আরো শক্তিশালী ব্র্যান্ড হিসেবে ইউরোপ নির্ভরতা কমিয়ে নতুন মার্কেটে নিজেদের তুলে ধরতে চাই

এপেক্স ফুটওয়্যার প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট সংক্ষেপে বলুন

প্রথমে এপেক্স ট্যানারির মাধ্যমে আমরা চামড়া রফতানি শুরু করি। সেমি ফিনিশড ও ফিনিশড চামড়া রফতানির ক্ষেত্রে আমরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছি। চামড়াগুলো হংকং, চীন, কোরিয়া, জাপান, ইউরোপ, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে জুতা ও ব্যাগ ফ্যাক্টরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। সারা বিশ্বে যে ফিনিশড চামড়া উৎপন্ন হয়, তার ৭৫ শতাংশ জুতা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। সে কারণেই জুতাই হলো চামড়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। তখন আমরা নতুন স্বপ্ন দেখি। বাংলাদেশ থেকে আমরা চামড়া রফতানি করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের ফিনিশড চামড়া বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। আমাদের শ্রম সস্তা। তাই উৎপাদন খরচও কম। আমাদের মানবসম্পদ বেশ বড় ও তরুণ। ইউরোপ, জাপান, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আমাদের ডিউটি ফ্রি মার্কেট অ্যাকসেস আছে। তাই ভ্যালু অ্যাডিশনের জায়গা থেকে আমরা ভাবলাম যে আমরা কী শুধু কাঁচামালই রফতানি করব? তখন আমরা ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা কাঁচা চামড়া রফতানি থেকে ওয়েট ব্লু, ওয়েট ব্লু চামড়া থেকে সেমি ফিনিশড, সেমি ফিনিশড থেকে ফিনিশড চামড়া রফতানির দিকে অগ্রসর হয়েছি। আমরা ভাবলাম ভ্যালু অ্যাডিশন হলে দেশের রফতানি আয় বাড়বে, আমাদেরও এক্সপোর্ট টার্নওভার বাড়বে, সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানও বাড়বে। কারণ ফিনিশড প্রডাক্টের জন্য প্রচুর জনশক্তি প্রয়োজন। এটি চিন্তা করে আমরা একটি নতুন কোম্পানি স্থাপন করি। এর নাম দেয়া হয় এপেক্স ফুটওয়্যার। এর যাত্রা ১৯৯০ সালে। তখন ঢাকা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার শফিপুরে আনসার একাডেমির পাশে আমরা কিছু জমি কিনি। সে জমিতে ফ্যাক্টরি তৈরি করি। আমরা মাত্র ১৩৭ জন মিলে কারখানার কার্যক্রম শুরু করি। আমি ১৯৯০ সালের জুনে এ ফ্যাক্টরির সঙ্গে যুক্ত হই। বাংলাদেশ থেকে চামড়ার জুতা রফতানির ক্ষেত্রে এটিই প্রথম শতভাগ এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড শো ফ্যাক্টরি। আমাদের কোম্পানির কর্মকর্তারা দিল্লিতে অবস্থিত টাটা গ্রুপের তাজ রাইন সুজের কারখানা দেখতে গেলেন। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করলাম। প্রতিটি মেশিন আমরা জার্মানি থেকে আমদানি করলাম। বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত স্থপতি ছিলেন অধ্যাপক নিজামউদ্দিন আহমেদ। তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্কিটেকচারের বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি এ ফ্যাক্টরির ডিজাইন করলেন। আমরা উনাকে জানালাম, ডিজাইনটা এমনভাবে করতে হবে, ভেতরে যেন প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করে। তাহলে আমরা সহজে চামড়ার খুঁতগুলো চিহ্নিত করতে পারব। তখন তিনি অনেকটা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের মতো ত্রিভুজাকৃতির ছাদ তৈরি করলেন। তারপর কারখানা চালু করা হলো। আমাদের প্রথম উৎপাদিত পণ্য আমরা বেলিজিয়ামে রফতানি করলাম। ১৯৯০ সালের সেপ্টম্বর-অক্টোবরের দিকে। সেখানকার কাস্টমস আমাদের পণ্য আটক করল। তারা জানতে চাইল এগুলো কী জিনিস? আমরা বললাম জুতা। তখন তারা বলল, বাংলাদেশ থেকে তো জুতা হয় না। নিশ্চয় এটার মধ্যে হিরোইন আছে! তো হিরোইন তারা আটকে দিল! তখন আমাদের ইন্ডাস্ট্রি থেকে বেশ সহায়তা করা হলো। তারা ছবি পাঠিয়ে জানালেন, আমাদের দেশে তো একটি ফ্যাক্টরি হয়েছে। তারা এ জুতা বানিয়েছে। তোমরা এটিকে ছেড়ে দাও। এখন আমাদের দ্বিতীয় অর্ডার করতে হবে। তখন তো আমরা ভেবেছি যে একই জুতাই বারবার বিক্রি হবে। আমাদের তো কেউ বলেনি, এটি একটি ফ্যাশনেবল পণ্য। মৌসুমের সঙ্গে এর ফ্যাশন পরিবর্তন হয়। সামারে একরকম জুতা, উইন্টারে একরকম জুতা। তখন আমরা এগুলো কিছুই জানতাম না। এগুলো বলছি এ কারণে যে আমাদের জন্য মার্কেট ও প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্টের বিষয়ে জ্ঞান থাকা কতটা দরকার, তা বোঝানোর জন্য। এ ব্যাপারে আমাদের বেশ দুর্বলতা ছিল। এখনো কিছুটা আছে। তখন ভাগ্যক্রমে আমাদের খুব ভালো কানেকশন ছিল জাপানে। এপেক্স ট্যানারির প্রথম রফতানি হয়েছিল জাপানে। আমাদের থেকে ফিনিশড চামড়া নিয়ে কোরিয়ায় জুতা বানানো হতো। সে জুতাগুলো জাপানে বিক্রি করা হতো। তখন জাপানে আমাদের চামড়ার এজেন্ট মিরা সান আমাদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। তিনি স্বাধীনতার ঠিক পরপর বাংলাদেশে এসেছিলেন। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে যে একটি বিশেষ বন্ধুত্বের বন্ধন আছে, এটিও কিন্তু তার একটি প্রমাণ। জাপানের মতো খুব কম দেশই আমাদের নিঃস্বার্থে সাহায্য করেছে। মিরা সান জাপানের খুব বড় একটি রিটেইলার কোম্পানি মারুটোমিকে কনভিন্স করলেন। একটি ট্রেডিং কোম্পানিকে কনভিন্স করলেন। জাপানের সিস্টেমটা একটু কমপ্লিকেটেড। আপনার একজন এজেন্ট থাকবে। একটি ইমপোর্টিং কোম্পানি থাকবে। তারপর রিটেইলার থাকবে। এ সুনির্দিষ্ট প্রটোকল মেইনটেইন করতে হবে। আপনি সরাসরি যেতে পারবেন না। একেকজনের একেকটি কাজ। তারা তিনজন মিলে, এই তিনজন ম, আমি সবসময় বলি, আমাদের ইতিহাসে লেখা থাকবে, একজন হলেন মঞ্জুরে এলাহি সাহেব, এজেন্ট মিরা সান, আর রিটেইল কোম্পানির মালিক মারুটোমি সান। তার তখন প্রায় এক হাজার দোকান জাপানে। তার জুতার অনেক বড় ব্যবসা। জাপানের সঙ্গে এ ব্যবসায়িক সম্পর্ক হওয়ার পর আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে গেল। উনারা তখন বলল, আমরা তোমাদের শিখাব। জুতা কীভাবে বানাতে হয়। তখন আমরা বললাম আমাদের তো জার্মানরা শিখিয়ে গেছে। আমি তখন প্রডাকশনে কাজ করি। উনারা আমাদের ইনস্ট্রাকশন দেয়ার জন্য এলেন। আমরা যখন জুতা তৈরি করি, তার ৯৭ ভাগ উনারা রিজেক্ট করে দেয়। তিন ভাগ পাস করল, তাও কোয়ালিটি যথেষ্ট না। তখন আমরা চিন্তায় পড়ে গেলাম কী করব। তখন তারা বলল তারা আমাদের টেকনিক্যাল কারিগর দিয়ে সাহায্য করবে। তারা কোরিয়ান টেকনিশিয়ান, জাপানিজ টেকনিশিয়ান পাঠাল। এভাবে ধীরে ধীরে আমরা জাপানিজ কোয়ালিটির জুতা তৈরি শিখলাম। এভাবে শিখে শিখে আমরা জাপানে একটা ব্যবসা তৈরি করলাম। এভাবে আমরা ফুল ক্যাপাসিটিতে দ্বিতীয় বর্ষ, তৃতীয় বর্ষ, চতুর্থ বর্ষতে তৈরি করতে থাকলাম। কিন্তু আমাদের ভাগ্য খারাপ যে ১৯৯৫-১৯৯৬ সালের দিকে জাপানে একটা ইকোনমিক বাবল ব্লাস্ট করে গেল। ওদের একটা ইকোনমিক বাবল ছিল। ওটা যখন ব্লাস্ট করে গেল, তখন তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেল। তখন আমাদের কোয়ান্টিটি কমে যাচ্ছে, কোনো রকম আমরা ঠিক করতে পারি না। ফর্মাল জুতা বা ক্যাজুয়াল জুতাও তারা কিনতে চায় না। কারণ তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না। তখন আমরা আবার ইউরোপের দিকে ঝুঁকলাম। সেখানেও একই সমস্যা। তারা বলল, তোমাদের তো প্রডাক্টের কোয়ালিটি ঠিক নেই। জাপানের কোয়ালিটি তো ইউরোপে বিক্রি করতে পারবে না। আবার নতুন করে শুরু। যখন আমরা শুরু করলাম তখন এক লাইনের ফ্যাক্টরি ছিল। এক লাইনের ফ্যাক্টরি মানে আমাদের দৈনিক ক্যাপাসিটি এক হাজার জুতা তৈরির। সেটার জন্য একজন ইউরোপীয় ক্রেতা ১৯৯৫ সালে দেশে আসবে। তাদের কোনো ইন্টারেস্ট নেই। তাদের অনেক অপশন। তারা কেন বাংলাদেশে আসবে। বাংলাদেশে কোনো ট্র্যাক রেকর্ড নেই জুতা কেনার। তাহলে তারা কেন বাংলাদেশ থেকে জুতা কিনবে। বাংলাদেশ থেকে চামড়া কেনা যায় জানে। কিন্তু জুতা কেনা যায়, তা তারা বিশ্বাস করে না। এক সিজনে আমরা অর্ডার পাই, আরেক সিজনে পাই না। কেও কোনো কথা বলে না। আমরা গিয়ে চুপচাপ বসে থাকি। বাংলাদেশ শুনলে ওরা বিশ্বাস করে না। খুবই খারাপ অবস্থা। তখন ভাগ্যক্রমে আমাদের এক ইতালিয়ান ব্র্যান্ডের সঙ্গে পরিচয় হলো। তার নাম ছিল এডিইল। এডিইল তার প্রডাকশন ইতালির থেকে এলবেনিয়া নামক একটা দেশে নিয়ে গেছে। তারা প্রায় ১৯৮০ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে চামড়া কেনে। তাদের এ দেশের ওপর একটা ভরসা বা অভিজ্ঞতা আছে। ওই সূত্র ধরে তাদের মোটামুটি একটা ইন্টারেস্ট ছিল। তখন তারা বলল ঠিকা আছে আমরা তোমাদের সঙ্গে কোলাবোরেট করব। তখন তারা আমাদের এ ইতালিয়ান শো মেকিং, প্রসেসিং করা, হাতে সেলাই করা ইত্যাদি শেখাল। সিস্টেমটা ছিল তারা পুরো প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ইউটিলিটিটা করত। সেটার পুরো প্রডাকশন তৈরি করার জন্য যে সরঞ্জাম তৈরি করার জন্য তারা আমাদের যে ইক্যুইপমেন্ট পাঠাত, আমরা তা দিয়ে জুতা তৈরি করে উনাদের আবার পাঠাতাম। প্রথম দিকে আমরা আনফিনিশড জুতা, সেমি ফিনিশড প্রডাক্ট পাঠাতাম, পরে আমরা ফিনিশড প্রডাক্ট তৈরি করে সেখানে পাঠাতাম তারা রিপ্যাকেজিং করে বিক্রি করত। তারপর ১৯৯৭ তারা বলল, এখন আর এগুলো পোষাচ্ছে না খরচে, তোমরা সরাসরি রফতানি শুরু করো। আমরা মার্কেটিং করব। প্রডাক্ট ডেলিভারি করব ইতালিতে, প্রডাকশন হবে বাংলাদেশ থেকে। তোমরা ডিরেক্ট শিপমেন্ট করবে পুরো পৃথিবীতে। এটা যখন আমরা শুরু করলাম। তখন আমরা সরাসরি কাজ করতে থাকলাম। মার্কেটিং তাদের হাতে, প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট তাদের হাতে। এটাতে আমাদের অনেক ভলিউম বাড়ল। এটাতে আমাদের আগে ছিল এক লাইন, তা চার লাইন হলো, আট লাইন হলো। আমরা একটু বড় আকারে শুরু করলাম, কিন্তু যেটা হলো ইতালিতে আমাদের প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট। আমরা হয়তো একটা স্প্রিং সামার সিজন বা ফল ওইন্টার সিজনে কাজ করি। আমাদের কিন্তু এখন যা ইনফ্যাস্ট্রাকচার তাও ছিল না। তখন ছিল জিরো। ইতালির ওপর বেশ নির্ভরশীল ছিলাম, ওটাতে বেশ খরচ ছিল। তখন আমরা যখন কস্টিং করছিলাম জুতা বানানোর জন্য ইতালিতে ডিজাইন বানানোর খরচ আমাদের পোষাচ্ছিল না। দাম দিতে চাচ্ছিল না। আমরা লস করছি, কিন্তু ইতালিয়ান পার্টনার কিন্তু আমাদের দাম দিয়ে যাচ্ছে। তারপর ২০১৩ সালে আমরা ভাবলাম, এভাবে আর চলতে পারে না। আমরা আমাদের ইনডিপেনডেন্স চাই, আমাদেরও এখন মুক্ত হতে হবে তাদের হাত থেকে। আমরা তখন নতুন প্রজেক্ট নিলাম, সে প্রজেক্টের নামও দিয়েছিলাম ‘প্রজেক্ট ইনডিপেনডেন্স’। আমরা স্বাধীন হওয়ার জন্য ভাবলাম, আমরা নিজেরাই সক্ষমতা তৈরি করব। প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্টের জন্য। আমরা ভাবলাম তাইওয়ানে গিয়ে এটা তৈরি করব। কারণ তাইওয়ানে একটা বিশাল হিস্ট্রি আছে জুতা তৈরির। আর চায়নার যে বড় জুতার ফ্যাক্টরিগুলো হয়েছে। সেগুলো সব তাইওয়ানের ইনভেস্টমেন্টেই হয়েছে। তাইওয়ানিজদের সঙ্গে কাজ করা একটা বড় সুবিধা তারা ইংরেজি বলে। তাদের সাপ্লাই চেইনটা বেশ গতিশীল।

আর সারা পৃথিবী তাইওয়ান যে একটা জুতার সোর্স তা জানে। তাই আমরা তাইওয়ানের সঙ্গে একটা ডিজাইন সেন্টার তৈরি করলাম। তারপর আমরা অনেকদিন কাজ করলাম তাদের একটা ডিজাইন সেন্টারের সঙ্গে। আমরা তাদের সঙ্গে একটা চুক্তি করলাম। এখান থেকে ২০১৩-১৭ সাল পর্যন্ত আমরা আরো শিখলাম। সেখান থেকে আমরা মোটামুটি জেন্টস জুতাতে ছিলাম, পরে আমরা লেডিস জুতাতে ঢুকলাম। ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমরা তাইওয়ানে ছিলাম। কিন্তু আমাদের সবসময় চিন্তা ছিল বাংলাদেশের মিডেল ফ্যাক্টরির ভেতরে প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ক্যাপাসিটি তৈরি করা। আমরা মোটামুটি মানুষ তৈরি করে, সফটওয়্যার কিনে মোটামুটি রেডি। আমাদের এখন আর তাইওয়ানের প্রয়োজন নেই। প্রথম ধাপ ছিল ইউরোপ, তারপর গেলাম জাপান, তারপর গেলাম তাইওয়ান। ২০১৭ সালে আমরা নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট করলাম এবং সে প্রডাক্টেই মোটামুটি কভিড-১৯-এর আগে আমরা ৫৫ লাখ পেয়ার জুতা বিক্রি করতাম। আমরা বিশ্বের প্রায় ১১০টি দেশে জুতা রফতানি করতাম। বেশির ভাগই ইউরোপিয়ান কাস্টমার এবং ইউরোপিয়ান রিটেইলার, ব্র্যান্ডের সঙ্গে আমাদের খুব কম সংস্পর্শ ছিল। আর জাপানের ব্যবসাটা তো আমরা মোটামুটি ছেড়েই দিয়েছিলাম। পুরোপুরি ইউরোপ নির্ভরশীল ছিলাম। তারপর যখন কভিড-১৯ এল, কভিড-১৯ আসার কারণে আমরা বিশাল একটা ধরা খেলাম। আমাদের যেই ইউরোপ নির্ভরশীলতা তা পুরো এক্সপোজ হয়ে গেল। কারণ ইউরোপ মাসের পর মাস দোকান বন্ধ ছিল। রিটেইলাররা দোকান বন্ধ করে দিল। তবে ভাগ্য ভালো যে বড় কোনো ক্যান্সেলেশন হয়নি। কিন্তু অর্ডার অনেক পরিমাণে কমে গেল। তখন আমরা চিন্তা করলাম, আমাদের এখন মার্কেটিং ফোকাসটা চেঞ্জ করা দরকার। তখন নতুন করে ফোকাস করলাম আমেরিকায় তখন আমরা আর রিটেইলার না। এখন আমরা ডিরেক্টলি ব্র্যান্ডের কাছে রফতানি করব। এসব ব্র্যান্ড হলো হাসপাপি, স্টিভ ম্যারোন, আলডো। এ ধরনের ব্র্যান্ডের সঙ্গে কীভাবে ডিরেক্টলি কাজ করা যায়। তবে ২০১১ সাল থেকে আমরা মোটামুটি বাধা না হয়ে কাজ করা যায়, এমন একটা জায়গায় আমরা মোটামুটি মনস্থির করা যায়। কমপ্লায়েন্স আগে যেটা হতো মোটামুটি লুকোচুরির মধ্যে, মানে প্রডাক্ট আসলে আপনি দেখাবেন না। এগুলো অনেক আগে থেকে পরিবর্তন হয়েছে। সুতরাং, কমপ্লায়েন্সটা যদি ঠিকমতো করা যায়, ফ্যাক্টরিগুলোকে যদি আপনার ওয়ার্ল্ড-ক্লাস মানের করা যায়। কমপ্লায়েন্স মানে এখন আর শুধু ফ্যাক্টরির সেফটি না। এ তিন জায়গায় যদি আপনি একটা মোটামুটি লেভেলের কাজ করতে পারেন, তাহলে এসব ব্র্যান্ড আপনার সঙ্গে কাজ করবে, তা না হলে আপনার সঙ্গে কথাই বলবে না। সে জায়গা থেকে আমরা অনেক জায়গায় গিয়ে, টিমটা তৈরি করে কাজ শুরু করেছিলাম বলেই কভিড-১৯-এর পরে কাজ করতে পেরেছিলাম। আজকে যদি ২০২৩ সালে দেখেন তাহলে ৫৭ ভাগ রফতানি আমাদের জাপান যাচ্ছে, ইউরোপে যাচ্ছে, আমেরিকায় যাচ্ছে, কিন্তু কম। আমরা তা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এখন আমরা শুধু ভলিউমের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে জুতার ভ্যালু মানে দাম কীভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে কাজ করছি। বাংলাদেশে এভারেজ হচ্ছে ১৩-১৪ ডলার, আমাদের এভারেজ হচ্ছে ১৯-২০ ডলার। বাংলাদেশে এমনো ফ্যাক্টরি আছে যারা ৩০-৩৫ ডলার, এমনকি ৭৫ ডলারেও জুতা বনিয়ে দেয়। তাহলে পার্থক্যটা কী।

তাদের দুটো অ্যাডভান্টেজ—একটা প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, আরেকটা মার্কেটিং, তাদের মার্কেটিং অবশ্যই অনেক ভালো। তাই আমরা এখন ওই জায়গায় কাজ করছি, যাতে বেটার কাস্টমার, বেটার প্রডাক্ট তৈরি করব, যাতে আমরা শুধু ভলিউম না, ভ্যালু বাড়াব। জুতার মধ্যে আপনার কম্ফোর্ট থাকতে হবে, ভ্যালু থাকতে হবে, এমন কিছু টেকনোলজি থাকতে হবে, যাতে তারা বেশি দাম দেবে। আমাদের ভ্যালুটা মেইন ফোকাস, যাতে আমরা ভ্যালুটা বাড়াতে পারি। রফতানিতে আমরা মান ও পরিমাণে ভারসাম্য আনতে চাই। আরো গ্রাহক নিয়ে দাঁড়াতে চাই আরো শক্তিশালী ব্র্যান্ড হিসেবে, যেন ইউরোপ নির্ভরতা কমিয়ে নতুন মার্কেটে নিজেদের তুলে ধরতে পারি। এর মধ্যে জাপানে বাংলাদেশ উপস্থিত রয়েছেই। যুক্তরাষ্ট্রেও বাড়ছে উপস্থিতি। দক্ষিণ আমেরিকা ও ভারতে বাজার আসে। এখন সময় নতুন মার্কেট দেখার।

এপেক্স দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। আগে বাটা ছাড়া অন্য কোনো নাম খুব একটা জানত না কেউ। এপেক্সের বাজার এখন বাটার থেকেও শক্তিশালী। বিদেশী ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এমন অবস্থান কীভাবে তৈরি করলেন?

এটাকে অ্যাক্সিডেন্টই বলতে হবে হয়তো। ২৬ বছর আগে আমাদের কারখানায় অনেকে আসত। তারা বলত, এ ধরনের জুতা কেন স্থানীয় বাজারে পাওয়া যায় না। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম। পরিকল্পনা নির্দিষ্ট ছিল। জানতাম স্থানীয় বাজারে ক্রেতারা সন্তুষ্ট না। ওইখানে একটা চাহিদা আছে। তখন পরিকল্পনা করলাম লোকাল মার্কেট নিয়ে। আগে ধারণা ছিল, লোকাল মার্কেটে মানুষ হয়তো কোয়ালিটি দেখে না। কিন্তু খুব দ্রুত ভুল প্রমাণিত হলো। বাংলাদেশের ক্রেতারা এখন বিদেশী ক্রেতারা চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এভাবে ২৬ বছর আগে যখন লোকাল মার্কেটে একটা দোকান দিয়ে শুরু করলাম। ম্যানুফ্যাকচারার যখন রিটেইলার হয়, তখন নানা ভুল ধারণা থাকে। এখানে অনেক শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, ভুল ও সাফল্য আছে। আমরা এখনো চেষ্টা করছি। তবে সত্যি সত্যিই ভাগ্যই বলা হোক, কিংবা পাওনা ও প্রেরণা। বাংলাদেশী কাস্টমাররা যতভাবে আমাদের উৎসাহ দিয়েছে, সেটা অবিশ্বাস্য। তারা চয়েস চাচ্ছিল। আর এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কাস্টমারের হাতে চয়েস তুলে দিতে হবে। যখন সবাই সুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকি, তখন কিন্তু সবাই লাভবান হয়। একসময় একটা কোম্পানি ছিল। এখন হয়তো চারটা। ভবিষ্যতে ১৪টি হবে। কিন্তু এতে উপকৃত হবে গ্রাহক। সে হালাল পণ্যটি পাবে, ঘরের কাছে কিংবা অনুকূল দামে পাবে। 

ওই জায়গা থেকে শুরু করে ২৬ বছরে এপেক্স একটা ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড়িয়েছে। আরো ব্র্যান্ড লঞ্চ করা হয়েছে পরে। ভেঞ্চারিনি নামে প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড ও স্প্রিন্ট আছে। আছে নিনো রোসি ও ম্যাভেরিক। ব্র্যান্ডগুলোকে গ্রাহকরা গ্রহণ করেছে। আমাদের সুযোগ দিয়েছে। বুঝতে পারিনি, এত বড় একটা অবস্থান তৈরি হবে।

আজকে বাজারে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা আছে। বাংলাদেশের জুতার মার্কেট ১২ হাজার কোটি টাকার। তবে সুসংহত বাজার ৪-৫ হাজার কোটি টাকার। সে অংশজুড়েই ব্র্যান্ডগুলো রিটেইল করছে। বাকি অংশটা সুসংহত না। নাম ছাড়া প্রতিষ্ঠান কিংবা স্থানীয় বাজার। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার ও সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে ব্র্যান্ডের প্রসার ঘটবে। এর বড় কারণ আস্থা। কোনো সমস্যা হলে আপনি বদলাতে পারবেন। ভালো জিনিস পাবেন, সে নিশ্চয়তা পাচ্ছে। ব্র্যান্ডের বিস্তার ঘটলে বাজার বাড়বে। কিন্তু সেখানেও সবাইকে একই আইন মেনে করতে হবে। সেখানে ট্যাক্স ও ভ্যাটের মতো বিষয়াবলি মান্য করতে হবে। এটাও মনোযোগের বিষয়। একসময় বাজারে ভুল ধারণা ছিল, লোকাল মার্কেটে এক কোয়ালিটি ও বিদেশে আরেক কোয়ালিটি। আমাদের দুটি পৃথক কারখানা। কিন্তু কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড কিন্তু সমান। কয়েক দিন আগে সোশ্যাল কম্পলায়েন্স রেটিং হয়ে গেল। একে বলা হয় বিএসসিআই বা বাংলাদেশে সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স ইনিশিয়েটিভ। বিএসসিআই স্কোরিংয়ে লোকাল কারখানায় এ গ্রেড কারখানা হিসেবে প্রথম অডিটেই স্থান পায়। এটা আমাদের জন্য গর্বের। বাংলাদেশের আইন রিকোয়োর করে না গ্রেডিংয়ের জন্য। ক্রেতা অভিযোগ করেন, এ গ্রেড না হলে জুতা কিনব না বলে। তার পরও আন্তর্জাতিকভাবে মান বজায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। যদি একই কোয়ালিটি, একই পরিষেবা, একই ডিজাইন করা যায়, তাহলে অভ্যন্তরেই মার্কেট আছে। সেটাই দেখতে পাচ্ছি আমরা। বাংলাদেশের ক্রেতারাই আসলে বিজয়ী হয়েছে। শুধু এপেক্স না। আরো ১০০ ব্র্যান্ড আসতে পারে এপেক্সের মতো। সবাই যদি একই আইনের মধ্যে থাকি। লেভেল প্লেইং ফিল্ড পাই, তাহলে শেষ পর্যন্ত ক্রেতারা লাভবান হবে।

আপনি অনেক সম্ভাবনার কথা বললেন। রফতানির ক্ষেত্রে সম্ভাবনাগুলো বিকশিত করতে প্রধান প্রতিবন্ধকতা কী?

এক্সপোর্টের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ব্যবসা করার ব্যয়। এটা যেভাবে বাড়ছে, তা চিন্তার বিষয়। আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দা বলা না হলেও পরিস্থিতি মন্দার মতোই। বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকায়। কভিড-১৯, ইউক্রেন যুদ্ধ ও ইনফ্ল্যাশনের কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তারা খাদ্য, ওষুধ ও ঘরভাড়া, ক্রেডিট কার্ডের বিল ও ফোন বিল দিতে দিতেই অতিষ্ঠ। সেখানে তাদের আরেক জোড়া জুতা কিনতে হলে তারা কেন কিনবে? একজন ইউরোপীয় ও আমেরিকান গ্রাহকদের ঘরে তো চার-সাত জোড়া জুতা এর মধ্যেই রয়েছে। বাংলাদেশেও খুব কম লোক রয়েছে জুতাহীন। সেজন্য আমি মনে করি আমরা যদি ব্যবসার খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, তাহলে আমরা প্রতিযোগিতার যোগ্যতা হারাব। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উত্তরণ বা গ্র্যাজুয়েশন হলে শুল্কহীন সুবিধা হারাব। উল্টো ৯ শতাংশ শুল্কের বোঝা দাঁড়াবে। এখন থেকে ব্যয় আরো ১২ শতাংশ কমাতে হবে। কিন্তু সুদহার বাড়ানো হচ্ছে, ট্যাক্স রেট বাড়ছে, পরিবহন খরচ বাড়ছে, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে জমির দাম। এখানে সরকারের কিছু দীর্ঘমেয়াদি পলিসি গ্রহণ করা দরকার। অবশ্যই কিছু নীতিমালা গৃহীত হচ্ছে। কিন্তু মাথায় রাখা দরকার, গ্র্যাজুয়েশেনের আগেই মার্কেটটা ধরে ফেলতে হবে। ২০২৬ সালেই গ্র্যাজুয়েশন, এর মধ্যেই ব্যবসাকে সে পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।

আরেকটা প্রতিবন্ধকতা হলো লিড সময়। কোনো ক্রেতাই ছয় মাস আগে অর্ডার দেবে না। সে যত কম মজুদ দিয়ে ব্যবসা করতে পারে, তত তার লাভ। আমি লাভ দিয়ে অর্ডার দেব, খুব দ্রুত সরবরাহ করতে হবে। আমাদের চলমান লিড টাইম ১০০ দিনের কাছাকাছি। এক গ্রাহক সম্প্রতি জানাল, ৩০ দিন কমাতে পারলে সে চীন ছেড়ে আমাদের কাছে আসবে। কিন্তু ৩০ দিন কমানো সহজ না। ইমপোর্টে মাল খালাস থেকে শুরু করে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে ১১ দিন সময় লাগে। সব ঠিক থাকলেই ১১ দিন। বেশি লাগলে তো আসছে। এক্সপোর্টে লাগে সাতদিন। এ টাইমগুলো বাঁচাতে পারলে অগ্রগতি হতো খাতটিতে। সাপ্লাই চেইনকে স্থানীয়করণ করা যেতে পারলেও লিড টাইম কমানো যায়। তখন স্পিড বেড়ে যাবে। স্বল্প সময়ের মধ্যে জুতা তৈরি করে মার্কেটে পৌঁছে দিতে পারবেন। এটার ওপর ভর করেই চীন এত বড় জায়গা ধরে রেখেছে। তাদের লিড টাইম অনেক কম। কম সময়ের আপনি জুতাটা তৈরি করে মার্কেটে পৌঁচ্ছে দিতে পারবেন। এটার ওপরেই কিন্তু চায়না তাদের লিড ধরে রেখেছিল। তাদের লিড টাইমটা খুব শর্ট। তাই আমার মনে হয় দুটি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ Cost of Doing Business আর lead Time। তৃতীয় যেটা খুব প্রয়োজন সেটা হলো বাংলাদেশে যে কাস্টমের যেসব রুল আছে, যার কারণে আমরা অনেক সময়ে পেছনে পড়ে যাই। আপনি যদি দেখেন বাংলাদেশের গার্মেট ইন্ডাস্ট্রির পেছনে দুটি বড় ইনোভেশন কাজ করেছিল। একটা ছিল ব্যাক টু ব্যাক এলসি আর একটা ছিল বন্ড। তার পরে নতুন কোনো ইনোভেশন হয়েছে তা কিন্তু আমার জানা নেই। এখন সময় এসেছে নতুন করে ইনোভেশন করা। আমি যদি উদাহরণ দিই সবার কেন ঘরে ঘরে বন্ড থাকতে হবে, সেখান থেকে লিকেজ হবে, কোরাপশন হবে ইত্যাদি আমরাও কিন্তু এটা চাই না। কিন্তু আমরা কেন কমন বন্ডেড ওয়্যারহাউজ বা সেন্টার বন্ডেড ওয়্যারহাউজ দেখতে পাই না। যেমন ধরেন আপনি একজন ব্যবসায়ী, আপনি বললেন আপনার সব সু কম্পোনেন্ট ডিউটি ফ্রি রাখব আর মজুদটা আমি ঢাকায় রাখব। এ পদ্ধতি কিন্তু চেন্নাই, ভিয়েতনাম, চায়নায় ২০ বছর ধরে চলছে। আমরা কেবল বলছি কিন্তু তার বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আমরা বলছি, কেইস বাই কেইস এপ্লিকেশন দিতে কিন্তু আমরা বলছি সবাইকে এটা খুলে দেন। আর একটা যেমন বড় সমস্যা হচ্ছে সেটা হলো পেপার ওয়ার্ক আমাদের তাইওয়ানের সঙ্গে একটা জয়েন্ট ভেঞ্চার রয়েছে, সেখান থেকে বলেছিল নাসিম আমরা যখন ভিয়েতনাম একটা কন্টেনার জুতার র মেটেরিয়াল পাঠায়, তখন আমাদের পেপার ওয়ার্ক দেড় পাতা থেকে দুই পাতার কাজ হয়ে থাকে কিন্তু সে জায়গায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা হয় ৭-১১ পাতা। আমাদের এত কাগজি লেখা পড়ায় কী লাভ হয় তা আসলেই একটা বড় প্রশ্ন। এখানে কিন্তু শুল্কায়নের কোনো ব্যাপার নয়, এটি সম্পূর্ণ ডিউটি ফ্রি। আসলে এগুলো কিন্তু সব ইনেফেশিয়েন্সি। আমরা কোনো বেআইনি কাজ সমর্থন করছি না। কেউ বেআইনি কিছু করলে তাকে আইন অনুযায়ী সাজা দেন, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা বলছি, কাস্টমের প্রক্রিয়াটাকে সহজ করতে হবে, অনলাইনভিত্তিক করতে হবে, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো এনএসডব্লিউ এটা হবে, আমরা শুনছি হবে হবে এখন পর্যন্ত তা তৈরি হয়নি। এখন শোনা যাচ্ছে ২০২৬ পর্যন্ত সময় লাগবে। বন্ডের দরকার নেই আপনি জুতার মেইন কম্পোনেন্ট রয়েছে, সেগুলোয় যদি ট্যাক্স কমিয়ে দেন তাহলে যাতে মানুষ খুব সহজে আমদানি করে রফতানি করতে পারে। যেমন বাবু বাজারে শতশত ফ্যাক্টরি আছে, তারা কিন্তু বন্ড লাইসেন্স ম্যানেজ করতে পারবে না। তাদের এভাবে আমদানি করার ব্যবস্থা করে দেন। তবে কেন এটা হচ্ছে না আমি সত্যি জানি না।

এখন আপনাদের রফতানির ক্ষেত্রে বার্ষিক উৎপাদন পরিমাণ কত?

আমরা এখনো বার্ষিক রফতানি করতে পারি ৩৫ লাখ জোড়া জুতা।

ভ্যালু অনুযায়ী রফতানি কত হয়?

আমাদের এখন ৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার রফতানি করা হয়। আমরা এখন একে ১০ কোটি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কভিড-১৯-এর আগে আমরা ১০ কোটির কাছাকাছি ছিলাম। কভিড-১৯-এর পর আমরা ট্রেকে ফিরে আসার চেষ্টা করছি আর এ প্রক্রিয়া কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। আরেকটা বিষয় হয়েছে কভিড-১৯-এর সময় বিভিন্ন দেশে ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল, তাই তখন তারা অধিক মাত্রায় কিনেছিল। যে কারণে তাদের ইনভেন্টরি বা মজুদ এখন পর্যাপ্ত। তাই তারা বল,ছে আমাদের স্টক কমে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা নতুন অর্ডার দেব না। তাই স্বাভাবিকভাবে আমাদের সক্ষমতা পুরো ব্যবহার হচ্ছে না। এ অবস্থায় আমাদের ব্যয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার দিকে মনোনিবেশ করা দরকার।

রফতানি ট্যাক্স বলে একটা জিনিস আছে, যেখানে আমরা যখন রফতানি করতাম, তখন প্রতি রফতানিতে দশমিক ৫ শতাংশ আমাদের টার্ন ওভার থেকে দিতে হতো। এটা কিন্তু ইনকাম ট্যাক্স না রেভিনিউ ট্যাক্স। সেটা গত বাজেটে হঠাৎ করে ১ শতাংশ করা হয়েছে। আমরা যদি পলিসির যদি কোনো প্রকার কনটিনিউটি না দেখতে পারি, তাহলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিযোগ কিন্তু আমাদের সেক্টরে বাধাগ্রস্ত হবে। আমার মতে, সরকার যদি একটু ব্যবসাগুলোর বিনিয়োগের কথাগুলো বিবেচনা করত, তাহলে অত্যন্ত ভালো হতো।

সব যদি ঠিক থাকে, চাম ও চামড়াজাত প্রডাক্ট এ খাত স্টেবল করা যাবে কবে নাগাদ?

আমরা মনে করি পলিসি যদি প্রেডিক্টেবল ও ব্যবসা সহায়ক করা যায়, তাহলে এ সেক্টর থেকে ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব। বিদেশী ক্রেতা যখন এদিকে এসে দেখে এক বছর থেকে অন্য বছরে পলিসির মধ্যে এত তফাত বা পরিবর্তন ও অনিশ্চয়তা, তখন তারাও পিছে ফিরে যায়। আমার মনে হয় আমাদের দীর্ঘমেয়াদি একটি কন্সিটেন্সি তৈরি করা। পলিসির স্থিতিশীলতা থাকলে শুধু আমাদের সেক্টর নয় সব সেক্টরে বিনিয়োগ বিশেষভাবে বাড়বে।

আমাদের ফুটওয়্যারের ম্যাটেরিয়ালসটা চামড়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় নির্ভরতা ও রফতানি নির্ভরশীলতা কেমন?

ওই যে বললাম সমস্যাটি হচ্ছে এলডব্লিউজি স্যান্ডার্ড। এটা হচ্ছে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ একটা স্যান্ডার্ড। বিশ্বে অনেক স্যান্ডার্ড রয়েছে। আসলে ব্যাপারটি হচ্ছে বিশ্বের কোথাও পরিবেশবান্ধব ছাড়া আপনি আপনার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারবেন না। ইউরোপ ও আমেরিকায়ও কিন্তু এখন দেখা হচ্ছে, তারা যেখান থেকে কিনছে সেখান থেকে সাপ্লাই চেইন ঠিকমতো আছে কিনা। তারা যখন দেখছে, হাজারিবাগ দুনিয়ার সবচেয়ে দূষিত জায়গা, সেখান থেকে যখন সরকার আমাদের সাভারে স্থানান্তর করল, তখন কিন্তু একটা কথা ছিল সিইটিপি সেন্ট্রাল পলিউশন প্লান্ট কাজ করবে। সেটা কিন্তু আজ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। এটি করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিসিককে, তারাও কিন্তু করতে পারিনি ও পারবে না। সেখানে আমাদের হিসাবে যেখানে বছরে আমরা ৩৫ কোটি বর্গফুট কাঁচা চামড়া আহরণ করি। এটাকে কিন্তু ভালো ব্র্যান্ডের জন্য ব্যবহার করতে পারছেন না। কারণ এটা সাভারে এটা পরিবেশবান্ধব উপায়ে তৈরি হচ্ছে না। তাই সাভারে সিইটিপিটা ঠিক করা খুব প্রয়োজন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন