লেখক-শিক্ষক-সাংবাদিক সমাবেশে বক্তারা

ভোটাধিকার ফেরত পেলে বাস্তবায়ন হবে অন্য সব অধিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গতকাল লেখক, শিল্পী, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের সমাবেশে বক্তব্য দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

অর্থনৈতিক সংকট ও ডেঙ্গুর মতো সমস্যাগুলো প্রকট হলেও বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় সংকট ভোটাধিকার। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমেই অন্য সব সংকট দূর হবে। ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দাবিতে গতকাল শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে লেখক, শিল্পী, শিক্ষক ও সাংবাদিক সমাবেশে এসব কথা বলেন বক্তারা। 

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর, অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষক আনু মুহাম্মদ, আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মো. আজম, লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী ফিরোজ আহমেদসহ অন্যান্য লেখক, শিল্পী, শিক্ষক ও সাংবাদিক। 

নুরুল কবীর বলেন, ‘আঠারো শতকে ইউরোপে সর্বজনীন ভোটাধিকারের জন্য ইউরোপের মানুষ লড়াই করেছিল। এত শতকের পর এ দেশের জন্য সেই অধিকারের দাবি করতে হয়। এটা সারা বিশ্বের জন্যই অত্যন্ত লজ্জার। এ লড়াই আন্তর্জাতিক দায়বোধের অংশ। পাশাপাশি বাকস্বাধীনতা ছাড়া একটা মানুষ চিন্তাশীল জীবন যাপন করতে পারে না। সেই বিবেকী চিন্তা যখন প্রকাশের সুযোগ থাকে না, এর মানে রাষ্ট্র পুরো সমাজের বুদ্ধিকে বন্দি করেছে। এ বন্দিত্ব থেকে মুক্তির জন্য বাকস্বাধীনতা জরুরি।’ 

লেখক-সাংবাদিকসহ নানা পেশার মানুষ একটা ভয়ের মধ্যে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ ভয় এখন উল্টোদিকে সংক্রমিত হতে শুরু করেছে। যেখানে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, তিনি ভয় পাচ্ছেন। আমি নিশ্চিত তার এ ভয় সংক্রমিত হতে থাকবে।’ 

নিউ এজ সম্পাদক বলেন, ‘বিরোধী শিবিরের অনেক রাজনৈতিক দলও এ দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের সঙ্গে আমাদের একটা মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে আমাদের দাবিগুলো কোনো নির্দিষ্ট রেজিমের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। আমাদের দাবি সারা দেশের মানুষের জন্য। এছাড়া যারা গণতন্ত্রের কথা বলছে, আবার যারা ক্ষমতায় আছে তাদের উভয়েরই বিদেশনির্ভর করে রাখার আত্মমর্যাদাহীন কাজের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ হওয়া উচিত।’

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘নানা রকম ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। যেখানে তার অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে ভোটাধিকারের জন্য সমাবেশ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়াটা আমাদের সবার জন্যই পরাজয়। এ সময় আরো গণতান্ত্রিক অধিকারের সম্প্রসারণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা না হয়ে আমরা একটা প্রাথমিক জায়গায় আটকে আছি।’ 

তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, দিল্লিতে বাইডেন ও মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছে। যেটা আমাদের জন্য আরো একটি ব্যর্থতা। আমাদের ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের জন্য যে আন্দোলন তা কার্যত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে দিল্লি কিংবা বেইজিং থেকে ফিরিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসার আন্দোলন। এ দেশের মানুষ নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারে। সেজন্যই এ আন্দোলনের সম্প্রসারণ প্রয়োজন। এ আন্দোলনই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আন্দোলন। পাশাপাশি যারা লেখক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত তারা দায়িত্ব পালনে কেবল ব্যর্থই নয়, বরং দায়িত্বহীন ভূমিকা পালন করছেন। তরুণদের মধ্য থেকে বুদ্ধিজীবী সমাজের তৈরি হওয়া প্রয়োজন। যেটা এ সমাবেশের মধ্য দিয়ে ধারাবাহিকতা তৈরি হবে।’ 

সমাবেশে লেখক ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘আমরা এখন অবরুদ্ধ ও নির্লজ্জ সময়ের মধ্যে আছি। ডেঙ্গু ও অন্যান্য বিষয়ের পরিবর্তে যেখানে মূল বিষয় হলো লুণ্ঠন। যেখানে উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে ডেঙ্গু আর দিন শেষে মারা যাচ্ছে মানুষ।’

ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশকে একই দাবি উল্লেখ করে আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভোট হলো নাগরিকদের মতপ্রকাশেরই সর্বোচ্চ রূপ। ভোটাধিকার ছাড়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে পারে না। একই সঙ্গে দল বা ব্যক্তি, তত্ত্ব কিংবা আদর্শ যেকোনো নামেই চিন্তাকে দমন, মতপ্রকাশকে বাধাগ্রস্ত, সৃজন-মননকে সংকুচিত, জীবিকার অধিকারকে নাকচ ও ভোটাধিকারকে হরণ করতে চাওয়া হলে তার বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন