ক্যাম্পাস ভবনের স্থাপত্যশৈলী

অর্ধশতাব্দী টিকে আছে যে ‘‌প্রজাপতি’

মেহেদী মামুন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল ছবি: কামরুজ্জামান লিংকন

প্রজাপতি, প্রজাপতি কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা? গানটি সবার পরিচিত হলেও প্রজাপতির পাখার মতো দেখতে নান্দনিক একটি আবাসিক হল সবার পরিচিত না-ও হতে পারে। প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে প্রজাপতির পাখার আদলে নির্মিত এ আবাসিক হল রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রখ্যাত স্থপতি সৈয়দ মাজহারুল ইসলামের হাতে করা স্থাপত্যে জাহাঙ্গীরনগরের মতো সবুজের নৈসর্গে লাল ইটের এ আবাসিক ভবনের সঙ্গে মিশে আছে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর আবেগ-অনুভূতি। হলের দাপ্তরিক নাম মীর মশাররফ হোসেন হল হলেও শিক্ষার্থীদের কাছে প্রিয় তাদের এ হল প্রজাপতি হল নামেই অধিক পরিচিত। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, হলটির নির্মাণকাজ ১৯৭৩ সালে শেষ হলেও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উদ্বোধন করা হয় ১৯৭৮ সালের ১৪ এপ্রিল। জাবিতে সম্প্রতি নতুন ছয়টি হল হওয়ার আগ পর্যন্ত এটিই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন আবাসিক হল। তবে আয়তনের দিক থেকে এখন পর্যন্ত এটিই জাবির সবচেয়ে বড় হল। 

স্থাপত্যশৈলীর কারণে নানা সুযোগ-সুবিধা পায় হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি কক্ষেই সমভাবে আলো-বায়ু চলাচল করায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হয় না তাদের। হলের চার কোনায় আবাসিক শিক্ষকদের জন্য চারটি ভবন রয়েছে। যদিও বর্তমানে সেগুলোতে কেউ থাকেন না। চারতলাবিশিষ্ট হল হলেও কোনো ধরনের কংক্রিটের কলাম ছাড়াই পুরো ইটের কলামে ভবনটি টিকে আছে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে। 

হলের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান প্রভোস্টের দায়িত্বে থাকা গণিত বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আলম বলেন, ‘‌এই হলে শিক্ষার্থী হিসেবে ছয় বছরের মতো ছিলাম। এছাড়া শিক্ষক হিসেবে প্রায় ১২ বছর ধরে আছি আবেগ, অনুভূতি ও দায়িত্বের জায়গা থেকে। সবুজ এ নিসর্গে হলের লাল প্রতিটি ইট অনেক শিক্ষার্থীর কাছে দেহের প্রতিটি কোষের মতো বললে অত্যুক্তি হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলে জেনেছি শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় থাকত এই হল, এখনো তাই রয়েছে।’ 

সম্প্রতি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। চিঠিতে সাতদিনের মধ্যে হলটি ভেঙে ফেলার কথা বলা হয়। প্রথমদিকে চিঠির অস্পষ্টতার অভিযোগ তুললেও পরে বিষয়টি আলোচনা করে এ নিয়ে করণীয় ঠিক করতে একটি কমিটি করে সিন্ডিকেট। এ ব্যাপারে  কয়েকজন বিশেষজ্ঞ সদস্য ছাড়াও স্থপতি মাজহারুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের সদস্যদেরও সরেজমিনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা পরিদর্শনের শেষে ভবন ভাঙার প্রয়োজনীয়তা নেই মর্মে মতামত দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম। উপাচার্য বলেন, এ হলের একজন সাবেক শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন প্রাধ্যক্ষ হিসেবে আমার দীর্ঘদিনের স্মৃতি ও আন্তরিকতা রয়েছে এ হলের প্রতি। সবার আবেগ-অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বাস্তবতা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া চলমান। এতে বুয়েটকেও যুক্ত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ সদস্য ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন