সময়ের ভাবনা

নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জীবনমানে মূল্যস্ফীতির অভিঘাত

ড. মিহির কুমার রায়

সাম্প্রতিক সামষ্টিক অর্থনীতির পর্যালোচনায় ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্বের হার নিয়ে খুব আলোচনা হয়, যা এর আগে তেমনটি দেখা যায়নি। গত ১ জুন মহান জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হয়েছে, যেখানে মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং গত বছরের বাজেট বক্তৃতায় মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২২ শতাংশ। অথচ বাজার বলছে, দ্রব্যমূল্যের যে পরিস্থিতি ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে তাতে মূল্যস্ফীতি এখন ১২ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে গত এক বছরের মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী এবং ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে গত মে মাসে (৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ)। একই মাসে গত বছরে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। আগস্টে খাদ্যপণ্য মূল্যবৃদ্ধির রেকর্ড গড়েছে। চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাক জাতীয় পণ্যের দাম বাড়ায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। ২০২০ সালে খাদ্য খাতে ১০০ টাকার পণ্যে ৫ টাকা ৫৬ পয়সা বৃদ্ধি হয়েছিল। একই পণ্যে ২০২৩ সালের আগস্টে বেড়েছে ১২ টাকা ৫৪ পয়সা। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতিতে অসহায় অবস্থায় পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। গত ১৫ বছরে ক্ষুধা জয়ের ক্ষেত্রে অনন্য সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। মানুষের জীবনমান নিঃসন্দেহে বেড়েছে। তবে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতির যে ভয়াল দৈত্য দেশের মানুষের ওপর চেপে বসেছে তাতে ক্ষুধার জ্বালা না বাড়লেও জীবনমান কমছে। খাদ্যপণ্যের পেছনে অর্থ ব্যয় করতে গিয়ে অন্যান্য খাতের চাহিদা অপূরণ থাকছে। এমনকি চিকিৎসা ব্যয়ের ক্ষেত্রেও কৃচ্ছ্রসাধন চলছে। এ সংকটের সমাধান মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানা। সরকারের সুনামও এর সঙ্গে জড়িত। শহর ও গ্রামের মধ্যে তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে, গ্রামে এর ধকল বেশি। গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অন্যদিকে শহরের সার্বিক মূল্যস্ফীতি হচ্ছে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এটা হচ্ছে আমাদের সার্বিক মূল্যস্ফীতির চিত্র। অন্যদিকে প্রান্তিক আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সবার আগে আমলে নিতে হয়। 

সরকার যে মূল্যস্ফীতির উপাত্ত প্রকাশ করেছে প্রকৃত চিত্র তা হলেও কিন্তু প্রান্তিক আয়ের মানুষের জন্য তা ভয়ানক। মূল্যস্ফীতির হার মাঝেমধ্যে একটু কমতেই পারে। কিন্তু এর পুঞ্জীভূত বিরূপ প্রভাব সর্বদা বহমান। গড় দাম কিংবা দামস্তর একবার বাড়লে তা তো নেমে আসবে না যদি না মূল্যস্ফীতি ঋণাত্মক হয়। আনুপাতিক হারে আয় না বাড়লে ভোগের ওপর এর বিরূপ প্রভাব বিদ্যমান থাকবেই। আর উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলতে থাকলে জীবনযাপন কঠিন থেকে কঠিনতর হবে, এটাই স্বাভাবিক। মূল্যস্ফীতির যে চাপ তা সবার ওপরই পড়ে এবং সেটা বুঝতে কোনো বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। কোনো দেশে যখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকে তা সবাইকে প্রভাবিত করে। তার পরও উচ্চ ও মধ্যম আয়ের মানুষ চাপ থাকলেও মানিয়ে নেয়। কিন্তু যারা নিম্ন আয়ের মানুষ এমনিতেই তাদের নুন আনতে পানতা ফুরায়, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির মানে হলো সামগ্রিকভাবে অতিরিক্ত চাপ। জীবনধারণের জন্য যে ন্যূনতম ভোগ প্রয়োজন তাদের জন্য তা ধরে রাখা কঠিন। মূল্যস্ফীতি সহসাই যে নেমে আসবে সে রকম আশাব্যঞ্জক কিছু সামনে দেখছি না। 

অনেকেই মুদ্রাস্ফীতির কারণকে অনেকভাবেই বিশ্লেষণ করেছেন। যেমন বিদেশ থেকে আমদানীকৃত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি; দেশজ উৎপাদনে ঘাটতি; পণ্য সরবরাহে ঘাটতি; মুদ্রার বিনিময় হার; শুল্ক ও বিশেষ শুল্কহার; মুদ্রা সরবরাহ; বাণিজ্য ঘাটতি; বাজেট ঘাটতি; বিদেশের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে ভারসাম্যহীনতা; সুদের হার; ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের অতিমাত্রায় ঋণ গ্রহণ; পণ্যের একচেটিয়া মূল্য নির্ধারণ; শ্রমিক ইউনিয়নের মজুরি বাড়ানোর চাপ; শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর মধ্যে খাতওয়ারি মজুরি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা; মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতিতে অসামঞ্জস্য; সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর নিজেদের মধ্যে জীবনমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিযোগিতার মতো কারণগুলো। মূল্যস্ফীতির কারণ যেমন একটি নয়, তেমনি এর প্রতিকারও একটি সূচকের তারতম্য করার মাধ্যমে সম্ভব নয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, বাজারে পণ্যের মজুদ ও মুদ্রার পরিমাণের মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হয়। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাংক যখন অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপে, তখন মূল্যস্ফীতি ঘটে। 

মূল্যস্ফীতির হার যদি দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে সেটি সঠিক হয় না, অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে বর্তমানে দেশে জিডিপির চেয়ে মূল্যস্ফীতির হারের প্রবণতা বেশি। এ অবস্থায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে ধরা হয়েছে, যা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের মধ্যে। সম্প্রতি বিআইডিএসের গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে গরিব মানুষের অর্ধেকের বেশি ‘নতুন দরিদ্র’। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সপ্তম ধাপের (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) ফলাফল অনুযায়ী, এ মুহূর্তে বাংলাদেশী খানাগুলোর প্রায় অর্ধেকই খাদ্যের উচ্চমূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে। জরিপে দেখা যায়, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিকে সবচেয়ে বড় আর্থিক ধাক্কা হিসেবে চিহ্নিত করেছে ৪৮ শতাংশ খানা। এই যে মূল্যস্ফীতি, তা সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক উত্থানকে বাধাগ্রস্ত করছে। মূল্যস্ফীতি মধ্যবিত্তকে নামাচ্ছে নিম্ন-মধ্যবিত্তে, আর নিম্ন-মধ্যবিত্তকে নিয়ে যাচ্ছে নিম্নবিত্তে। এতে স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

অতিসম্প্রতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের (জুলাই-ডিসেম্বর ’২৩) প্রথমার্ধের জন্য গত ১৮ জুন ২০২৩ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঘোষিত মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামগ্রিক বাজার অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতার মাধ্যমে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিষয়ে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য সময়োপযোগী ও দিকনির্দেশনামূলক। ঘোষিত মুদ্রানীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো—মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রেপো হার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে। এতে এ হার ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে হবে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, সেই সঙ্গে রিভার্স রেপো হার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়ে ৪ দশমিক ২৫ থেকে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে; মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে এবার সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে; নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদহার সীমাও তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, সুদহার সীমার বদলে প্রতিযোগিতামূলক ও বাজারভিত্তিক সুদহার কার্যকর হবে, যদিও তার মার্জিন থাকবে, টাকার সরবরাহ কমিয়ে এনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাটাই উদ্দেশ্য। তা-ই যদি হয় তবে মূল্যস্ফীতির প্রভাবটা নিম্ন-মধ্যবিত্ত বা দরিদ্র জনগণকে কীভাবে প্রভাবিত করছে কিংবা এ সমাজের মানুষ কী অবস্থায় আছে তার একটি নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ সময়ের দাবি। অর্থনীতিবিদরা এ শ্রেণীকে পরিমাপ করেন আয়-ব্যয়ের নিরিখে, যা একইভাবে চিহ্নিত করাও হয় না। পিপিআরসি নিম্ন-মধ্যবিত্তকে চিহ্নিত করেছে তাদেরকে যাদের আয় মাসে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ হোমিও খোরাসের মতে, এ শ্রেণীর জীবনে গুণমান, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও আত্মনির্ভরশীলতা থাকে। নানা পেশা থেকে তাদের আবির্ভাব হয় যারা নতুন নতুন পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা তৈরি করে। এ শ্রেণী শুধু আবশ্যক পণ্যই কেনে না, তারা শৌখিন পণ্যও ক্রয় করে। এটিই তাদের অর্থনৈতিক চরিত্র। 

স্থানীয় অর্থনীতি এখন এমন একটা পর্যায়ে রয়েছে যেখানে ছোট দোকান ও কৃষিজমির মালিক কিংবা শিল্প ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বল্প দক্ষ কর্মী। তাদের জীবন সহজ না হলেও ঘরে তাদের পর্যাপ্ত খাবার থাকে। তারা আয়ের অর্ধেক অর্থ মৌলিক প্রয়োজনের জন্য ব্যয় করে। অন্যান্য অনেক কেনাকাটা সেকেন্ডহ্যান্ড বা অনানুষ্ঠানিক অথবা খোলা বাজার থেকে কেনাকাটা করে। কিন্তু এ গোষ্ঠীর উত্তরণের স্বপ্ন খেয়ে ফেলছে মূল্যস্ফীতি। বরং তাদের অবস্থা আরো নাজুক হচ্ছে। আয়ের এখন পুরোটাই তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য কিনতে খরচ করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে যারা মধ্যবিত্ত পর্যায়ে ছিল, তারাও পড়তির দিকে। তাদের অনেকেই আয়-ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয় করতে না পেরে দরিদ্রের খাতায় নাম লেখাচ্ছে। স্থানীয় পণ্যের উচ্চমূল্য এবং মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা এটি মনে রাখতে হবে যে মূল্যস্ফীতির চাপ আরো কিছু সময় থাকবে। এটি সারা পৃথিবীতেই অনুভূত হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকে দুটি বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এর জন্য দেশের ভেতরে উৎপাদিত পণ্য এবং আমদানীকৃত পণ্যের সংগ্রহ বাড়াতে হবে; দ্বিতীয়ত, দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা দিতে হবে যাতে তারা বাজার থেকে পণ্য কিনতে পারে। তাদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা দিতে হবে। এছাড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিতে হবে, যাতে তাদের ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এ কার্যক্রমগুলোর জন্য প্রচুর অর্থ প্রয়োজন, এর জোগান কে দেবে? তাই সরকারকে কয়েকটি বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। যেমন আমাদের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ খুবই কম যা বর্তমানে কর-জিডিপির হার মাত্র ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নিম্নতম। অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালন না বাড়ালে উন্নয়ন কার্যক্রমে এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে পারব না; তারপর বিষয়টি হলো সুশাসন অর্থাৎ সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে, অপ্রয়োজনীয় খরচ, প্রকল্প বাস্তবায়নে অপচয় রোধ ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে, সরকার এরই মধ্যে ব্যয় কমানোর ব্যাপারে কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। সেগুলো ভালো উদ্যোগ। কিন্তু আরো সাশ্রয়ের সুযোগ রয়েছে; আরেকটি বিষয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে এবং রফতানি আয় সে তুলনায় বাড়ছে না, রেমিট্যান্স প্রবাহও বাড়ছে না, চলতি হিসাবে বিরাট ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এটি চলতে থাকলে তা বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে চাপ সৃষ্টি করবে। এতে টাকার মান আরো কমবে এবং মূল্যস্ফীতিও বাড়বে। সুতরাং মূল্যস্ফীতি কমানোর বিষয়টি অনেক পদক্ষেপের সঙ্গে জড়িত। এটি পূর্ণাঙ্গ নীতি পদক্ষেপের মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব সেটি করতে হবে। কেননা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপ অব্যাহত থাকলে তা সমাজে আরো বৈষম্য বাড়াবে, যেটি মোটেই কাম্য নয়। আর স্থানীয় অর্থনীতি হবে ক্ষতিগ্রস্ত।

ভোক্তা অধিকার সংস্থা, টিসিবি, পণ্য বিপণন ব্যবস্থাপনা, চাহিদা সরবরাহ নেটওয়ার্ক এবং সর্বোপরি আমদানি-রফতানি ব্যবস্থাপনায় কঠোর নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা আনয়নপূর্বক এ সমস্যা সমাধানে তৎপর হতে হবে। অধিকন্তু বিভিন্ন বাজার কমিটি দ্রব্যসামগ্রীর গুণাগুণ যাচাই কমিটি, মালামাল সংরক্ষণ ও গুদামজাত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং সর্বোপরি মহানগর ও পৌর এলাকার বাজারগুলোয় তাদের নিজস্ব পরিদর্শন টিমের আন্তরিকতার সঙ্গে তদারকি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। আর সবার সমন্বিত কার্যক্রমে এ দুরবস্থার নিরসন সম্ভব হবে। সব কিছুর দাম বাড়ায় সংসার খরচ বেড়ে গেছে। যে কারণে আয়ের সিংহভাগ চলে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের পেছনে। চাহিদার সঙ্গে দাম যাতে না বাড়ে, সেজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো দৃশ্যত কিছু বিশেষ ব্যবস্থাও নিয়ে থাকে। তবে আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, এসব ব্যবস্থা বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিপণন, বাজার মনিটরিং ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, এগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন রাখতে বিশেষ করে কৃষিপণ্যের সরবরাহে যাতে কোনো বাধার সৃষ্টি হতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের।

ড. মিহির কুমার রায়: অর্থনীতিবিদ 

ডিন, ব্যবসা প্রশাসন অনুষদ, সিটি ইউনিভার্সিটি 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন