ভূরাজনৈতিক টানাপড়েন

চীনে ব্যবসা পরিচালনায় বিপাকে মার্কিন কোম্পানিগুলো

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি: সিএনবিসি

ভূরাজনৈতিক টানাপড়েনে বিপত্তিতে পড়েছে চীনে কার্যক্রম পরিচালনাকারী মার্কিন কোম্পানিগুলো। দুই দেশের মধ্যে প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে নিষেধাজ্ঞামূলক সম্পর্ক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বেইজিংয়ে কার্যক্রম পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর পরিকল্পনায়। এদের কেউ কেউ চীন থেকে ব্যবসা সরিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছে। কেউ কেউ কমিয়ে আনছে বিনিয়োগের পরিমাণ। সাংহাইয়ে অবস্থিত আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের পরিচালিত জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য। খবর এপি।

৩২৫টি কোম্পানি নিয়ে জরিপ চালিয়েছে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স। তাদের দুই-তৃতীয়াংশেরই বাণিজ্যিক কার্যক্রম থেকে চীনকে বাদ দেয়ার আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে অনেকেই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেইজিংকে অগ্রাধিকারের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। প্রতি পাঁচটি কোম্পানির মধ্যে একটি চলতি বছর চীনে বিনিয়োগ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর প্রধান কারণ চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যিক সম্পর্ক। পাশাপাশি চীনের প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতির চাপ তো রয়েছেই।

সার্বিকভাবে গত বছরের তুলনায় বিনিয়োগকারীদের পরিস্থিতি আরো নেতিবাচক দিকে বাঁক নিয়েছে। কোম্পানিগুলো যদিও কভিডকালীন বিধিনিষেধ থেকে বের হয়ে আসছে। পর্যটন ও পরিবহন পুনরায় চালু করা হয়েছে। তবে বিধিনিষেধের প্রভাবে কোম্পানিগুলো চীনের বাইরে ব্যবসা পরিচালনায় আগ্রহী হয়ে পড়ছে। 

জরিপে অংশ নেয়া ৫২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান মনে করে, চীনে পাঁচ বছর পর তাদের কোম্পানির পরিস্থিতি নিয়ে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে এবার ইতিবাচক পূর্বাভাসের মাত্রা ছিল জরিপ শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বনিম্ন। ১৯৯৯ সালে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স প্রথমবারের মতো সাংহাইয়ে জরিপ পরিচালনা করে। 

চীনে কার্যক্রম পরিচালনা করে, এমন প্রতি ১০টি কোম্পানির মধ্যে নয়টিই মনে করে আগামী দিনগুলোয় খরচ বৃদ্ধি কোম্পানিগুলোর জন্য বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে। মহামারী-পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক মন্থরতার পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক টানাপড়েনকেও বড় কারণ হিসেবে দেখছে কোম্পানিগুলো। নীতিগত কারণে প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। স্থানীয় কোম্পানিগুলো চীনে বেশি সুবিধা পাচ্ছে। আদালত চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। প্যাটেন্ট ও ট্রেডমার্কের মতো বিষয়ে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে।

চীনে রাষ্ট্র মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসার কারণে বিদেশী কোম্পানিগুলো বেকায়দায় পড়েছে। বাজার ক্রমেই তাদের প্রতিকূলে চলে যাচ্ছে। যে কোম্পানিগুলো চীনের বাজারে প্রযুক্তিগত পণ্য, সফটওয়্যার ও পরিষেবা বিক্রি করে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। জাতীয় নিরাপত্তার নামে যেসব বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সীমিত করে দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। মার্কিন কোম্পানিগুলোর কাছে এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রধান পছন্দ আকারে হাজির হয়েছে। ২০২২ সালে শিল্পোৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনাকারীদের ৪০ শতাংশ চীনকে তাদের বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য মনে করতেন। চলতি বছর এ হার ২৬ শতাংশে নেমে এসেছে।

মার্কিন কোম্পানিগুলো চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে নীতিমালার স্বচ্ছতা নিয়ে বেশ কয়েকবার আবেদন করেছে। অ্যামচ্যাম সাংহাইয়ের চেয়ারম্যান সিয়ান স্টেইন মনে করেন, কোম্পানিগুলো অনেকটা বিব্রত পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছে। আর্থিক ও ফার্মাসিউটিক্যালস খাতের জন্যও নীতিমালা যথেষ্ট স্বচ্ছ নয়। চীনের বাণিজ্যিক পরিবেশ ক্রমেই দুর্বোধ্য ও প্রতিকূল হয়ে উঠছে। 

দি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চেম্বার অব কমার্স জানিয়েছে, সদস্যরা এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিনিয়োগ সরিয়ে নিচ্ছে। তবে নানা প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও কিছু বিষয়ে অগ্রগতি এসেছে। চীন-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতি না ঘটলে বাণিজ্য থেকে এ ঝুঁকি কমবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন