছি। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল পলিসি আমাদের হাতে নেই। বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিসমাপ্তি অত্যন্ত জরুরি। আবার মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে আমাদের জিএসপি সুবিধা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। আবার আমাদের প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে যাবে। তখন কী পরিস্থিতি হবে, তা এখনই বলা মুশকিল। কিন্তু আমাদের কম্পিটিটর যে আসবে না, তা কিন্তু না। নিকট অতীতে খুব বেশি ঝুঁকি না থাকলেও, ভবিষ্যতে যে হবে না, তা কিন্তু নয়। তখন আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হবে ভিয়েতনাম, চীন, তুরস্ক, মেক্সিকোর মতো দেশগুলোর সঙ্গে। অর্থাৎ আমাদের কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। 

আপনারা শূন্য থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যায়ে এসেছেন। এ জার্নিটা আপনার কাছে কেমন ছিল?

ব্যবসা কোনোটিই তো সোজা নয়। এক্ষেত্রে কিছুটা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে, আর কিছুটা মানুষের নিজের ঐকান্তিক চেষ্টার ওপর। কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। একনিষ্ঠতা থাকতে হয়। নিজস্ব একটি বলয় বা ইমেজ তৈরি করে নিতে হয়। এটি অনেকেই বুঝতে পারে না। অল্প সময়ে লাভবান হওয়ার চিন্তা করে। এ ইমেজই কিন্তু তাকে আরো বড় করে। যারা শর্টকাট চিন্তা করে আর মানুষ যখন বুঝতে পারে যে সে অনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত, তখন কিন্তু তার আর সুনাম থাকে না। একপর্যায়ে গিয়ে তার ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়ে। প্রথমদিকে তার মনে হয় যে এভাবে তো অনেক লাভবান হওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেই লাভ কিন্তু পর্যায়ক্রমে আর থাকে না। তো ব্যবসার ক্ষেত্রে আমার ভাগ্য সবসময় ভালো ছিল। এজন্য আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। আমি সবসময় ভালো ছিলাম। মানুষের ব্যবসায় খারাপ দিক থাকে। পতন থাকে। নানাবিধ সমস্যা থাকে। কিন্তু আমি প্রায় চার দশক ধরে ব্যবসা করছি, এ দীর্ঘ সময়ে আমি একইভাবে ব্যবসা করে আসছি। কখনো বড় ধরনের কোনো ঝুঁকিতে পড়িনি। চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু চ্যালেঞ্জ তো ব্যবসায় থাকবেই। ব্যবসার ক্ষেত্রে আমি দুটি কথা বলতে চাই। লোকাল মার্কেটে যারা ব্যবসা করে, তাদেরও কিন্তু এক্সপোর্টে আসার সুযোগ করে দিতে হবে। 

পলিসি পরিবর্তন করার মাধ্যমে এটি করা সম্ভব। এজন্য একটি রোড ম্যাপ তৈরি করতে হবে। এক্সপোর্টে আনা যায়, এমন নতুন নতুন পণ্যের তালিকা তৈরি করতে হবে। এ মুহূর্তে আমরা একটি নতুন প্রকল্প করার চিন্তা করছি। সেটি হলো এগ্রো এক্সপোর্ট। স্প্যানিশ একটি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এটি করার চেষ্টা করছি। সবকিছু ঠিক থাকলে এ উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়িত হবে। 

সেটি হলে এটিই হবে বাংলাদেশে প্রথম শতভাগ রফতানিমুখী কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ  প্রকল্প। এ প্রকল্প থেকে আমরা সুইট কর্ন, অ্যাসপারাগাস, আনারস, গ্রিন চিলি ইত্যাদি রফতানি করতে পারব। এভাবে আমরা চেষ্টা করছি এক্সপোর্ট পণ্যের মধ্যে বৈচিত্র্য আনার জন্য। যেহেতু আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, তো আমাদের এ উদ্যোগ রফতানির ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব নিয়ে আসতে পারে। সবশেষ আমার কথা হলো, যারা তরুণ উদ্যোক্তা আছেন, তাদের আরো বেশি সুযোগ-সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে ব্যবসার যথার্থ পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে তাদেরও ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকতে হবে।

বাংলাদেশ রফতানিতে অনেক পথ এগিয়েছে। এ নিয়ে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।

সত্যি বলতে এ অনুভূতি বলে শেষ করা যাবে না। আমরা যারা ১৯৮৪ সালে ব্যবসা শুরু করি, তখন যে পরিসংখ্যান ছিল, প্রায় ১৫০ গার্মেন্ট কারখানা ছিল। তার মধ্যে মাত্র ১৫-১৬টি অর্ডার পেত। আর বেশির ভাগ কারখানা সাব-কন্ট্রাক্ট করত। সে পরিবেশ থেকে উতরে আস্তে আস্তে রফতানি বাড়তে থাকে। যখন রফতানি ১ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করল, তখন এক রকমের অনুভূতি। এরপর ৫ বিলিয়ন, ১০ বিলিয়ন, ২৫ বিলিয়ন এখন রফতানি হয়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলারের। এ অনুভূতি আসলে বলে বোঝানো সম্ভব না। এর জন্য আমি বলব আমাদের যারা উদ্যোক্তা আছেন তারা অনেক শ্রম দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আমাদের বিশাল কর্মীবাহিনী, যারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন তাদের অবদান বলে শেষ করা যাবে না। তাদের অবদান এ সেক্টরের জন্য স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আজকের ৫০ বিলিয়নের পর আমরা টার্গেট করব ৭৫ বিলিয়ন, তারপর হয়তো টার্গেট নেব ১০০ বিলিয়ন। টার্গেট হয়তো অর্জনও হবে। কিন্তু শ্রমজীবী মানুষ যারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কঠিন পরিশ্রম করে তাদের স্বার্থ আমাদের বড় করে দেখতে হবে। প্রথম জেনারেশনের যারা উদ্যোক্তা তাদের স্বপ্ন ছাড়া কিছু ছিল না। তারা অনেক সাহসী ছিল। তাদের কোনো বাস্তব জ্ঞান ছিল না। এখানে আমি বলব যে সরকারের একটা বিরাট ভূমিকা ছিল এবং এখনো আছে। কারণ পলিসি সাপোর্ট ছাড়া এ সেক্টর এত দূর এগিয়ে যেতে পারত না, এটা সত্যি। বিশেষ করে কভিডের সময়ে পোশাক শিল্প বা বস্ত্র শিল্প সবই বিশাল একটা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে। সেক্ষেত্রে যখন না চাওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রণোদনা আসে, এটার জন্য লবিং করা বা দাবি তোলার আগেই সরকারের এ ঘোষণা আসে; সেটা আসলে ম্যাজিকের মতো কাজ করেছিল। এ টনিকের কারণেই গার্মেন্টসগুলো ধসে পড়েনি। প্রথম তিন মাস ছিল একদম ক্রান্তিকাল। এ ক্রান্তিকাল থেকে উত্তরণে সরকারের সহায়তা বিশাল ভূমিকা রেখেছে আমাদের জন্য। 

আপনি বললেন যে এখানে কর্মী, মালিক, সরকার সবার অবদান রয়েছে। কিন্তু আমরা প্রত্যেক সেক্টরে দেখি যে ব্যক্তি ভূমিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গার্মেন্টস সেক্টরে শুরুর দিকে এ রকম কয়েকজন ব্যক্তির ভূমিকা সম্পর্কে জানা যায়। এমন কোনো ব্যক্তি বা ঘটনার কথা মনে পড়ে যেটা গত ৫০ বছরের অগ্রযাত্রার টার্নিং পয়েন্ট ছিল?

গার্মেন্টসে আমার ব্যবসার বয়স প্রায় ৩৯ বছর। আমি যখন ৪৪টা মেশিন দিয়ে শুরু করি তখন আমরা বন্ড গার্মেন্টস থেকে নিয়ে দক্ষ কর্মী নিয়োজিত করি। পোশাক খাতের পথিকৃৎদের মধ্যে বড় ভূমিকা ছিল নুরুল কাদেরের। গার্মেন্টসের আধুনিকায়নে তার অনেক বেশি অবদান। এরপর একে একে অনেক কারখানা গড়ে উঠেছে বিভিন্ন জায়গায়। ওরা অনেকেই টিকে নেই। ওই কারখানাগুলো থেকেই আমরা লোকবল পেয়েছি। আমরা তো লোক তৈরি করিনি। তাদের অবদান অনস্বীকার্য। 

ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ৭৫ বিলিয়ন ডলার বা ১০০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করবে বলছেন। এ রেকর্ড গড়তে কী কী চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে বলে আপনি মনে করেন?

চ্যালেঞ্জ বলতে সমন্বয় দরকার। গার্মেন্টসের মালিক-শ্রমিক, সরকার এবং এর সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত সবাইকে নিয়েই কাজ করতে হবে। কেউ একলা পারবে না। শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য একটি ইনস্টিটিউট দরকার। যারা নতুন জয়েন করে তাদের বেতন এক রকম, যারা সেমি স্কিলড তাদের বেতন এক রকম, আবার যারা স্কিলড তাদের বেতন এক রকম। তারা যেন সেমি স্কিল নিয়ে জয়েন করতে পারে, তার জন্য একটা ইনস্টিটিউট অথবা ট্রেনিং সেন্টার প্রয়োজন। এটা বিভিন্ন বিভাগে হতে পারে। আবার জেলায়ও হতে পারে। দক্ষতা অর্জন করেই তারা ঢাকায় আসবে। এ উদ্যোগগুলো সরকারের মন্ত্রণালয় নিতে পারে। বিজিএমইএও যদি কোনো সাপোর্ট লাগে দিতে পারে। আবার আমাদের মালিকদের বললেও আমরা অবদান রাখতে পারি। কারণ এতে আমাদের সবার উপকার। অর্থাৎ সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটা দক্ষ জনবল রেডি রাখতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে আমাদের যে ইউটিলিটিগুলো সেগুলো আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। যেমন বিদ্যুৎ, গ্যাস এগুলোর কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস আছে কিন্তু এগুলো নিরবচ্ছিন্ন থাকে না। এখানে আমাদের ঘাটতি আছে। এটা যেন নিরবচ্ছিন্ন থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। সাময়িক সময়ে বৈশ্বিক কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো এক সময়ে ঠিক হয়ে যাবে। তবে আমাদের পরিকল্পনা রাখতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি গ্রো করার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমরা কোথায় করব? ইকোনমিক জোন হতে পারে। জোনের সুবিধা-অসুবিধা দুটোই আছে। জোনের অসুবিধা হলো অ্যাসেট আমাদের না। আমি এত কষ্ট করে অ্যাসেট তৈরি করব কিন্তু তিন মাস যদি ভাড়া না দিতে পারি তাহলে আমার স্ট্রাকচার চলে যাবে, ইপিজেডে যা হয়। আমি বিপদে পড়লে যে আমি অ্যাসেট বিক্রি করে ব্যাংকের লোন শোধ করতে পারব বা পুঁজি নিয়ে অন্য আরেকটা ব্যবসা শুরু করব সেক্ষেত্রে এক্সিট পলিসি একদমই নেই। এ জায়গায় ইকোনমিক জোন বা ইপিজেডের একটি দুর্বলতা আছে। সরকারকে এগুলো একবারে ঠিক করে নিতে হবে। আমাদের শিল্প প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল যুগপৎভাবে গ্রো করতে হবে। তা না হলে কিন্তু আমাদের ভ্যালু অ্যাডিশন হবে না। আমরা যদি এক্সপোর্টই করব, ভ্যালু অ্যাডিশন তো থাকতে হবে। টাকা আনলাম আর চলে গেল বাইরে এতে তো কিছু লাভ হবে না। এ বিষয়গুলো আমাদের পলিসিতে আসতে হবে। টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিল্পকে সহায়তায় ভারত সম্প্রতি একটি পলিসি হাতে নিচ্ছে। আমাদের সে রকম সহায়তা দরকার নেই কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির জন্য জায়গা ঠিক করে দিতে হবে যে এ জায়গায় গার্মেন্টস হোক। রানা প্লাজা, তাজরীন ফ্যাশনসের মতো ঘটনায় আমরা ধাক্কা খেয়েছি। তারপর কিন্তু আমরা ইউটার্ন করেছি। সবুজ কারখানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেটা সারা বিশ্বে রিমার্কেবল। কিন্তু যদি কোনো ডিজাস্টার হয়, তাহলে এটা ব্যবসা নিয়ে টান দেবে। সে কারণে জায়গা ঠিক করা একটি বড় বিষয়। দূরে করা যায় কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আবার বায়াররাও বেশি দূরে যেতে চান না। আমরা জ্যামের কারণে বিশাল একটা সময় নষ্ট করি। এ সময়ের কিন্তু একটা মূল্য আছে। কর্মঘণ্টার সময় আমি যদি কাউকে কাজে পাঠাই এবং জ্যামের কারণে তার আড়াই ঘণ্টা সময় নষ্ট হয় তাহলে তো তার ক্ষতি হচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়নে আমাদের অনেক বেশি ইফিশিয়েন্ট হতে হবে। চীনে  যে ইউনিভার্সিটিগুলো বস্ত্র ও পোশাক নিয়ে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট চালু করে, সেগুলোকে অনেক ক্ষেত্রে সরকারই সহায়তা করে। এগুলো নতুন নতুন ফ্যাব্রিকস ডেভেলপ করে। কটন ফ্যাব্রিকসের দাম বা তুলার দাম যদি বেশি হয় তাহলে তারা বিকল্প উৎসের সন্ধান করে। যার দাম কম। তারা পৃথিবীকে একটা সমাধান দিচ্ছে। ওদের আরঅ্যান্ডডি অনেক পরিপক্ব। আমরা ৫০ বিলিয়নে আর ওরা ২৫০ বিলিয়নেরও ওপরে। প্রথম আর দ্বিতীয়র গ্যাপ কিন্তু বিশাল। এ পার্থক্য কমিয়ে আনতে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে বিনিয়োগ করতে হবে। সেটা রাষ্ট্র করুক আর অ্যাসোসিয়েশন করুক অথবা ব্যক্তিগত উদ্যোগেই হোক। পশ্চিমা বিশ্বে ফ্যাশনে কী পরিবর্তন হচ্ছে, রঙ কেমন হবে এগুলো গবেষণা করতে হবে। আমরা এ কারণে সমস্যায় পড়ি। একধরনের ফ্যাব্রিকস চাইলে আমরা অন্য ধরনের ফ্যাব্রিকস বানিয়ে দিচ্ছি। যেমন আমাদের টেক্সটাইলস কারখানার কথা যদি বলি, আমরা ফ্যাব্রিকস ডেভেলপ করি। বিভিন্ন ধরনের ফ্যাব্রিকস করে আমরা ক্রেতাকে দেখাই। পাশাপাশি ক্রেতারা যেটা চাইছে সেটাও নিয়ে যাই। আমাদের ডেভেলপ করা প্রডাক্টও নিয়ে যাই। এখন দেখা যাচ্ছে যে আমাদের জিনিসগুলোও ওরা গ্রহণ করছে। এটা ভালো দিক। আগে এগুলো চিন্তাও করতে পারতাম না। যা বলত কপি করে দিয়ে আসতাম। এখন নিজেদের উদ্যোগে আমরা বানাই। পরিবর্তন হচ্ছে। এটা যত দ্রুত হবে ইন্ডাস্ট্রি এবং সবার জন্য ততই মঙ্গল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন