‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’-এ বদিউল আলম মজুমদারের ত্রিশ বছর পূর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের সর্ববৃহত আন্তর্জাতিক সেচ্ছাব্রতী সংগঠন ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট। সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ১৯৯১ সালে এ সংগঠন পথ চলা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে সংগঠনটির কান্ট্রি ডিরেক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. বদিউল আলম মজুমদার। ক্ষুধামুক্ত ও আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ার উদ্দেশে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন সংগঠনটির গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট  ড. বদিউল আলম মজুমদার।

হাঙ্গার প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়া নিয়ে বদিউল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী থাকাকালীন সময় থেকেই রাষ্ট্র নিয়ে ভেবেছি। রাজনৈতিক সচেতনতাবোধ থেকে সে সময় শিক্ষা আন্দোলন, ছয়দফাসহ চলমান আন্দোলনগুলোয় অংশ নিয়েছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও চেয়েছি দেশের জন্য কাজ করে যেতে। দেশের জন্য কিছু করার লক্ষ্য থেকেই হাঙ্গার প্রজেক্টের সঙ্গে কাজ শুরু করি।

দি হাঙ্গার প্রজেক্ট একটি সামাজিক আন্দোলন। এই আন্দোলনের মূল বিষয় হলো- জন্মগতভাবে প্রাপ্ত অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে দারিদ্রমুক্ত এবং আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলা। সে উদ্দেশে সমাজের প্রতিটি মানুষকে উজ্জীবিত ও সংগঠিত করার লক্ষ্যে কাজ করে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট।

ড. বদিউল আলম মজুমদারের হাতে অনেকদূর এগিয়ে গেছে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট। বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগের নিয়েছেন।  তার নেয়া নানা প্রচেষ্টার বিষয়ে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, হাঙ্গার প্রজেক্ট কোনো দাতব্য সংস্থা নয়। এটি একটি ব্যক্তিক্রমী  স্বেচ্ছাশ্রমভিত্তিক সংগঠন। যার মূল বিষয়- মানুষ সমস্যা নয়, সমাধান। মানুষকে অফুরন্ত সৃজনশীলতা ও কর্মক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা তাদের উদ্যোগী ও আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলায় গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের সংগঠন মনে করে তাদের সংগঠিত করতে পারলে তারা একক এবং সংগঠিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিভিন্নরকম সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলে সাবলম্বী হতে পারবে। পাশাপাশি অন্যদেরকেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে সহযোগিতা করবে। তারাই বাংলাদেশের ক্ষুধা ও দারিদ্র দূরীকরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সংগঠনটির বর্তমান অবস্থা অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রায় আড়াই লক্ষ্যের মতো তরুণ, রাজনীতিবিদ, নারী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ সমাজের নানা স্তরের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। জনপ্রতিনিধি ও আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা  মিলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অবদান রেখেছে। তারা আত্মনির্ভরশীল হয়েছে। নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক সম্প্রতি অর্জনের জন্য আমরা প্রায় সব উপজেলায় কাজ করছি। কন্যাশিশুদের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে। তারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে এবং তাদের চারপাশের মানুষদের অবস্থা ও অবস্থানের পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে।

দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে হাঙ্গার প্রজেক্টের সঙ্গে কাজ করার অনুভূতি প্রকাশে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং আমার সহকর্মীরা মিলে অগণিত মানুষের জীবন স্পর্শ করেছি। অনেকের ভাগ্য পরিবর্তনের অংশীদার হতে পেরেছি। এই অংশীদারিত্ব থেকেই ভালো লাগা কাজ করে। তবে এখানে আমার একার কোনো অবদান নেই। হাঙ্গার প্রজেক্টের কাজগুলোর সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে স্বেচ্ছাসেবীরা। তাদের ত্যাগের ফলস্বরূপ আজকের হাঙ্গার প্রজেক্ট এই জায়গায় এসেছে। আমি এবং আমার সহযোগীরা সবসময়ই এটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করছি।

ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশের অর্জনের জন্য প্রয়োজন সুশাসন। যার সূত্র ধরেই ড. বদিউল আলম মজুমদার প্রতিষ্ঠা করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। গণতান্ত্রিক পরিবেশের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি।

হাঙ্গার প্রজেক্টের নির্বাহী পরিচালক ও সহ-সভাপতি  ড. জন কনরুড বণিক বার্তাকে বলেন, বদিউল আলম মজুমদার হাঙ্গার প্রজেক্টের একজন সফল ও সৃজনশীল লিডার। লক্ষাধিক স্বেচ্ছাসেবীদের তিনি ক্ষমতায়িত করেছেন। একইসঙ্গে বাংলাদেশের অসংখ্য নারী নেতৃত্বকে একত্রিত করতে সহযোগিতা  করেছে। এছাড়া তার নেয়া কিছু উদ্যোগ আমেরিকা ও আফ্রিকাসহ বিশ্বের আরো কিছু দেশে বাস্তবায়ন করেছে। এমন একজন দক্ষ মানুষকে হাঙ্গার প্রজেক্টে পেয়ে আমরা গর্বিত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন