সপ্তম টিকফা বৈঠক শুরু আজ

যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানিতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চাইবে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) সংক্রান্ত পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আজ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য এ বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে এমন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বাংলাদেশের তরফে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলাজাত সুতা-কাপড় থেকে তৈরি পোশাক দেশটিতে রফতানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চাওয়া হবে। 

বৈঠকে বিনিয়োগ পরিবেশ, ডিজিটাল বাণিজ্য, মেধাস্বত্ব সম্পদ ও কৃষি খাতে সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হবে। ঢাকার তরফে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী ওষুধ পণ্যের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজীকরণের ওপর জোর দেয়া হবে। এছাড়া বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন আর্থিক সহযোগিতা বা ডিএফসি সহায়তার বিষয়টিও তুলে ধরবে ঢাকা। 

টিকফা কার্যকর হয় ২০১৩ সালে। এর পর থেকে নিয়মিত বিরতিতে বৈঠকে বসছে দুই পক্ষ। সর্বশেষ ষষ্ঠ সভা অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে। ঢাকার একটি হোটেলে আজ অনুষ্ঠিত হবে সপ্তম বৈঠক। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাণিজ্যবিষয়ক প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ব্রেন্ডন লিঞ্চ। 

ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, আজকের বৈঠকে মূলত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে প্রভাব রয়েছে এমন বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র থেকেও একই ধরনের তথ্য জানা গেছে। 

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘২০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম চুক্তি (টিআইসিএফএ) কাউন্সিলের সপ্তম বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে। উভয় পক্ষ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ককে প্রভাবিত করে এমন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। এর মধ্যে রয়েছে শ্রম সমস্যা, বিনিয়োগের পরিবেশ, ডিজিটাল বাণিজ্য, মেধাস্বত্ব ও কৃষি খাতে সহযোগিতা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন ইউএসটিআরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ব্রেন্ডন লিঞ্চ।’ 

বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে শ্রমের বিষয়টিও রয়েছে। এক্ষেত্রে আলোচনায় আসবে বাংলাদেশে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন এবং বিদ্যমান শ্রমচর্চার মতো বিষয়গুলো। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের শ্রম অধিকারসহ শ্রম আইনের সংস্কারও রয়েছে আলোচ্যসূচিতে। এছাড়া শ্রম পরিদর্শন ও পরিদর্শন সক্ষমতার বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। 

কারিগরি সহায়তা নিয়েও দুই পক্ষের আলোচনা হবে। এক্ষেত্রে এলডিসি থেকে উত্তরণ এবং মানসম্পন্ন সনদ প্রদান অবকাঠামোর ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা নিয়ে আলাপ হতে পারে। বিনিয়োগ পরিবেশও রয়েছে টিকফা বৈঠকের এজেন্ডায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। মুনাফা প্রত্যাবাসন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাপ্য অর্থ পরিশোধের মতো বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হতে পারে। 

ডিজিটাল বাণিজ্য নীতিও রয়েছে টিকফা বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে। এক্ষেত্রে খসড়া ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট, ডিজিটাল, সামাজিক মাধ্যম ও ওটিটি প্লাটফর্মের জন্য খসড়া বিধির বিষয়টি গুরুত্ব পেতে পারে। কৃষি বাণিজ্যও গুরুত্ব পাবে বৈঠকে। কৃষি খাতের উন্নয়নে সহযোগিতা এবং কৃষি বায়োটেকনোলজি বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। শুল্ক ও বাণিজ্য সহায়তাও রয়েছে বৈঠকের এজেন্ডায়। এক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) শুল্ক মূল্যায়ন চুক্তি এবং বাণিজ্য সহায়তা বা টিএফএ বাস্তবায়নের মতো বিষয়গুলো সামনে আসতে পারে। 

১৮ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত টিকফা বৈঠকের প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে এ নিয়ে কথা বলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা শ্রম অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। অন্যদিকে বাংলাদেশের তরফে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলায় বানানো আরএমজি (তৈরি পোশাক) পণ্য দেশটির বাজারে রফতানির ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশে যেটুকু ভ্যালু অ্যাডিশন হবে, তার ওপর শুল্কারোপের প্রস্তাব করবে বাংলাদেশ।’ 

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যবিষয়ক প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ব্রেন্ডন লিঞ্চের একটি সাক্ষাৎকার গত ২৪ মে বণিক বার্তায় প্রকাশিত হয়েছিল। টিকফার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার অগ্রগতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী? ওই সাক্ষাৎকারে বণিক বার্তার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘বাণিজ্য বাধা কমিয়ে আনা এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণের উপায় খুঁজে বের করার একটি কার্যকর প্রক্রিয়া হলো টিকফা। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ওয়াশিংটনে টিকফা কাউন্সিলের ষষ্ঠ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে, এমন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। কৃষিপণ্যের বাজারে প্রবেশাধিকারসহ আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল শ্রম অধিকার, বাণিজ্যের কারিগরি বাধা, ডিজিটাল বাণিজ্য নীতি, মেধাসম্পদ সুরক্ষা ও প্রয়োগ এবং বিনিয়োগ পরিবেশে প্রভাব ফেলে এমন নীতি। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ উভয়েই শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্কের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে। এ কারণে ২০২১ সালে পণ্য বাণিজ্য ১০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। আমরা তখন সম্মত হয়েছিলাম যে টেকসই ও কারিগরি কার্যক্রমের মাধ্যমে ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ানোর জন্য টিকফার ব্যবহার আমরা অব্যাহত রাখব।’ 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন