ক্যাম্পাস ভবনের স্থাপত্যশৈলী

প্রকৃতি ও আধুনিকতার এক অনন্য মেলবন্ধন

ফিচার প্রতিবেদক

চট্টগ্রামের ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যকে আলিঙ্গন করে এক নিরূপম উদাহরণ হিসেবে গড়ে উঠেছে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস। কংক্রিটে অবগুণ্ঠিত এ শহরে একপশলা শ্যামলিমা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় সাত একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এ ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে গাছগাছালি, সুবৃহৎ মাঠ এবং প্রশান্তিময় আবহের এক রাজত্ব, যেখানে নেই অট্টালিকার কোনো হাঁকডাক। পাণ্ডিত্যলাভের এ শিক্ষারাজ্য পরিপূর্ণতা লাভ করে শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থীর কলকাকলি ও বিচরণের মাধ্যমে।  

পাহাড়ের পাদদেশে নির্মিত ক্যাম্পাসের নির্মাণকৌশলে বিবেচনা করা হয়েছে পরিবেশের বাতাবরণ এবং আধুনিকতার এক অনন্য সংমিশ্রণ, যা একে অন্যের বিরুদ্ধে নয়, বরং একে অন্যকে পরিপূর্ণতা দান করে। ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বার থেকে নেমে যাওয়া ঢালু জমি পার করে পৌঁছতে হয় লাল-প্রাচীরের আবরণে সজ্জিত বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে। ক্যাম্পাসের মূল ভাবনায় পরিবেশ এবং জাতিগত ঐতিহ্যের প্রতি গুরুত্বারোপের পাশাপাশি, শিক্ষাসেবায় অনুসরণ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড। প্রতিটি ক্লাসরুমে যেন সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে পারে, সেই আঙ্গিকে তৈরি করা হয়েছে শ্রেণীকক্ষ। এ প্রয়াসের অন্যতম লক্ষ্য ছিল যাতে একজন শিক্ষক সমরূপে প্রতিটি শিক্ষার্থীর সঙ্গে তার পাঠদানের সুসংযোগ ঘটাতে পারে। ভবনের স্থাপত্য কারুকার্যে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশাধিকারের ওপর বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে যাতে দিনের বেলায় সূর্যের দীপ্যমান আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে এবং অযাচিত বিদ্যুৎ খরচ পরিহার সম্ভব হয়। ক্যাম্পাসের প্রাত্যহিক বৈদ্যুতিক খরচের শতকরা ৪০ ভাগ জোগান দিয়ে থাকে।

সর্বোচ্চ জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে লাইব্রেরির জন্য। রঙিন বর্ণে আচ্ছাদিত দ্বিতল লাইব্রেরির একপাশে রাখা হয়েছে কাচের দেয়াল। লাইব্রেরির এক প্রান্তে রয়েছে ‘‌অক্সফোর্ড কর্নার’, যেখানে বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে তিন ধাপে পাঠানো বইগুলো সযত্নে রাখা হয়েছে। 

রোমান সভ্যতার আদলে ক্যাম্পাসের উত্তর পাশে তৈরি করা হয়েছে এম্ফিথিয়েটার। এছাড়া ক্যাম্পাস ভবনের অভ্যন্তরে বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে ‘ইন্টারেকশন জোন’, যা বিভিন্ন প্রান্তের ক্লাসরুমে পৌঁছানোর জন্য মূল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি ক্লাসের শুরু বা শেষে শিক্ষার্থীরা একে অন্যের সঙ্গে দেখা করতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে দৃঢ় মানবিক সংযুক্তি গঠনে সাহায্য করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা পাঠচর্চার পাশাপাশি জীবনের বিভিন্ন কার্যক্রমকে একীভূত করে, তাই শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ জায়গার চেয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে স্টুডেন্ট স্পেস বেশি রাখা হয়েছে। একাডেমিক ভবনের অন্য প্রান্তে রয়েছে সুবিশাল খেলার মাঠ, যেখানে ব্যবস্থা রয়েছে ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল এবং টেবিল টেনিসের মতো খেলার ব্যবস্থা। 

বাস্কেটবল কোর্টের পাশেই রয়েছে কলোজিয়াম, যেখানে তৈরি করা হয়েছে দেশের অন্যতম বড় স্টেজ। ইটপাথরের আবরণকে পরিহার করে দৃষ্টিনন্দন টেন্সাইল মেমব্রেন স্ট্রাকচারের মাধ্যমে স্টেজের ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে, যার ফলে প্রায় ১১০ ফুট চওড়া স্টেজ এবং সিটিং এরিনাতে আলো সঠিকভাবে প্রবেশ করতে পারে। মঞ্চকে সাজানো হয়েছে দুটি ধাপে, যাতে পেছনের সারিতে বসা দর্শক ও স্টেজের সব কার্যক্রম নির্বিঘ্নে উপভোগ করতে পারে। এছাড়া কলোজিয়ামের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে কৃত্রিম ঝরনা। প্রকৃতির নিজস্ব ধারাকে ব্যাহত না করে কীভাবে একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপহার দেয়া যায়, তা ইডিউসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখিয়েছে এ অনন্য কীর্তি সম্পন্নের মাধ্যমে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন