আইইএলটিএস

ভালো স্কোর করার কলাকৌশল

আইইএলটিএসে ভালো স্কোর করার জন্য শুরু থেকেই আমি কিছু কৌশল অবলম্বন করেছিলাম, যা আমাকে লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করেছে। যাত্রা সহজ ছিল না, তবে অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম এবং নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস সে পথটা সহজ করে দিয়েছে। মনে রাখবেন, দৃঢ় সংকল্প আর সঠিক কৌশল গ্রহণ করতে পারলে সবকিছুই সম্ভব। আমি যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করার জন্য আবেদন করেছিলাম এবং ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তির অফার পাই। সবশেষ আমার পছন্দের ওহিও ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই। 

এ লেখাটিতে মূলত ভালো স্কোর করার জন্য আমার পড়াশোনার আলোকে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি মাত্র। ইংরেজিতে যাদের নিয়মিত কথা বলার অভ্যাস নেই, স্পিকিং মডিউলটি তাদের কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে। এ চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে আমি কিছু টেকনিক অনুসরণ করেছি। মাক্কার আইইএলটিএস স্পিকিং বই থেকে নিয়মিত অনুশীলন করেছি। বইটিতে অনেক বিষয়বস্তুর ওপর নমুনা প্রশ্ন এবং নমুনা উত্তর রয়েছে। সবচেয়ে ভালো হয় এসব প্রশ্নের উত্তর নিজের মতো করে অনুশীলন করা। নিয়মিত বন্ধুদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার এবং জুমের মাধ্যমে ইংরেজিতে কথা বলেছি। নির্দিষ্ট বিষয় নির্ধারণ করে প্রতিদিন বন্ধুদের সঙ্গে প্র্যাকটিস করার বিকল্প নেই। এছাড়া সাহায্য নিয়েছি কিথ স্পিকিং সাকসেস ইউটিউব চ্যানেলের। এটি আমার উচ্চারণ, ব্যাকরণ এবং সামগ্রিক কথা বলার দক্ষতা উন্নয়নে অনেকটা কাজে দিয়েছে। 

লিসেনিং ও রিডিং মডিউলে ভালো করতে হলে যে ভুলগুলো বেশি হয় নিয়মিত সেগুলোর বিশ্লেষণ এবং ধারাবাহিক অনুশীলন করেত হবে। কেমব্রিজ ৯-১৬ বইগুলো থেকে অনুশীলন, পরীক্ষা এবং প্রশ্নগুলোর প্যাটার্ন বোঝার চেষ্টা করেছি।  প্রতিদিন একটি সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করতে হবে এবং কোথায় ভুল করেছি তা বোঝার জন্য উত্তরগুলো পুনরায় যাচাই করে সংশোধন করতে হবে। প্রতিটি পরীক্ষার পর ভুলগুলো পর্যালোচনা করে যে অংশে বেশি ভুল হয় তা খুঁজে বের করে অনুশীলন করতে হবে। আপনি যদি এটি নিয়মিত করতে পারেন তাহলে পরীক্ষার ফর্মেট সহজেই বুঝেত পারবেন। যেটি আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে এবং  নির্ভুল উত্তর করতে সহায়তা করবে। 

রাইটিং মডিউলের জন্য প্রতিদিন কিছু না কিছু লেখার অভ্যাস করুন। আপনি যে বিষয়ে আগ্রহী সে বিষয় নিয়েই লিখুন। দৈনিক অন্তত ২৫০ শব্দের একটি আর্টিকেল লেখার চেষ্টা করুন। তবে প্রতিদিন যদি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে লিখতে পারেন তাহলে আপনার বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়বে। শব্দভাণ্ডারও সমৃদ্ধ হবে। আমি IELTS Liz, Banglay IELTS, English Speaking Success ইউটিউব চ্যানেল অনুসরণ করতাম। এটি আমাকে বিভিন্ন ধরনের কৌশল রপ্ত করেত সাহায্য করেছে। আমি বিভিন্ন প্রবন্ধের ধরন বিশ্লেষণ এবং টেমপ্লেট ব্যবহার করে প্রবন্ধ লেখার চর্চা করে আমার নিজস্ব একটি ধরন তৈরি করেছিলাম। আপনিও আপনার নিজস্ব একটি লেখার ধরন তৈরি করুন। 

মো. আল আমিন

শিক্ষার্থী, ওহিও ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র।


লিসেনিং ভালো করার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় পডকাস্ট শোনা। পডকাস্টে একটি বিষয় বেশ অনেকক্ষণ ধরে কথা বলা হয়। এতে একটি বিষয়ে যেমন জানা যায়, তেমনি ওই বিষয়ের যত টেকনিক্যাল টার্ম আছে সেইগুলার সঙ্গেও পরিচিত হওয়া যায়। লিসেনিং অংশে বিভিন্ন দেশের একসেন্ট বা উচ্চারণ থাকতে পারে। তাই আমেরিকান, ব্রিটিশ, অস্ট্রেলিয়ান সব ধরনের একসেন্ট শোনার অভিজ্ঞতা থাকা ভালো। পডকাস্ট শোনার পাশাপাশি মুভি দেখা কিংবা গান শোনার বিকল্প নেই। লিসেনিংয়ে ম্যাপের কিছু প্রশ্ন থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে শুরুতেই ম্যাপের দিকগুলো অ্যারো চিহ্নের মাধ্যমে ঠিক করে নিতে হবে। এবার আসি স্পিকিং অংশে। শুরুতেই মাথায় রাখা উচিত এটি অন্য ভাষা, মাতৃভাষা নয়। তাই সাবলীল হতে সময় লাগবে। ইংরেজিতে কথা বলতে অভ্যস্ত হতে হবে। আমরা যেন যা বলতে চাচ্ছি, সেটি ইংরেজিতে বোঝাতে পারি। একবার সাবলীল হয়ে গেলে আমাদের শব্দচয়ন, ব্যাকরণ এবং ভাষাগত মাধুর্যের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলা, বিবিসি শোনা বা কারো সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলা সবচেয়ে উপকারী। কথা বলার সময় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আমরা যাতে প্রাসঙ্গিক শব্দভাণ্ডার ব্যবহার করি। যৌগিক ও জটিল বাক্য ব্যবহার করি। এতে ব্যাকরণগত দক্ষতা প্রকাশ পাবে। দু-একটি Phrase & Idiom ব্যবহার করতে হবে যাতে ইংরেজিতে কেউ কমফোর্টেবল এটা বোঝা যায়। আর সর্বশেষ গ্রামারটা লক্ষ্য রাখতে হবে। রিডিং অংশ মূলত নির্ভর করে একজন কতটা ফাস্ট রিডার এবং প্রশ্ন বিশ্লেষণ করতে পারে তার ওপর। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ যত বেশি পারা যায় ইংলিশ নিউজ পেপার পড়া। নিউইয়র্কার, নিউ ইয়র্ক টাইমস এগুলো বেশ উপকারী। তাছাড়া ইংরেজিতে গল্পের বইও বেশ ভালো সহায়ক এক্ষেত্রে। একবার প্রশ্নের ধরনের দিকে চোখ বুলিয়ে, পুরো প্যাসেজ স্কিম থ্রু করে নিলে বেশ সুবিধা পাওয়া যাবে। তাছাড়া প্রথম প্যাসেজটি তুলনামূলক সহজ হয় অন্য প্যাসেজগুলোর চেয়ে। তাই প্রথম প্যাসেজের ক্ষেত্রে আরো একটা বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে যে এ প্যাসেজের সব প্রশ্ন যাতে সঠিক হয় এবং একই সঙ্গে যত কম সময়ে উত্তর দেয়া যায়। কারণ পরের প্যাসেজগুলোয় ক্রিটিকাল থিংকিং দরকার হবে। এখান থেকে সময় বাঁচিয়ে যাতে পরের প্যাসেজগুলোয় ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া প্রতিটি প্যাসেজ পড়ার সময় প্রতিটা প্যারাগ্রাফের কি ওয়ার্ডগুলা মার্ক করে ফেলা এবং প্রতিটি প্যারাগ্রাফের মূল কথা এ দুই বাক্যে লিখে ফেলা। এতে করে প্রশ্ন দেখে যাতে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় সেটি কোন প্যারাগ্রাফে আছে। আর রাইটিংয়ের ক্ষেত্রেও ওপরের সব বিষয় প্রযোজ্য। তবে বারবার বিভিন্ন বিষয়ে লিখতে হবে এবং রিভিউ করতে হবে কোথায় কোথায় ভুল হচ্ছে। সর্বোপরি একটি গ্রামার বই, ভোকাবুলারি বই এবং আইইএলটিএসের প্রশ্নগুলো অনুশীলন করলে যে কারো পক্ষেই ভালো করা সম্ভব।

ইসরাত জাহান তমা
পিএইচডি গবেষক, লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন