শিশু হাসপাতাল জুনে চালুর আশা

রাজশাহীতেই মিলবে উন্নত চিকিৎসাসেবা

ফেরদৌস সিদ্দিকী, রাজশাহী

নগরীর বহরমপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে বিশেষায়িত এ হাসপাতাল। কেবল ভবন নির্মাণেই ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৩ কোটি টাকা। ২ কোটি টাকা ব্যয়ে জেনারেটর ও সাবস্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রক, সোলার প্যানেল ও অগ্নিনির্বাপণসামগ্রী বসানো হয়েছে আরো দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে। ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের লাখ লাখ শিশুর উন্নত চিকিৎসাসেবার লক্ষ্য নিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে রাজশাহী শিশু হাসপাতাল। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ২০০ শয্যার হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শেষ হবে আগামী মে মাসের মধ্যে। এরপর জুনেই চালুর আশা কর্তৃপক্ষের। পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালটি চালু হলে পুরো অঞ্চলের শিশু চিকিৎসায় গতি আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৯ জানুয়ারি রাজশাহী সফরে এসে আরো ২৪ প্রকল্পের সঙ্গে রাজশাহী শিশু হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটিরও উদ্বোধন করেন। ওই সময় অবশ্য সীমানাপ্রচীর ও ভেতরের রাস্তাসহ কিছু কাজ বাকি ছিল। সেগুলো এখন জোরেশোরেই চলছে।  

নগরীর বহরমপুর এলাকার ২ দশমিক ৪৪ একর জায়গায় গড়ে উঠেছে বিশেষায়িত এ হাসপাতাল। সরজমিনে দেখা গেছে, ১০ তলা ভিতবিশিষ্ট চার তলা ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ। এখন বাকি রঙের কাজ। সীমানাপ্রাচীরের কিছু অংশ এখনো বাকি। সিটি করপোরেশনের পুকুর সংস্কারকাজ চলমান থাকায় সেটি মূলত আটকে আছে। একই কারণে আটকে আছে রাস্তাটির নির্মাণকাজও। 

রাজশাহী গণপূর্ত দপ্তরের তথ্যমতে, হাসপাতালটির প্রথম তলার আয়তন ১৯ হাজার বর্গফুট। এতে থাকছে ১৪ শয্যার জেনারেল অবজারভেশন ইউনিট। এছাড়া এক্স-রের জন্য দুটি এবং সিটি স্ক্যান ও এমআরআইয়ের জন্য একটি করে কক্ষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্টোর হিসেবে থাকছে আটটি কক্ষ। প্রথম তলায় থাকছে পার্কিং ব্যবস্থাও, যেখানে একসঙ্গে ২০টি গাড়ি রাখা যাবে। 

দ্বিতীয় তলার আয়তন ২০ হাজার ২২৫ বর্গফুট। সেখানে ১৮টি কক্ষ রাখা হয়েছে আউটডোর চিকিৎসকদের জন্য। আরো থাকছে ক্যান্টিন, ল্যাব ও অফিস ব্লক। ২৩ হাজার ৭০৫ বর্গফুট আয়তনের তৃতীয় তলায় থাকছে একটি মাইনর অপারেশন থিয়েটার (ওটি)। বিশেষায়িত ওটি থাকছে আরো চারটি। এছাড়া ১০ শয্যার প্রি ও পোস্ট ওটিও থাকছে দ্বিতীয় তলায়। পাশাপাশি ৫৬ শয্যার আইসিউই ইউনিটও রাখা হচ্ছে। তৃতীয় তলার সমান আয়তনের চতুর্থ তলায় থাকছে ৯৬ শয্যার সাধারণ ওয়ার্ড এবং ১৮ শয্যার পেয়িং শয্যা।

জানা যায়, কেবল হাসপাতাল ভবন নির্মাণেই ব্যয় হয়ে প্রায় ২৩ কোটি টাকা। এছাড়া ২ কোটি টাকা ব্যয়ে জেনারেটর ও সাবস্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। শীতাপত নিয়ন্ত্রক, সোলার প্যানেল এবং অগ্নিনির্বাপণ সামগ্রী বসানো হয়েছে আরো দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে। এছাড়া সাবস্টেশন এবং আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার নির্মাণ হয়েছে ১ কোটি টাকায়। ২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে দুটি লিফট বসাতেই। হাসপাতালজুড়ে অক্সিজেন সরবরাহ লাইন বসাতে ব্যয় হয়েছে আরো ২ কোটি টাকা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালের মে মাসে হাসপাতাল ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হোসেন এন্টারপ্রাইজ। শুরুতে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১৩ কোটি টাকা। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের জুন মাসে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তা শেষ না হওয়ায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফায় আবারো মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন সময় দেয়া হয়। তৃতীয় ধাপে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। তাতেও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দফায় দফায় সময় বাড়ায় নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।

সময় বেশি লাগার কারণ হিসেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, হাসপাতালটির জন্য নির্ধারিত স্থানে পুরোনা ভবন ছিল। সেগুলো অপসারণেই দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায়। নির্মাণকাজ শুরুর পর দেখা দেয় নকশা জটিলতা। শুরুতে ১০ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও পরে তা চারতলায় নেমে আসে। ভবনটি ছিল ১৬ হাজার বর্গফুট। এটি পরিবর্তন করে হয়ে যায় প্রায় ২৭ হাজার বর্গফুট। এসব কারণেই নির্মাণকাজ শেষ করতে বাড়তি সময় লেগে যায়।

হাসপাতালটির নির্মাণকাজ তদারক করছে রাজশাহী গণপূর্ত জোন-২। সংস্থাটির উপসহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম শুরু থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সেখানে পুরনো ভবন ভাঙতে কিছুটা দেরি হওয়ায় সময়মতো আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সাইট বুঝিয়ে দিতে পারিনি। মাঝে নকশা জটিলতা দেখা দেয়। ফলে কাজ সময়মতো শেষ করা যায়নি। এখন কেবল সীমানাপ্রাচীর এবং সামনের রাস্তা নির্মাণ বাকি আছে। সেগুলো শেষ করতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। আশা করছি দ্রুতই শেষ হবে।’

রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘শিশু হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ। এখন টুকিটাকি কাজ বাকি। সেগুলো শেষ করতে আর মাস দুয়েক সময় লাগবে। আশা করা যাচ্ছে, মে মাসেই হাসপাতালটি কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন