গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা

অডিও-ভিজুয়াল কনটেন্ট তৈরিতে সক্ষম গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদা বাড়ছে

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা অঙ্গনে বাড়ছে পেশার বৈচিত্র্য ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উৎকর্ষের ফলে দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে মানবীয় যোগাযোগের ধরন, গতি ও প্রকৃতি। দশকে দশকে বৈচিত্র্যময় প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে অভাবনীয়ভাবে। মুদ্রণমাধ্যম থেকে সম্প্রচার ও ইন্টারনেটভিত্তিক অনলাইন যোগাযোগের দ্রুত রূপ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অভ্যস্ত হতে বেগ পেতে হচ্ছে। মিডিয়া একীভূতকরণের কারণে বর্তমানে প্রিন্ট ও সম্প্রচারমাধ্যমের পার্থক্য ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। সাংবাদিকদের এখন সদা প্রস্তুত থাকতে হয় মুদ্রণমাধ্যমে অর্থাৎ সংবাদপত্রের খবরের পাশাপাশি অডিও ও ভিডিও কিংবা অডিও-ভিজুয়াল আধেয় উপস্থাপন করার জন্য।

সংবাদমাধ্যমের চিরায়ত এ রূপের পরিবর্তন হলেও তা সৃষ্টি করেছে অপার সুযোগ। দিন দিন বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে এ পেশা। সংবাদপত্র আগে যেখানে শুধু ছাপা কাগজ বের করার জন্য অল্পসংখ্যক সাংবাদিক ও কর্মী দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করত, তাদের এখন অনলাইন সংস্করণে পারদর্শী, অডিও ও ভিডিও কিংবা অডিও-ভিজুয়াল সংবাদ কাভারেজে ও আধেয় তৈরিতে দক্ষ জনবলও দরকার। পশ্চিমা সংজ্ঞানুযায়ী ‘‌অপরাধ, অর্থ ও যৌনতা’ই যে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ তৈরি করে সে ধারণা পাল্টে যাচ্ছে। নির্বাচন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, আইন ও অপরাধ, ব্যবসা-বাণিজ্য-অর্থনীতি, প্রযুক্তি, জেন্ডার, কৃষি, উন্নয়ন, সংস্কৃতি, মানবাধিকার, জনস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, খেলাধুলা, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিসহ নানা বিষয়ে বিশেষায়িত প্রতিবেদন কাভার করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান ও রিপোর্টিংয়ের কলাকৌশল সস্পর্কে ভালো ধারণাসম্পন্ন জনবল অতীব প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। এসব বিষয়ে সাংবাদিকতা করে অনেকেই এরই মধ্যে তারকা খ্যাতিও পেয়েছেন। দেশের মিডিয়া এখন অনেক ব্যাপক ও সর্বগামী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বর্তমান এ সময়ে প্রায় প্রতিটি সংবাদপত্র, রেডিও ও টেলিভিশনেই নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। দরকার হচ্ছে দক্ষ বাড়তি লোকবলের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটরিং, ফ্যাক্ট চেক এবং মূলধারার সংবাদমাধ্যমের সংবাদকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দ্বারা ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো এখন মহাযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। দরকার হচ্ছে এ সম্পর্কে অগাধ জ্ঞানসম্পন্ন জনবলের।  

বিভিন্ন মার্কেটিং ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে, সরকারি, বেসরকারি ও অলাভজনক সংস্থাগুলোয়ও দিন দিন বাড়ছে সাংবাদিকতা ও যোগাযোগ বিষয়ে গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদা। জনসংযোগ, লিয়াজোঁ, অ্যাডভোকেসি, প্রশিক্ষণ, নেটওয়ার্কিং, বিজ্ঞাপনকলা, সৃজনশীল লেখা, কাউন্সিলিং, উন্নয়ন যোগাযোগ, গবেষণা ও কৌশল প্রণয়ন, আচরণ পরিবর্তন যোগাযোগ—এসব ক্ষেত্র নিয়োগে সাংবাদিকতা ও যোগাযোগ বিষয়ের গ্র্যাজুয়েটরা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন। অনলাইন মিডিয়া ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মের ব্যাপক চাহিদা মেটানোর জন্য অডিও-ভিজুয়াল কনটেন্ট তৈরিতে সক্ষম এমন গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদা বাড়ছে ব্যাপকভাবে। বিশেষ করে যারা নিজেরাই আইডিয়া জেনারেট করতে পারে এবং সে আইডিয়াকে অডিও-ভিজুয়াল ফ্রেমে গল্পাকারে প্রকাশ করতে পারে এমন দক্ষতাসম্পন্ন জনবলের অনেক প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। ভিডিও প্রডাকশন সম্পর্কে যাদের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান রয়েছে, ফটোগ্রাফিতে মুনশিয়ানা রয়েছে তাদের চাহিদাও ব্যাপক। 

সৃজনশীল লেখক, কলামিস্ট, গল্পকার, শিল্পী, পারফরমার, জনসংযোগ কর্মকর্তা, বিপণন পরামর্শক, ডিজিটাল মার্কেটিংসহ নানা ধরনের কনসালট্যান্সির কাজ করছেন। বিসিএসসহ নানা ধরনের সরকারি চাকরির পাশাপাশি এসব আধুনিক পরিবর্তিত পেশায় যেতে হলে প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক পঠন-পাঠনের সঙ্গে নিজেদের যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরি। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো ধারণার পাশাপাশি প্রয়োজন উপস্থাপনার দক্ষতা ও সফট স্কিল সম্পর্কে জ্ঞান। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় যোগাযোগের সাবলীল সক্ষমতা প্রয়োজন। 

আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যুগের চাহিদা ও ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে একেক ধরনের সুবিধা ও বৈশিষ্ট্য। সেজন্য শিক্ষার্থীদের উচিত যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তির সময় শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করা, বিভাগটি পরিদর্শন করে ব্যবহারিক সুবিধা সম্পর্কে জেনে নেয়া। তাদের লক্ষ্য শেয়ার করা এবং সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নিজস্ব লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা মূল্যায়ন করা। 

ড. শেখ শফিউল ইসলাম

বিভাগীয় প্রধান, মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন