কাস্টিং ডিরেক্টরদের কাজের সুযোগ বাড়িয়েছে ওটিটি

‘‌পাতাল লোক’ সিরিজে জয়দীপ আহলাওয়াত ও অভিষেক ব্যানার্জি (বামে) এবং ‘‌স্কুপ’ সিরিজে হারমান বাওয়েজা (ডানে) ছবি: আইএমডিবি

স্ট্রিমিং এসে নানাভাবে বদলে দিয়েছে কনটেন্টকে। এর সঙ্গে তৈরি হয়েছে নতুন অনেক সুযোগ। খেয়াল করলেই দেখা যাবে এমন অভিনেতারা বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন, যাদের ওই চরিত্রে কেউ কখনো ভাবেনি। থিয়েটার, সিনেমা এমনকি টেলিভিশন অভিনেতাদেরও দেয়া হচ্ছে নানা ‘ব্রেক’। এর মধ্যে উদাহরণ হিসেবে সাম্প্রতিক সিরিজ ‘‌স্কুপ’-এর উদাহরণ দেয়া যায়। বহুদিন পর সেখানে দেখা গেল অভিনেতা হারমান বাওয়েজাকে। নায়ক হিসেবে বলিউড তাকে গ্রহণ করেনি। হৃতিকের সঙ্গে চেহারার মিলই ছিল বড় একটি কারণ। এরপর ডিপ্রেশন, ওজন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। এমন একজন ‘‌বাতিল’ অভিনেতা ফিরতে পারেন, এ কথা কেউ ভাবেনি। ভেবেছিলেন হানসল মেহতা। এর আগে তিনি ‘‌স্ক্যাম: ১৯৯২’ সিরিজে কাস্ট করেছিলেন প্রতীক গান্ধীকে। দুটো সিরিজই অভিনেতাদের জন্য হয়েছে মাইলফলক।

ওটিটির গুণে কাজের সুযোগ বেড়েছে ভারতের কাস্টিং ডিরেক্টরদের। এখন তারা মন খুলে কাজ করতে পারেন। আগে কিছু বাধ্যবাধকতা ছিল, যা ওটিটির কল্যাণে কমেছে। কেননা ওটিটি প্রথাগত ধারার বাইরে কাজ করে। গল্প না হলে চরিত্রও আনা যায় না। কাস্টিং ডিরেক্টর অমল আহুজা বলেন, ‘‌চিত্রনাট্যে হাতিরাম চৌধুরী বা কালিন ভাইয়ার মতো চরিত্রদের তৈরি করা হয়েছে বলেই জয়দীপ আহলাওয়াত ও পঙ্কজ ত্রিপাঠিকে কাস্ট করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের জন্য চিত্রনাট্যই ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।’ অমল আহুজার কোম্পানি বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় সিরিজের কাস্টিংয়ে কাজ করেছে। এর মধ্যে পাতাল লোক, মির্জাপুর, বুলবুল ও পঞ্চায়েত অন্যতম।

প্রতিটি কনটেন্টই ভিন্ন ধারার এবং সেখানে পরিচিত অভিনেতাদের দেখা গেছে অপরিচিত চরিত্রে। তারা এমন সব চরিত্রে স্বাচ্ছন্দ্য হবেন, সেটা একসময় ভাবা হতো না। এ নিয়ে অমল বলেন, ‘‌আমাদের এখানে প্রতিভার অভাব কখনো ছিল না। ছিল সুযোগের অভাব। ওটিটি সে সুযোগটি তৈরি করেছে।’ ওটিটি এ সুযোগ তৈরি না করলে হয়তো ববি দেওল নতুন করে ফিরতে পারতেন না। তার ‘‌আশ্রম’ যারা দেখেছেন তারাই জানেন, কতটা ভিন্ন মাত্রার অভিনয় করেছেন ববি। এ সিরিজের কাস্টিং ডিরেক্টর ছিলেন শ্রুতি মহাজন। তিনি বলেন, ‘‌এখন ওটিটির কল্যাণে বহু অভিনেতা ঘরের মানুষে পরিণত হচ্ছেন। একটা শো হয়তো কয়েক মাস চলার পর আরেকজন পরিচালক সেখানে অভিনয় করা একজন অভিনেতাকে নিয়ে নতুন কোনো কনটেন্টের পরিকল্পনা করেন।’

ওটিটির কল্যাণে বাজার বড় হয়েছে। ফলে নতুন করে পরিকল্পনা করা যায়। কাস্টিং ডিরেক্টরদের মূল কাজটি হলো কোন চরিত্রে কে অভিনয় করলে ভালো হবে বা চরিত্রটির জন্য উপযুক্ত অভিনেতাকে খুঁজে বের করা। এর মধ্যে অভিষেক ব্যানার্জি সম্প্রতি বেশ ভালো কাজ দেখিয়েছেন। তিনি কাস্টিং বেনামে প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা। এ প্রতিষ্ঠানের হয়ে ও স্বতন্ত্রভাবে তিনি প্রায় ৯৮টি কনটেন্টে কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। এর মধ্যে মির্জাপুর, ইনসাইড এজ, পঞ্চায়েত, পাতাল লোক ও তাণ্ডব অন্যতম। অভিষেক নিজে অভিনয় করেছেন পাতাল লোক সিরিজে। কাস্টিং নিয়ে তিনি বলেন, ‘‌অভিনয়ে পরিচিত মুখদের মধ্য থেকে একজনকে চরিত্র অনুযায়ী কাস্ট করাই কেবল কাস্টিং ডিরেক্টরদের কাজ নয়। তাদের মূল কাজ একটি চরিত্রের জন্য উপযুক্ত অভিনেতা খুঁজে বের করা, তা যেখান থেকেই হোক না কেন।’

তবে তারা সবাই বলেছেন যে কনটেন্টে বড় তারকা থাকা ব্যবসায়িক দিক থেকে ভালো। কিন্তু কনটেন্টকে শক্তিশালী করতে হলে উপযুক্ত অভিনেতাই প্রয়োজন। আর সেটা এখন করতে পারছেন কাস্টিং ডিরেক্টররা। এটা সম্ভবও করেছে ওটিটি। কেবল ভারতে নয়, বাংলাদেশেও ওটিটির কল্যাণে পরিচিত অভিনেতাদের ভিন্নধর্মী চরিত্রে দেখা গেছে। মোশাররফ করিম তার ক্রমাগত কমিক চরিত্র থেকে বেরিয়ে করেছেন মহানগর, দৌড়। চঞ্চল চৌধুরীকেও (তাকদির, কারাগার, বলি) দেখা গেছে ভিন্ন ধারার চরিত্রে। আফরান নিশোকেও ওটিটি হাজির করেছিল তার নিয়মিত অভিনয়ের বাইরে। বিজরী বরকতউল্লাহ, ইন্তেখাব দিনার, রওনক হাসান এমনকি নাটকের নিয়মিত মুখদের দেখা যাচ্ছে নিরীক্ষা করতে। এর মধ্যে আফজাল হোসেনকে নুহাশ হুমায়ূনের ‘‌ষ’ ও সৈয়দ শাওকীর ‘‌কারাগার’-এ ভিন্ন ধারার চরিত্রে দেখা ছিল বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা। ওটিটির কল্যাণেই সম্ভব হয়েছে এ নিরীক্ষা।

দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অবলম্বনে মাহমুদুর রহমান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন