তানভীর আহমেদ , চেয়ারম্যান,
শেলটেক (প্রা.) লিমিটেড
চার দশকের
বেশি সময়
ধরে বাংলাদেশে
কাজ করছে
আবাসন খাত।
কেবল হাউজিং
ব্যবস্থাকেই শাক্তিশালী
করে তোলেনি,
টেকসই পরিকল্পনার
মধ্য দিয়ে
আরো নান্দনিক
করে তোলেছে
প্রধান শহরগুলো।
প্রথম দিকে
মাত্র কয়েকটি
ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান
ছিল দেশে।
কিন্তু বর্তমানে
রিয়েল এস্টেট
অ্যান্ড হাউজিং
অ্যাসোসিয়েশন অব
বাংলাদেশ বা
রিহ্যাবের সদস্য
সংখ্যা প্রায়
৮৫০। দেশের
জিডিপিতে এ
খাতের অবদান
৮ শতাংশ।
পাশাপাশি ২৬৯টি
সহযোগী শিল্পকে
বিবেচনায় নিলে
অবদান দাঁড়ায়
১২-১৪
শতাংশতে। খাতটির
সঙ্গে সরাসরি
জড়িত প্রায়
৩৫ লাখ
মানুষ। তাদের
মধ্যে ৭
লাখ দক্ষ
ও ২৮
লাখ অদক্ষ।
প্রতি বছর
৫০০ কোটি
টাকা প্রত্যক্ষ
ও অপ্রত্যক্ষ
উপায়ে সরকারি
তহবিলে জমা
হয় এ
খাত থেকে।
যুক্ত হয়
ভ্যাট, ইনকাম
ট্যাক্স, রেজিস্ট্রেশন
ফি, পরিষেবা
ইত্যাদি হিসেবে।
আবাসন খাতের
উন্নয়নের কারণেই
কক্সবাজার, কুয়াকাটা
ও দেশের
অন্যান্য পর্যটন
স্থানগুলোতে শক্তিশালী
হচ্ছে পর্যটন
শিল্প।
কভিড-১৯
মহামারির পর
পুনরুদ্ধার হতে
শুরু করেছে
বাংলাদেশের অর্থনীতি।
গতি ফিরে
পাচ্ছিল আবাসন
খাত। দীর্ঘ
আরোপিত লকডাউনের
পর ফিরতে
শুরু করেছেন
বিনিয়োগকারীরা। বিপত্তি
ঘটে ২০২২
সালের ফেব্রুয়ারিতে
রাশিয়া-ইউক্রেন
যুদ্ধের ঘটনা।
এর ফলে
বাধাগ্রস্ত হয়ে
পড়ে বৈশ্বিক
সরবরাহ চেইন।
দাম বাড়তে
থাকে, মন্থর
হয়ে যায়
অর্থনৈতিক কার্যক্রম।
বৈশ্বিক ভাবে
সংকটগুলো তো
আছেই। বাংলাদেশের
আবাসন খাতে
বিদেশী মুদ্রার
মজুদ সংকট,
ডলার ঘাটতি,
ডলারের উচ্চ
বিনিময় মূল্য,
মূল্যস্ফীতি ও
নির্মাণ খরচ
বৃদ্ধির মতো
সীমাবদ্ধতার মোকাবিলা
করতে হচ্ছে।
এর মধ্যে
আবার পরিকল্পিত
উপায়ে নগর
উন্নয়ন কার্যক্রম
পরিচালনার লক্ষ্যমাত্রা
নিয়ে প্রণীত
হয়েছে ডিটেইলড
এরিয়া প্ল্যান
(২০২২-৩৫)।
ফলে আবাসন
খাতে ব্যাপক
পরিবর্তন এসেছে
সম্প্রতি। আবাসন
খাত বেশ
কিছু প্রতিবন্ধকতার
মধ্য দিয়ে
যাচ্ছে কয়েকটি
কারণে। সেখানে
নির্মাণ সামগ্রীর
দাম বেড়ে
যাওয়ায় সমস্যাটা
আরো ঘনীভূত
হয়েছে। নির্মাণ
সামগ্রীর এ
নিরবিচ্ছিন্ন দাম
বৃদ্ধির ঘটনা
একদিকে বাড়িয়ে
দিয়েছে নির্মাণ
খরচ, অন্যদিকে
কমিয়ে দিচ্ছে
ক্রেতাদের অ্যাপার্টমেন্ট
কেনার আগ্রহ।
পরিস্থিতি এভাবে
চলতে থাকলে
খাতটি ধসে
পড়বে। আমরা
সরকারের পক্ষ
থেকে কার্যকর
পদক্ষেপ কামনা
করছি। কাঁচামাল
আমদানির উপর
কর রেয়াত
দেয়া জরুরি,
যাতে করে
নির্মাণ খাতে
ব্যয় নিয়ন্ত্রণে
থাকে। বিকাশ
লাভ করতে
পারে আবাসন
খাত। তাছাড়া
সুবিধাটি যদি
বিনিয়োগকারীদের দেয়া
হয়, আবাসন
খাতের সংকট
মোকাবেলা করা
অনেকটাই সম্ভব
হবে।
সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিকভাবে
মূলধারার বাইরে
থাকা টাকাগুলোকে
মূলধারার ভেতরে
নিয়ে আসতে
হবে। নাহলে
দেখা দিতে
পারে তারল্য
সংকট। সামগ্রিক
ভাবে বিঘ্নিত
হতে পারে
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি।
বিপুল পরিমাণ
অপ্রদর্শিত অর্থ
বিনিয়োগ করা
হয়েছে গত
অর্থবছরে। দেশের
আবাসন শিল্পে
গতি আনতে
হলে একে
চালু রাখতে
হবে।
বর্তমানে হোম
লোনের সুদের
হার ৯-১০
শতাংশ, যা
অন্যান্য দেশের
তুলনায় অনেক
বেশি। ভারতে
হোম লোনে
সুদের হার
৮-৯
শতাংশ, মালয়েশিয়ায়
৩-৪
শতাংশ, ইউএসএতে
৭ শতাংশ,
ইউকেতে ৫
শতাংশের কম।
আবাসন খাতে
বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত
করার জন্য
হোম লোনে
সুদের হার
৫ শতাংশে
নামিয়ে আনা
উচিত। উপযুক্ত
অর্থনৈতিক পরিবেশ
তৈরি না
করে বর্তমান
বাজারে অ্যাপার্টমেন্ট
কেনাটা কঠিন।
দ্বিতীয়ত এখানে
রেজিস্ট্রেশন ফি
১০ দশমিক
৫ শতাংশ
থেকে ১২
দশমিক ৫
শতাংশ পর্যন্ত।
অথচ প্রতিবেশী
দেশগুলোতে দেখা
যায় রেজিস্ট্রেশন
খরচ ৪-৬
শতাংশের মধ্যে।
স্পষ্টতই তুলনামূলক
ভাবে আমাদের
দেশে অনেক
বেশি। এখানে
রেজিস্ট্রেশন ফি
অন্তত ৭
শতাংশে নামিয়ে
আনা দরকার।
তৃতীয়ত আবাসন
খাতের বিকাশের
জন্য উদ্যোক্তাদের
আয়কর কমিয়ে
দেয়া উচিত।
বর্তমানে ট্যাক্স
দিতে হয়
৩০ শতাংশ,
যা অনেক
দিক থেকেই
বেশি। উন্নত
দেশগুলো কিংবা
আমাদের প্রতিবেশী
দেশগুলোতেই উদ্যোক্তাদের
আয়কর ২০
শতাংশ। আমরা
আশা করি,
আবাসন খাতের
উদোক্তাদের জন্য
আয় কর
২০ শতাংশে
নামিয়ে আনা
হবে।
আরেকটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে আবাসন খাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অথচ বিদ্যমান সমস্যা থেকে উত্তরণ সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের জন্যই কঠিন। ফলে পিপিপি গড়ে তোলা একটা ভালো সমাধান হতে পারে। বড় পরিসরে পিপিপির প্রকল্প কেন্দ্রীভূত পদক্ষেপের মাধ্যমে নগরের সমস্যা কমিয়ে আনতে পারে। এক্ষেত্রে সরকার জমি দিতে পারে, বেসরকারি খাত সেখানে চালিয়ে যাবে বাকি কাজগুলো। সার্বিকভাবে বাজেটকে হতে হবে বিনিয়োগ বান্ধব। উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা যেন আবাসন খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়।