ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে ইএসজি কমপ্লায়েন্স রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড থাকা জরুরি: ডিসিসিআই সভাপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : ডিসিসিআই

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) আয়োজনে ‘বাংলাদেশে ইএসজি (এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল অ্যান্ড গভর্নেন্স) কমপ্লায়েন্সের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৮ মে) ঢাকা চেম্বার অডিটরিয়ামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান এবং বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) মহাপরিচালক মু. আনোয়ারুল আলম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি সংস্থাগুলোতে ইএসজি রিপোর্টিংয়ের ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ইতিবাচক একটি বিষয়। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ‘এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সোশ্যাল রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (ইএসআরএম)’ বিষয়ক গাইডলাইন প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন লিস্টেড কোম্পানিগুলোর জন্য তাদের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে ‘ইএসজি রিপোর্টিং’-এর অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করেছে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশী বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ইএসজির বিষয়টি অতীব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে থাকে, তাই বিশেষ করে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে আমাদেরকে এর ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ইএসজি বাস্তবায়নে একটি স্ট্যান্ডার্ড ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করতে হবে এবং শিল্পনীতি ও এসএমই নীতিমালায় ইএসজি কমপ্লায়েন্স বিষয়টি অন্তর্ভুক্তিরও প্রস্তাব করেন।       

শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান বলেন, প্রতিটি খাতেই কমপ্লায়েন্স অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে থাকে। তিনি বলেন, পরিবেশগত কিংবা সামাজিক কমপ্লায়েন্স প্রতিপালনে আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। তিনি জানান, ২০১৬-২০২২ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ১৭টি পণ্যের জিআই প্রদান করা হয়েছে, তবে ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৪টি পণ্যের জিআই সনদ প্রদান সম্পন্ন হয়েছে, এমনকি ৩০টি পণ্যের জিআই প্রদানের প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে।     

বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) মহাপরিচালক মু. আনোয়ারুল আলম বলেন, বাংলাদেশে স্মার্ট অর্থনীতির রূপান্তর করতে হলে রফতানি বৃদ্ধি করতে হবে, যার সঙ্গে ইএসজির ওপর আরো অধিক হারে গুরুত্ব দিতে হবে এবং এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। তিনি আমাদের শিল্প-কারখানার ইএসজির রিপোর্টিংয়ের আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃতি অর্জনের লক্ষ্যে দেশের ল্যাবরেটরিগুলোর মান উন্নয়নের ওপর জোরারোপ করেন।   

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনিডোর আবাসিক প্রতিনিধি জাকি উজ জামান। তিনি বলেন, ৯০ এর দশকে বৈশ্বিকভাবে ইএসজির বিষয়টি চালু হয়েছে, যেটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাস্তবায়নের মাধ্যমে কোম্পানির ঝুঁকি হ্রাস ও মুনাফা অনেকাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু এলডিসি উত্তরণের পথে রয়েছে, এমতাবস্থায় ইএসজি বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই, তবে এরই মধ্যে কিছু বাংলাদেশী কোম্পানি ইএসজি কমপ্লায়েন্স রিপোর্টিং বাস্তবায়ন করেছে। ইএসজি বাস্তবায়নে পরিবেশগত তথ্যাদি সংরক্ষণের ওপর তিনি জোরারোপ করেন, যা কিনা এটি বাস্তবায়নে আরো সহজতর হতে পারে। এছাড়াও ইএসজি কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নে দক্ষতা বাড়ানোর ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন, সেই সঙ্গে আর্থিক সহায়তা প্রদানেরও প্রস্তাব করেন।    

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় এসজিএস বাংলাদেশ লিমিটেডের বিজনেস ম্যানেজার ইয়াসমিন আক্তার, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সলিম উল্লাহ, ইকোটেক্স লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ বিন কাসেম এবং যুক্তরাজ্যের লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং অধ্যাপক ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। আলোচকরা ইএসজি কমপ্লায়েন্স বিষয়ক জনসচেতনতা বাড়ানো ও বাস্তবায়নে নীতি সহায়তা প্রদান, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস, স্মার্ট গভর্নেন্স, জিআইএস’র মনিটরিং ও রিপোর্টিং সিস্টেম প্রবর্তন প্রভৃতি বিষয়ের ওপর জোরারোপ করেন। এছাড়া ইএসজি  কমপ্লায়েন্সের জন্য সমন্বিত উদ্যোগের পাশাপাশি আইনের শাসন নিশ্চিতকরণের ওপর জোরারোপ করেন বক্তারা।    

ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলীসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা আলোচনা সভায় যোগ দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন